ব্যবসায়ীরা মাত্র এক মাসের ব্যবধানে আবারও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন। তবে সরকার তাতে সায় দিচ্ছে না। দাম বাড়ার কারণে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে- এই আশঙ্কা থেকে ধীরে চলার নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। সরকার মনে করছে, এমনিতেই চালসহ নিত্যপণ্য বাবদ বাড়তি খরচে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। ইতিমধ্যে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১৩ শতাংশ ছুঁয়েছে। আর সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০.৮৯ শতাংশ। এই অবস্থায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়ালে মানুষের জীবনযাত্রার ওপর আরও চাপ বাড়বে।
গত ৯ ডিসেম্বর লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর পর ৬ জানুয়ারি ফের ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর জন্য বাণিজ্যসচিবের কাছে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম মোল্লা। চিঠিতে গত ১০ জানুয়ারির মধ্যে পুনরায় মূল্য সমন্বয়ের জন্য বলা হয়। কিন্তু সরকার ব্যবসায়ীদের অনুরোধে এখনো সাড়া দেয়নি। জানা গেছে, বাজারে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট এখনো রয়ে গেছে। দুই, তিন ও পাঁচ লিটারের তেল সরবরাহ কিছুটা থাকলেও এক লিটারের তেলের এখনো সংকট। পাশাপাশি সরকারনির্ধারিত মূল্যে মিলছে না তেল। এতে ক্রেতাদের পণ্যটি কিনতে এখনো ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এর মধ্যে টিসিবির তেল-ডাল বিক্রি বন্ধ রয়েছে। এতে সংকট আরও বেড়েছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংকট কাজে লাগিয়ে সরকারিভাবে ভোজ্যতেলের দাম আরও বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে কোম্পানিগুলো। এ কারণে ব্যবসায়ীরা এখনো বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক করছেন না।
প্রসঙ্গত, ৯ ডিসেম্বর ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই সময় বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা। খোলা পাম তেলের লিটারও ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা। এক মাস আগে দাম বাড়ানোর পর ভোক্তাদের আশা ছিল, দাম বাড়ানোর পর সংকট কেটে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বাজারে অস্থিরতা রয়েই গেছে।
সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বোতলজাত তেল কেটে ড্রামে ভরে খোলা তেলের দামে বিক্রি করছেন, এতে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম পাচ্ছেন তারা। আর ভোক্তাদের গুনতে হচ্ছে বেশি টাকা। ভোক্তারা সঠিক সরবরাহ নিশ্চিত এবং তেলের বাজারে স্বচ্ছতা আনতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। ভোজ্যতেলের খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকেরা সিন্ডিকেট করে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। তারা চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ করছেন না। ফলে খুচরা বাজারে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে এবং বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আমদানিকারকেরা বলছেন, সরকার দুই দফায় শুল্ক-কর কমিয়েও সুফল মিলছে না। বরং দাম আরও বেড়েছে। একাধিক কারণে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির। দেশে ডলারের সংকট এখনো চলমান। আমদানিকারকেরা আগের মতো ভোজ্যতেল আমদানি করছেন না। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, চক্রান্ত করে সরবরাহ বন্ধ করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। এসব করে শুল্ক প্রত্যাহার ছাড়াও সরকার নানা সুবিধা দিলেও তার সুফল ভোক্তা পায় না।
তিনি বলেন, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন দাম বাড়ানোর বিষয়ে যতটা আগ্রহী, দাম কমাতে ততটা আগ্রহী না হওয়ায় ভোজ্যতেলের বাজারে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আর বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়িয়ে দেন আমদানিকারকেরা। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে দীর্ঘদিনেও অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যটির দাম সমন্বয় হয় না, যা খুবই দুঃখজনক। এ ক্ষেত্রে নানা অজুহাত দেখান ব্যবসায়ীরা।। এতে ভোক্তাদের ফের বাজার খরচের ওপর বাড়তি চাপ আসবে। এমনিতেই চালসহ নিত্যপণ্য বাবদ বাড়তি খরচ রয়েছে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :