ঢাকা শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

শাহজালালে দুই সংস্থার বিরোধে নিরাপত্তার শঙ্কা

মাইনুল হক ভূঁঁইয়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৪, ১২:৫৮ এএম

শাহজালালে দুই সংস্থার বিরোধে নিরাপত্তার শঙ্কা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্সের (এভসেক) সঙ্গে এপিবিএনের বিরোধকে কেন্দ্র করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ঠান্ডা লড়াই এই নিরাপত্তার বিষয়টি জোরেশোরে সামনে নিয়ে এসেছে। 

গত ৩ নভেম্বর অফিসের মালামাল সরানোর অভিযোগে এভসেকের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছে এপিবিএন। লক্ষ করা গেছে, এরপর থেকেই মূলত পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে শুরু করে। ক্ষুব্ধ বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া ৫ নভেম্বর একটি অনলাইন গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, এভসেকের সক্ষমতা বাড়লে বিমানবন্দরে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) থাকবে না। তিনি বলেন, এভসেকের সদস্যসংখ্যা এখন প্রায় দেড় হাজার। আমরা সদস্য আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছি। সব মিলিয়ে এভেসেকের সদস্যসংখ্যা হবে ৩ হাজার। তখন এয়ারসাইট ও আউটার সাইটÑ সব দিকে এভসেক সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।

অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, বেবিচক চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যের পর এভসেক ও এপিবিএনের মধ্যকার দূরত্ব আরও প্রকট হয়ে ওঠে। এপিবিএন শাহজালাল বিমানবন্দরের অনেক কিছুই এড়িয়ে যাচ্ছে। এমনকি মানব পাচার থেকে শুরু করে নিরাপত্তাজনিত কোনো বিষয়েই তাদের দৃষ্টি নেই বললেই চলে। এতে করে স্বল্পসংখ্যক এভসেক সদস্য নিরাপত্তা নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। তাছাড়া তাদের দায়িত্বে শৈথিল্য এবং অনভিজ্ঞতার বিষয়টিও প্রতিনিয়ত চোখে পড়ছে। নিজেদের অস্ত্র চেয়ারে রেখে খালি হাতে দায়িত্ব পালনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে অপরাধী গ্রেপ্তার এবং চোরাচালানের পণ্য উদ্ধার কার্যক্রম।

পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত তিন মাস তাদের কোনো তৎপরতা নেই। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মানব পাচার, লাগেজ পার্টি ও লাগেজ কাটা পার্টির ভয়াবহ তৎপরতা। এভসেক সদস্যরা কোনো কিছুই থামাতে পারছেন না, কিনারাও করতে পারছেন না।

রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শাহজালাল থেকে নিজদের একপ্রকার গুটিয়ে নেয় এপিবিএন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিমান বাহিনী থেকে পাঁচ শতাধিক জনবল প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১১ আগস্ট এপিবিএন সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতে গেলে বাধার সম্মুখীন হন। ২৮ অক্টোবর গভীর রাতে অ্যাপ্রোন এলাকায় অবস্থিত এপিবিএনের অফিস দখল করে নেন এভসেক সদস্যরা। ২৯ অক্টোবর এপিবিএন এ বিষয়ে বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। উল্লেখ্য, অ্যাপ্রোন এলাকা হচ্ছে ভেতরের অংশ, যেখানে বিমান পার্ক করা, মালামাল লোড-আনলোড, রিফুয়েলিং ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।

বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, একসময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রেটিং ছিল থার্ড ক্যাটাগরিতে। ওই সময় বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল অনিয়ন্ত্রিত ও প্রশ্নবিদ্ধ। চোরাচালান ছিল অনেকটা প্রকাশ্য। যাত্রী হয়রানি ছিল নৈমিত্তিক। পার্কিং স্থান নানা বিশৃঙ্খলায় ভরা ছিল। ছিল পরিবহনশ্রমিকদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য। এমন পরিস্থিতিতে ২০১০ সালের ১ জুন বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালনে যুক্ত হয় এপিবিএন। গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিমানবন্দরের তিনটি অংশে (আউটার, টার্মিনাল ভবন ও এয়ার সাইট) দায়িত্ব পালন করেন ২০০ জনের বেশি এপিবিএন সদস্য।

এখন কেবল আউটার সাইটে দায়িত্ব পালন করেন তারা। এটি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজ। এই অংশে দায়িত্ব পালন করেন প্রায় ৬০০ এপিবিএন সদস্য। দুই সরকারি সংস্থার বিরোধের কারণে গত তিন মাস ধরে বিমানবন্দরের দুই অংশের কোনো অংশেই কাজ করতে পারছেন না এপিবিএনের প্রায় ৬০০ সদস্য। ধরতে গেলে তারা কাজ না করেই, অর্থাৎ বসে বসে বেতন নিচ্ছেন। এ কারণে তাদের বিকল্প হিসেবে যাদের নিয়োজিত করা হয়েছে, তাদের পেছনে গুনতে হচ্ছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। বেবিচক গোয়ার্তুমি করে এই বিপুল অঙ্কের অর্থ গচ্চা দিচ্ছে।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বেবিচক কর্মকর্তা বলেন, বিমানবন্দরে নিরাপত্তায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থা সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করছে। অহেতুক বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!