ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
বিচার চাইছেন দলের নেতাকর্মীরাই

নগদে বিশ্বাসী ছিলেন শম্ভু

তাপস মাহমুদ, বরগুনা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৪, ১২:৩০ এএম

নগদে বিশ্বাসী ছিলেন শম্ভু

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সাবেক সংসদ সদস্য (এসপি) অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর গ্রেপ্তার খবরে তার নির্বাচনি এলাকা বরগুনার সদরের পাশাপাশি আমতলী-তালতলীতে আনন্দের বন্যা বইছে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, নিজ দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও তার কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে জেলার রাজনীতিতে একক আধিপত্য বিস্তার করে হয়ে উঠেছিলেন মুকুটবিহীন সম্রাট। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দিয়ে দল পরিচালনা করেছেন। গড়ে তুলেছিলেন অপরাধের অভয়ারণ্য। 

জানা যায়, গত ২০০৯ সালে অষ্টম সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে শম্ভু হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। আমতলী ও তালতলী উপজেলায় গড়ে তুলেন নিজস্ব বিশেষ সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট বাহিনী দিয়ে পরিচালিত হতো অনিয়ম-দুর্নীতি। চলত লুটপাটের মহা উৎসব।

দলবাজি, টেন্ডারবাজি, ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, সালিশ বাণিজ্য, বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভাঙারি মালামাল চুরি, মনোনয়ন বাণিজ্য। এতে তার মিলত নগদ কারিকারি টাকা। দুই উপজেলায় করেন বিস্তৃত জমি দখল, কোথাও নামমাত্র টাকা দিয়ে ক্রয় করেন জমি। অভিযোগ রয়েছে, তাদেরকে বিশেষ কায়দায় ফেলে আদায় করতেন দ্বিগুণ টাকা। আর সে টাকা নগদ নিতে পছন্দ করতেন শম্ভু।

আমতলী উপজেলায় এক সময়ের বিএনপি নেতা সাবেক পৌর মেয়র ও তার ভাই সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মজিবর খলিফা, চাওড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাদল ও হলদিয়ার চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান শহীদকে দলে এনে গড়ে তুলেছেন সব অনিয়মের নিয়মনীতি। তাদের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের শোষণ ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। ত্যাগী নেতাকর্মীদের দলের মধ্যে জায়গা না দিয়ে ছুড়ে ফেলেছেন আস্তাবলে। দলের কোন্দল আমতলীতে সবচেয়ে বেশি। আর কোন্দল লাগিয়ে তিনি অর্থ হাতিয়েছেন পাহাড় সমতুল্য। তিনি মূলত নগদ টাকায় বিশ্বাসী ছিলেন।

এলাকাবাসী ও দলীয় কর্মী সূত্র জানায়, সাবেক এমপি ও উপমন্ত্রী শম্ভুর নির্বাচনি এলাকা তালতলী উপজেলায় মনিরুজ্জামান মিন্টু ও রেজবি-উল কবির জোমাদ্দারের মধ্যে কোন্দল রেখে এখান থেকে ফায়দা লুটেছেন বিশেষ প্রক্রিয়ায়। এখানে তার দাপটে দুই গ্রুপ চায়না তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কামাই করেছেন শত শত কোটি টাকা। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে সিন্ডিকেট বাহিনী করে দু’পক্ষই ভাঙারি মালামাল চুরির বন্যা বইয়ে দিয়ে আঙুল ফুলে হয়েছেন কলাগাছ। নারী কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা সাজিয়ে একে অপরকে ফাঁসিয়ে চিত্তবিনোদনের দলে পরিণত করেছে দলকে।

দীর্ঘ ২৫ বছর এমপি থাকাকালে কয়েকশ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ঢাকাসহ ভারত, আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরে গড়ে তুলেছেন অট্টালিকা এমন দাবি দলীয় নেতাকর্মীদের। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে তিনি বরগুনা-আমতলী-তালতলীর মানুষকে শোষণ ও নির্যাতন করেছেন। দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করে নেতাকর্মীদের বিভক্ত করে রেখেছেন। তার পছন্দের নেতাকর্মী দিয়ে দল পরিচালনা করেছেন। গত ১৫ বছরে শম্ভু ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের দুঃশাসনে দলীয় নেতাকর্মী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। নদী পাড়ি দিয়ে বরগুনায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও মিলত না তার দেখা। না পেয়ে ফিরে আসতে হতো সাধারণ মানুষকে। এমন অভিযোগ সাধারণ মানুষ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের।

জানা  যায়, সাবেক এমপি ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভুর নিজস্ব নেটওয়ার্ক দিয়ে আমতলীতে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তাদের ইশারা ছাড়া আমতলীর একটি পাতাও নড়তে পারেনি। জমি দখল, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, মাদক বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং লালন-পালনসহ সব অপরাধই ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। কিশোর গ্যাং লিডার ইসফাক আহম্মেদ তোহা ও সবুজ ম্যালাকারসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গ দিয়ে দলের সিনিয়র নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষদের মারধর করাত। নানা অপকর্ম ও সন্ত্রাসের জন্য চলতি বছরের জাতীয় নির্বাচনে শম্ভু স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যান। গত তিন মাস নিরুদ্দেশ থাকার পর গত সোমবার ঢাকার উত্তরা থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন। 

আমতলী উপজেলা যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিরাজ হোসাইন ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, শম্ভু তার পছন্দের লোক দিয়ে দুটি মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করেছেন।

একই উপজেলার সাবেক নারী ভাইস চেয়ারম্যান তামান্না আফরোজ মনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, গত ১৫ বছরে শম্ভুর কাছে যেতে পারিনি। একদিন দেখা করার জন্য বেশ চেষ্টা করেছি কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে দেখা করেননি। সাবেক এই এমপির সব অপকম ও দুর্নীতির বিচার চাইছেন বরগুনার সাধারণ মানুষ।

আরবি/জেডআর

Link copied!