শ্বশুর আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী এবং জামাই সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। ঢাকার বৃহত্তর মিরপুরের অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন কামাল আহমেদ মজুমদার। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর হিসেবে গত দেড় দশকে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে হয়েছেন বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক। অন্যদিকে তারই মেয়েজামাই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সেলিম মাহমুদ চৌধুরী চাকরিকালীন ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রীর আনুগত্য দেখিয়ে ‘আয়নাঘর’ ও গুম-খুনে জড়িত থাকার পাশাপাশি দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
শ্বশুর-জামাই নানান অপকর্ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। নামে-বেনামে গড়ে তোলা অবৈধ সম্পদ বাঁচাতে নিয়েছেন ছলচাতুরির আশ্রয়। কামাল মজুমদার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বন্দি থাকলেও জামাই সেলিম মাহমুদ গোপনে দেশ ছেড়ে পালাতে চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
দেড় দশক এমপি থাকার পাশাপাশি গত ২০১৮-২০২৩ মেয়াদে শিল্প প্রতিমন্ত্রী ছিলেন কামাল মজুমদার। সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতিও ছিলেন।
পাঁচবার সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগে দখল, চাঁদাবাজি, মানুষকে হয়রানি করা ছিল তার নেশা। গড়ে তোলেন অপরাধজগতের সাম্রাজ্য, গডফাদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন নিজেকে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় মিরপুরে ইকরামুল হত্যা মামলায় গত ১৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারের পর রিমান্ড শেষে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। এর আগে গত ১৯ আগস্ট দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ আগস্ট আদালত বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এদিন দুদক থেকে জানানো হয়, তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে সেই অনুসন্ধান চলছে ঢিমেতালে।
সেলিম মাহমুদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ দুদকে জমা পড়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সেলিম মাহমুদ বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণের পাশাপাশি একাধিক বাড়ি ও সম্পত্তির মালিক হলেও দুদকসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থা নিশ্চুপ।
গোয়েন্দা ও দুদকের সূত্র নিশ্চিত করেছে, সেলিম ও তার স্ত্রী রাশেদা আকতার সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকার তথ্য গোপন করে ২ লাখ মার্কিন ডলারে অ্যান্টিগুয়া ও বারমুডায় নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের অপরাধ চক্রের অন্যতম হোতা ছিলেন সেলিম মাহমুদ। শ্বশুরের পরিচয় ব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। দেশে ৬০টির বেশি ফ্ল্যাট, বাড়ি ও কয়েক শ বিঘা জমির মালিক এবং শেয়ারবাজারে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে সেলিমের। বিতর্কিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সেলিম মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ এবং নানান কেলেঙ্কারির অভিযোগ জমা পড়ার পর দুদক তদন্ত শুরু করেছে। তবে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কোন পর্যায়ে বা আদৌ তদন্ত শুরু হয়েছে কি না, তা জানাতে পারেননি দুদকের একাধিক কর্মকর্তা।
বিতর্কিত সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সেলিম গ্রেপ্তারকৃত আরেক সেনা কর্মকর্তা বহিষ্কৃত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ও চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান সাবেক নৌবাহিনীর কর্মকর্তা বহিষ্কৃত কমডোর মোহাম্মাদ সোয়াহেল গংদের সঙ্গে মিলে আলোচিত ‘আয়নাঘর’ পরিচালনা করতেন। সেলিম মাহমুদ চাকরিকালীন গুম-খুন, দমন-পীড়ন, অপহরণ-নির্যাতন ও আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেন। বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগের দোসরদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, তবু সেই অভিযানে নাম নেই সেলিম মাহমুদের। দেশেই রয়েছেন সেলিম, সুযোগ খুঁজছেন বিদেশে পালানোর। আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান হওয়ার পর সেলিম ২০২০ সালের জুনে বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ভূমিকায় স্থানান্তরিত হওয়ার আগে সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। মোহনা টেলিভিশনের পরিচালক পরিচয় দিয়ে পাসপোর্ট গ্রহণ করা এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ সামরিক বাহিনীতে গুরুতর অপরাধ হলেও এই কর্মকর্তা স্বাভাবিক অবসর গ্রহণ করেন।
গত ২৫ আগস্ট দুদকে করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সেলিম মাহমুদের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত দেশি-বিদেশি সম্পদের তালিকা অনেক লম্বা। তার মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় নামে-বেনামে রয়েছে ২৫টি ফ্ল্যাট, বনানী কবরস্থান রোডে ও ১২৩ নম্বর রোডে রয়েছে আটটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, সাভার এলাকায় নামে-বেনামে রয়েছে ১৫০ বিঘা জমি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রয়েছে দুটি আবাসিক ভবন, বসুন্ধরা ঝিলমিল প্রকল্পে রয়েছে পাঁচ কাঠার ১৪টি প্লট, নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন এলাকায় রয়েছে প্রায় ২০০ বিঘা সম্পত্তি, বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে কোটি কোটি টাকা ও এফডিআর এবং শেয়ারবাজারে রয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে রয়েছে সেলিম মাহমুদের চারটি বাড়ি, কানাডায় রয়েছে ১১টি বাড়ি, সুইজারল্যান্ডে রয়েছে দুটি অবকাশ যাপন কেন্দ্র, যুক্তরাজ্যে রয়েছে তিনটি বাড়ি ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, দুবাইতে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা, দুবাইতে দুটি আবাসিক হোটেল পরিচালনা করেন তার পাঁচজন নিকটাত্মীয়।
সালাহউদ্দিন অপহরণের সঙ্গে সেলিমের সম্পৃক্ততা: সেলিম মাহমুদ, বিএ-৩৪৫২ হিসেবে চিহ্নিত। অবসর গ্রহণের পর সেলিম বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আর্মি ওয়েলফেয়ারের বাণিজ্যিক ব্যাংক ট্রাস্ট ব্যাংকে জেনারেল সার্ভিসেস অ্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। এখনো তিনি সেই পদে রয়েছেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সেলিম মাহমুদ চৌধুরী ২০১৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন বলে অভিযোগ মিলেছে। র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা সালাউদ্দিন আহমেদকে উত্তরা থেকে আটক করে এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের আগে তাকে কয়েক সপ্তাহ ধরে আটকে রাখে। সালাহউদ্দিনের কুখ্যাত অপহরণ, নিখোঁজ এবং ঘটনাক্রমে পুনরুত্থানের সময় সেলিম বিজিবির গোয়েন্দা শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। র্যাব সূত্র উল্লেখ করেছে, সিলেট সীমান্ত দিয়ে বিএনপি নেতাকে ভারতে পাঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সেলিম মাহমুদকে।
এ বিষয়ে আইনজীবী ইলতুৎমিশ সওদাগর এ্যানি রূপালী বাংলাদেশকে জানান, বর্তমান সরকারের আমলে দুদকে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ জমা পড়লে বা গণমাধ্যমে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ বা প্রচারিত হলে স্বপ্রণোদিত হয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। একটি বাহিনীতে কর্মরত থাকাবস্থায় পরিচয় গোপন করে পাসপোর্ট বানানো এবং বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ করা অপরাধ। দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন এবং সেই সম্পদ বিদেশে পাচার করাও অপরাধ। সবচেয়ে বড় বিষয়, ‘আয়নাঘরের’ সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী একজন কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে গুম-খুন ও দমন-পীড়ন এবং নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকার পরও সরকারি সংস্থাগুলো কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না, এটি ভালো লক্ষণ নয়। দুদকসহ অন্যান্য সংস্থা অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে সেটাই কাম্য।
কামালের ২ হাজার বিঘা জমির অবৈধ সাম্রাজ্য: ঢাকার অদূরে সাভারের আড়ালিয়া বাজার এলাকায় অবৈধভাবে মানুষের জমি দখল করে গড়ে উঠেছে কামাল আহমেদ মজুমদারের সাম্রাজ্য। আশির দশকে সাভারের বরাকৈর মৌজায় কয়েক শ বিঘার একটি প্রকল্প স্থাপন করেন সাবেক এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার। পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রকল্প এলাকার আশপাশের জমি একের পর এক দখল করেন তিনি। পুরো এলাকায় তার অধীনে প্রায় ২ হাজার বিঘা জমি রয়েছে। সেখানে বৃহদাকার একটি সোলার প্রকল্প করার কথা ছিল। তবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সেই প্রকল্প ভেস্তে যায়।
বর্তমানে দখলকৃত জমিতে পুকুর, চারিদিকে নালা করে লোহার গ্রিল ও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন কামাল আহমেদ মজুমদার। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারেত পালিয়ে যাওয়ার পর জমির প্রকৃত মালিকেরা এসে তাদের জমির দখল শুরু করেছেন। এর আগে শেখ হাসিনার পালানোর খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা তার প্রকল্পের হরিণসহ অসংখ্য গবাদি পশু ও মাছ লুট করে নেয়। বিশাল প্রকল্পটির মধ্যে একাধিক টর্চার সেল ছিল। যারা স্বেচ্ছায় জমি দিতে চাইতেন না, নিজস্ব বাহিনী দিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের সেখানে আটকে নির্যাতন করা হতো। তারপর জমি রেজিস্ট্রি করে দিলেই মিলত মুক্তি। বিষয়টি ওই এলাকার ওপেন সিক্রেট হলেও এত দিন ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি।
২১ মামলা থেকে অব্যাহতি: গত দেড় দশকে কামাল আহমেদ মজুমদারের নামে থাকা ২১টি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। গত ১৫ বছরে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে সাত গুণের বেশি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারে শিল্প প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা কামাল আহমেদের বার্ষিক আয় এই দেড় দশকে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় কামাল আহমেদ মজুমদার আয় ও সম্পদের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনি হলফনামায় কামাল আহমেদ মজুমদারের পেশা উল্লেখ করা হয়েছে ‘ব্যবসা, কৃষি, মৎস্য ও খামার’। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ।
২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনের আগে দেওয়া হলফনামায় বার্ষিক আয় ৫৯ লাখ টাকার কিছু বেশি দেখিয়েছিলেন কামাল আহমেদ মজুমদার। এবার তিনি আয় দেখিয়েছেন ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার বেশি। ২০০৮ সালের হলফনামায় নিজের নামে ২২টি মামলার কথা উল্লেখ করেন কামাল আহমেদ মজুমদার। এর সবগুলো সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। এবার হলফনামায় ২১টি মামলার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এর সবগুলোতে তিনি খালাস পেয়েছেন বলে হলফনামায় জানিয়েছেন। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, হত্যাচেষ্টা, জরুরি বিধিমালা (দুর্নীতি দমন) ও আয়কর অধ্যাদেশের মামলা ছিল।
সর্বশেষ তার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ১০ কোটি ১৫ লাখ টাকা সমমূল্যের। বন্ড, ঋণপত্র ও স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগ বেড়েছে। বর্তমানে এই খাতে ২ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ রয়েছে কামাল আহমেদের। বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেলের আর্থিক মূল্য ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকার বেশি দেখানো হয়েছে। ১৫ বছর আগে এই খাতের সম্পদ ছিল ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার। এ ছাড়া ‘অন্যান্য পিস্তল, শটগানসহ’ আলাদা একটা ক্যাটাগরিতে সর্বমোট ৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকার হিসাব দেখানো হয়েছে।
নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় কামাল আহমেদ মজুমদার তার কৃষিজমির পরিমাণ দেখিয়েছিলেন ৬ হাজার ১৬১ দশমিক ২৩ শতক। এর আর্থিক মূল্য দেখানো হয়েছিল ২৯ লাখ ৯৪ হাজার ৬৬০ টাকা। ১৫ বছর পরের হলফনামায় কৃষিজমির পরিমাণ ও অর্থমূল্য একই দেখানো হয়েছে। ২০০৮ সালের হলফনামায় ২৪৪ দশমিক ৯০ শতক অকৃষিজমি দেখানো হলেও এবার তা দেখানো হয়নি। আগের হলফনামায় ২ কোটি ২০ লাখ ১৪ হাজার ৫১৮ টাকা মূল্যের দুটি বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টের হিসাব দেওয়া হয়েছিল। এবারের হলফনামায় সেই দুই বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টের দাম ৪৫ লাখ টাকা বেশি দেখানো হয়েছে। তবে ২০০৮ সালে তিনটি দালান ও আবাসিক ভবন দেখানো হয়েছিল, এবার তা দেখানো হয়নি।
মনিপুর স্কুলের ৯০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ: সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অস্তিত্ব ধ্বংসের অভিযোগ তুলে তার বিচার দাবি করেছিলেন ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার। এবার তার বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত ৬ মার্চ রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন মনিপুর স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের একটি গ্রুপ। তাদের অভিযোগ, কামাল আহমেদ মজুমদার নিজেই এই মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজকে পারিবারিক সম্পত্তি বানিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন।
সাবেক গভর্নিং বডির সদস্য ও অ্যাডহক কমিটির সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেন, সাবেক অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন ও তার পিএ মিলে ট্রাস্টের নামে স্কুল থেকে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করতে সেনাবাহিনী বা শিক্ষা ক্যাডার থেকে ডেপুটেশনে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন অভিভাবকেরা।
সেলিম মাহমুদের বিরুদ্ধে দুদকে অপকর্ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পরও দৃশ্যমান অনুসন্ধান শুরু হয়নি কেন এমন প্রশ্নে সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতার হোসেন রূপালী বাংলাদেশকে জানান, দুদকে জমা পড়া প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়। অভিযোগ পেলে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে তা অনুসন্ধান বা তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ধীরগতি নয়, আইন অনুযায়ী অনুসন্ধান কার্যক্রম চালায় দুদক।
কামাল আহমেদ মজুমদারের তদন্ত কোন পর্যায়ে এই প্রশ্নের জবাবে দুদকের এই কর্মকর্তা জানান, অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :