ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

কৃত্রিম সংকটে সয়াবিন তেল

শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২৪, ১২:২৪ এএম

কৃত্রিম সংকটে সয়াবিন তেল

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকার বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমেছে। সরবরাহ স্থিতির কথা বলে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হলেও জোগান বাড়েনি। অন্যদিকে, সরবরাহ বাড়াতে এবং দাম আরও সাশ্রয়ী করতে তৃতীয় দফায় শুল্ক ছাড় দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবু আমদানিকারকেরা সরবরাহ বাড়াননি। বোতলজাত ভোজ্যতেল সয়াবিন ঢাকার বাজারে মিলছে খুবই কম। যাও মিলছে, তা অন্য পণ্যের সঙ্গে মিলিয়ে কিনতে হচ্ছে। ঢাকার বাইরের বাজারেরও একই চিত্র। যাকে কৃত্রিম সংকট বলছেন অনেক ব্যবসায়ী।

তবে এবিআরের প্রত্যাশা, তৃতীয় দফায় শুল্ক ছাড় দিলে আমদানিপণ্যের সরবরাহ বাড়বে। আসছে রমজান মাসে ভোগ্যপণের দাম (মূল্যস্ফীতি) কমবে এবং প্রত্যাশিত সরবরাহ বাড়বে।

ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আগে থেকেই তেলের সংকট ছিল। নতুন করে তৃতীয় দফা সরকারের শুল্ক ছাড়ের ঘোষণায় দাম আরও কমবে। তাই আগের লটের সব মাল ছেড়ে দিতেই অনেক ব্যবসায়ী অভিনব কায়দা করছেন। আরেকটি পক্ষ জানিয়েছে, সরকারের শুল্কছাড়ের ঘোষণার পরেই নতুন দামে তেল ছাড়া অসম্ভব। নতুন দরে তেল পেতে সময় লাগবে।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ভোজ্যতেলের আমদানি ব্যয় লিটারে ৪০-৫০ টাকা হ্রাস পাবে। সরকারের ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের নতুন নির্ধারিত প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৫ টাকা। তৃতীয় দফায় শুল্কছাড়ে বোতলজাত প্রতি লিটারের দাম ১৪০-১৪৫ টাকা হওয়ার কথা। সেখানে কৃত্রিম সংকটে তেল মিলছে না।

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ঢাকার কারওয়ান বাজারের শীর্ষ তেল সরবরাহকারী ব্যবসায়ী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক।

কিচেন মার্কেটে গতকাল সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের প্রধান হিসেবে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, পুষ্টি ছাড়া কোনো কোম্পানির তেল নেই। বসুন্ধরা ও এস আলম গ্রুপের তেল সরবরাহ বন্ধ। ভারতের আদানি গ্রুপের রূপচান্দা তেল আগের মতো আসছে না। মেঘনা গ্রুপের তেলও বন্ধ। সেনাকল্যাণও এখন তেল দিচ্ছে না। সরকার নতুন করে দাম নির্ধারণ করলেও তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক নয়।

দেশে তেল সরবরাহ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, একমাত্র তেল পাচ্ছি পুষ্টি। কারওয়ান বাজারে প্রতিদিন ৫০০ কার্টন তেলের চাহিদা, পাচ্ছি ১০০ কার্টন। চাহিদা অনুযায়ী অনেক কম আসছে।

টিকে গ্রুপের সরবরাহকারী মো. সেলিম বলেন, ‘চাহিদা থাকলেও তেল আসছে না। আজ আসছে মাত্র ১৪০ কার্টন। এখানে দিনে তিন গাড়ি মালও এসেছে। এখনো সেই চাহিদা আছে, কিন্তু দিতে পারছি না।’

ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২২ লাখ টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় ২ লাখ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি হয় ২৩ লাখ টন।

এনবিআরের তথ্য, গত অক্টোবর ও নভেম্বরে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার টন। গত বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৪ লাখ ৬০ হাজার টন। অর্থাৎ, আমদানি ২০ শতাংশের মতো কমেছে। নতুন করে শুল্ক ছাড়ে তা বাড়ার প্রত্যাশা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি।

ঢাকার অনেক খুচরা বিক্রেতা বলেছেন, ‘অগ্রিম টাকা দিয়েও তেল পাচ্ছি না। তেলের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য না কিনলে তেল দেয় না কোম্পানিগুলো। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর ১ ও ২ নম্বরের কাঁচাবাজার ও মহল্লার মুদি দোকানগুলো ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য বিক্রি সম্পর্কে টিকে গ্রুপের সরবরাহকারী মো. সেলিম সম্প্রতি বলেন, অন্য কোম্পানিগুলো করতে পারে। তবে আমরা এ কাজ করছি না। আমাদের সব আলাদা ডিস্ট্রিবিউটর। খাদ্যের সঙ্গে তেলের সম্পর্ক নেই।

ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন গত ৯ ডিসেম্বর তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এতে প্রতি লিটার খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ে ৮ টাকা করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হয়েছে ১৭৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৭ টাকা।

মিরপুর ১ নম্বর কাঁচাবাজারের নোয়াখালী জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা বাবুল আহমেদ বলেন, ‘আমি ১৫ দিন আগে অর্ডার দিয়ে রেখেছি। বৃহস্পতিবার তিন কার্টন তেল দিয়েছে। এই তিন কার্টন তেল কিনতে ১০ হাজার টাকা লেগেছে, কিন্তু আমাকে ১৫ হাজার টাকার আটা, পোলাওয়ের চাল আর লবণ কিনতে হয়েছে। এখন আমি খালি তেল বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছি। ১০ আইটেম মাল কেউ কিনলে আমি তেল দিই, না হলে দিই না। কারণ আমার নিজের কাছেই নেই।’

কাউসার হোসেন নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা আছি বিপদে। বেশি দাম দিয়ে কিনে খাব, সেটাও পাই না। আসলে ব্যবসায়ী আর সরকার যে কী চায়, সেটাই আমরা বুঝতে পারি না।’

আরবি/জেডআর

Link copied!