ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

জানুয়ারিতে মায়ের সঙ্গে দেশে ফিরবেন তারেক

রুবেল রহমান

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৪, ১২:৩২ এএম

জানুয়ারিতে মায়ের সঙ্গে দেশে ফিরবেন তারেক

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

তারেক রহমানের দেশে ফেরাটা এখন অনেকটাই সময়ের ব্যাপার। বিএনপির সূত্র বলছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাবেন। সেখানে মায়ের পাশে থাকবেন তারেক রহমান। চিকিৎসা শেষে মাকে সঙ্গে নিয়েই দেশে ফিরবেন তিনি।

আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি নিয়ে গতকাল রোববার এই রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। অভিযোগ গঠনে ত্রুটির কারণ দেখিয়ে সব আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ চাঞ্চল্যকর এই মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) এবং বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানিতে এ রায় দেন। এর পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আবেদন (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্ট খারিজ করে দেন। মামলায় খালাস দেওয়ায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে নয়াপল্টনে আনন্দ মিছিল বের করা হয়। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মী মিছিলে অংশ নেন।

এদিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলাই ছিল ষড়যন্ত্রমূলক। আরেক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার হাইকোর্টের রায়কে বিজয়ের মাসের ‘ন্যায় বিচার প্রাপ্তি বিএনপি তথা দেশবাসীর জন্য এটি একটি বড় সুসংবাদ।’ মামলার জাল ছিঁড়ে দেশে ফেরার পথ আরও প্রশস্ত হলো বলে মনে করেন তারেক রহমানের আইনজীবীরা।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যত মামলা 

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় ২১টি মামলা ছিল। এরপর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, অর্থ পাচার মামলা হলো। পরবর্তীতে ২০১৪-১৫ সালের দিকে তারেক রহমানের লন্ডনে একটা বক্তব্য দিয়েছিলেন সেই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে প্রায় ৬৪ জেলায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা অনেক আইনজীবী মানহানির মামলা করেছিলেন। সব মিলিয়ে ৮৫-এর মতো মামলা রয়েছে। ওয়ান ইলেভেনের সময়ের দায়ের হওয়া অনেক মামলা উচ্চ আদালতে বাতিল করা হয়েছে।

মানহানিরও অনেক মামলা খারিজ হয়ে গেছে; আইনি প্রক্রিয়ায় অনেক মামলা বাতিল হয়েছে। যেসব মামলায় তিনি চার্জশিটভুক্ত ছিলেন না, এফআইআরেও নাম ছিল না। সেসব মামলায় আমরা আদালতে গিয়েছি আদালত বাতিল করে দিয়েছেন। এ বি সিদ্দিক নামে একজন মামলা করেছেন উনি জীবিত নেই। এই ধরনের মামলা খারিজ হয়েছে। মানহানি তো তার হয়েছিল যিনি মামলা দায়ের করেছিলেন। অনেক আওয়ামী লীগ বা যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতারা মামলা করে পরে খোঁজখবর নেয়নি। দেখা গেল ২০১৪ সালে মামলা করেছে, এখন ২০২৪ সাল, ১০ বছরে উনারা উনাদের পক্ষ থেকে কোনো সাক্ষ্য উপস্থাপন করেননি। 

তারেক রহমান দেশের বাইরে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন প্রায় ১৭ বছর। তারপরও তার বিরুদ্ধে কেন এত মামলা এমন প্রশ্নের উত্তরে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, এটা খুব সহজেই বোঝা যায়, তারেক রহমান অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রধান ব্যক্তিত্ব যে কারণে মামলা হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই। রাজনীতির বাইরের উদ্দেশ্যে কিছু না। উনার রাজনৈতিক স্ট্যান্ড বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস।

কত মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছরের সাজা হয়েছে। যা পেন্ডিং রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় সাজা হয়েছে। অর্থ পাচার মামলায় নিম্ন আদালত খালাস দিয়েছিলেন। সেই খালাসকৃত মামলা উচ্চ আদালতে এসে ৭ বছরের সাজা হয়েছে। নড়াইলে একটি মানহানি মামলায় দুই বছরের সাজা হয়েছিল। একুশে আগস্ট মামলায় যাবজ্জীবন।

মিথ্যা ভিত্তিহীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা দেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা মামলায় আইনিভাবে মোকাবিলা করব এবং উনার নির্দেশনা আছে যে, দেশের সংবিধান, আইন আদালতের প্রতি আস্থাশীল। সেই আস্থা শ্রদ্ধার জায়গা থেকে মামলাগুলো আমরা আইনগতভাবে মোকাবিলা করব। অনেক মামলা আছে এখনো সাজা হয়নি।

সেই মামলাগুলোতে আমরা দেখছি, সরকার প্রেস নোট ইস্যু করেছে মামলা প্রত্যাহার করবে; কিন্তু তারেক রহমানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা, আমাদের যদি মামলা প্রত্যাহার করতে হয় তিনি যেন বাংলাদেশের সর্বশেষ ব্যক্তি হন অর্থাৎ দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের সমস্ত রাজনৈতিক নেতাকর্মী সমর্থকদের মামলা প্রত্যাহারের পর যেন তার মামলা প্রত্যাহার করা হয়। সেটা হলো ওনার উদারতা, নেতাকর্মীদের প্রতি ভালোবাসা।

সব মামলা প্রত্যাহারে কেমন সময় লাগবে?

কায়সার কামাল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনি প্রক্রিয়ায় আদালত যতটুকু সময় মনে করে ঠিক ততটুকু সময় লাগবে। এখানে তড়িঘড়ি করার কিছু নেই। আদালত স্বীয় পর্যবেক্ষণ অনুসারে আদালত কর্তৃক মামলাগুলো নিষ্পত্তি হবে। এ ধরনের মামলায় বেশি সময় লাগে না আবার কম সময়ও লাগে না। এটা অগ্রিম বলা যায় না।

তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের জটিলতা কি?

কায়সার কামাল বলেন, বাংলাদেশে গত ১৬ বছর কার্যত আইনের শাসন ছিল না। শেখ হাসিনাকে খুশি করতে বিচার বিভাগ অনেক কাজ করেছে। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে এই মামলার যিনি বাধা ছিলেন তিনি আদালতে এসে বলেছেন যে, মামলাটা আমার ভুল হয়েছিল, আমি প্রত্যাহার করে নিতে চাই। তিনি মামলা প্রত্যাহার করে নিলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, তিন মাস সিদ্ধান্ত নিতে যথেষ্ট সময়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখছি না বর্তমান সরকারের মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে। আমরা প্রত্যাশা করছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট রেজিমের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন সংগ্রাম করছে, সেই সংগ্রামের সর্বশেষ পরিচিতি ছিল জুলাই হত্যাকাণ্ড। প্রত্যাশা করছি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলাগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে।

তারেক রহমান কবে ফিরবেন? 

কায়সার কামাল বলেন, মামলার সঙ্গে তারেক রহমানের দেশে ফেরার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি গত ১৬-১৭ বছর দেশের বাইরে আছেন। লক্ষ কোটি নেতাকর্মী অপেক্ষা করছেন। মানুষের প্রত্যাশার প্রতি সম্মান এবং নেতাকর্মীদের আবেগকে ধারণ করে দেশে আসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। তিনি শিগগিরই দেশে ফিরবেন, এমনটা চাওয়া নেতাকর্মীদের। আশা করি খুব বেশি সময় লাগবে না। গতকাল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। এর আগে বেশিদিন সাজা হওয়া মামলা থেকেও খালাস পেয়েছেন। বাকি মামলা থেকেও তিনি খালাস পাবেন বলেই মনে করি। 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও তারেক রহমানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আইনজীবী হিসেবে আমরা সর্বদা চেষ্টা করছি আইনি প্রক্রিয়ায় তারেক রহমানের মামলাগুলো নিষ্পত্তির। কিন্তু সরকারের নির্বাহী ক্ষমতায় তারা অনেক কিছু করতে পারে। ইতিপূর্বে সরকার স্বীয় উদ্যোগে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে তারেক রহমান চান তার মামলা আইনি প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি হোক।

তিনি বলেন, ৪০১ ধারা অনুযায়ী, শর্তমুক্ত বা শর্তযুক্তভাবে সরকার এগুলো স্থগিত করতে পারে। তার মামলা প্রত্যাহারে দল থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমরা আইনজীবীরা উদ্যোগ নিয়েছি, আশা করি দ্রুতই সব মামলা থেকে তিনি খালাস পাবেন। কারণ এগুলো তো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা মামলা, মিথ্যা মামলা। এই মামলা টিকবে না। তারেক রহমান কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, উনার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে উনি কবে দেশে ফিরবেন।

তবে বিএনপির একটি সূত্র বলছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাবেন। সেখানে মায়ের পাশে থাকবেন তারেক রহমান। চিকিৎসা শেষে মাকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান।

আরবি/জেডআর

Link copied!