খাদ্যপণ্যের দাম গ্রামের চেয়ে গত নভেম্বরে শহরে বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ কমায় ঢাকার অধিকাংশ দোকানে ছিল কৃত্রিম সংকট। ফলে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে থাকা মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে তৃতীয় ধাপে শুল্ক ছাড় দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে আমদানি পণ্যের দাম কমবে এবং আসছে রমজান মাসে সরবরাহ বাড়বে।
একই সঙ্গে তিন ধাপে, অর্থাৎ সর্বশেষ ২২ অক্টোবর নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবু নিয়ন্ত্রণের বাইরে মূল্যস্ফীতির হুংকার। শহর-গ্রাম সর্বত্র সেই হুংকারে ভীত মানুষ। তাই তৃতীয়বার গত সোমবার আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ও রেগুলেটরি শুল্ক কমিয়েছে সরকার। এতে ভোজ্যতেলের আমদানি ব্যয় প্রতি লিটারে ৪০-৫০ টাকা হ্রাস পাবে বলে জানিয়েছে এনবিআর।
বাজারে সরবরাহ বাড়াতে ক্যানোলা এবং সানফ্লাওয়ার অয়েলসহ সব ভোজ্যতেলের ওপর আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত শুল্ক, কর ও ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রদান করে এনবিআর। বিশেষ করে ভোজ্যতেল খাদ্যপণ্যÑচাল, ডাল, মাছ ও মাংসের দাম বেড়েছে। ডলারের দাম বাড়ায় আরও উসকে দিয়েছে পণ্যমূল্য বা মূল্যস্ফীতি।
উচ্চমূল্যের বাজারে সীমিত আয়ে সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। শহর-গ্রাম কোথাও স্বস্তি মিলছে না। শহরের চেয়ে গ্রামেই খাদ্যপণ্যের দাম বেশি। তবে মূল্যবৃদ্ধিতে সরকারের অনিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেটকে দুষছেন খাবি খাওয়া অনেক মানুষ।
এনবিআর জানিয়েছে, মাহে রমজানে বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক ও মূল্য সহনীয় রাখতে ভোজ্যতেলের ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পুনরায় শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করে। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সানফ্লাওয়ার, ক্যানোলা, সয়াবিন ও পাম ওয়েল আমদানিতে শুল্ক হ্রাস পাবে। সব আমদানি শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি এবং অগ্রিম আয়কর আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত অব্যাহতি দিয়ে পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে এনবিআর।
প্রজ্ঞাপনে সানফ্লাওয়ার, ক্যানোলা, সয়াবিন ও পাম ওয়েল বিক্রির ওপর স্থানীয় পর্যায়ে প্রদেয় মূল্য সংযোজন কর থাকছে না। তা ছাড়া, এসব পণ্যের আমদানি পর্যায়ে প্রদেয় মূসক ১৫ শতাংশ হতে হ্রাস করে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূসক ছাড়া অন্য কোনো শুল্ক-কর অবশিষ্ট থাকছে না। সর্বশেষ তিনটি এসআরও জারি করা হয়েছে বলে জানায় এনবিআর।
ইতিপূর্বে ১৭ অক্টোবর এবং ১৯ নভেম্বর জারীকৃত শুল্ক-কর অব্যাহতির প্রজ্ঞাপন দুটি সয়াবিন ও পাম ওয়েলের ক্ষেত্রে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রযোজ্য ছিল। তা নতুন করে সময় বাড়নো হয়েছে।
ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল রাখা এবং ভোক্তাসাধারণের জন্য ভোজ্যতেলের মূল্য সহনীয় রাখাই উদ্দেশ্য। সয়াবিন ও পাম তেলের পাশাপাশি এবার অপরিশোধিত ও পরিশোধিত সানফ্লাওয়ার তেল ও ক্যানোলা তেলের আমদানির ওপর বিদ্যমান শুল্ক-কর ও মূসক হ্রাস করা হয়েছে।
সয়াবিন ও পাম তেলের সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বমুখী দর বিবেচনায় নিয়ে পবিত্র রমজান মাসে পণ্যটির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে নতুন প্রজ্ঞাপনে পণ্য তিনটির মেয়াদ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে এনবিআর।
এদিকে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে পৌঁছেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি অক্টোবরের ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক এম আসাদুজ্জামান বলেন, মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে কম পরিমাণে খাদ্যশস্য বিতরণ যৌক্তিক নয়। কারণ গত বছরের তুলনায় এ বছরের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও ভয়াবহ। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে খাদ্য উৎপাদনকে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে বন্যাকবলিত জেলাগুলোর দিকে নজর দিয়ে খাদ্যশস্য বিতরণ কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :