কোনো রকম প্রভাবিত না হয়ে নিরপেক্ষ ও নির্মোহ থেকে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র জাতির সামনে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনের প্রধান বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) সাবেক মহাপরিচালক এ এল এম ফজলুর রহমান।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পিলখানার ভেতরে কমিশনের প্রথম মিটিং শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক এ এল এম ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো রকম, কারো দ্বারা প্রভাবিত হব না। যেহেতু এটা জাতীয় সমস্যা। হাজার বছরে এমন ঘটনা ঘটেনি যে অল্প সময়ে এত অবিচার ও এত মানুষ নিহত হয়েছেন। আমি দেশবাসীকে জানাতে চাই, এই বিডিআর বিদ্রোহের পরে যারা নির্যাতিত হয়েছেন, নিহত হয়েছেন, বঞ্চিত হয়েছেন সবকিছু আমরা নজরে নেব। পাশাপাশি অতি সহমর্মিতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে আমরা তাদের ক্ষত নিরাময় করার চেষ্টা করব। আমাদের কাজ শেষে প্রশ্ন যেন না উঠতে পারে, সেদিকে আমরা সজাগ থাকব।
তিনি আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমের প্রতি আমি অনুরোধ করতে চাই, আপনারা আমাদের বক্তব্য ইতিবাচকভাবে প্রচার করবেন। না হলে জাতীয় উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে। আজকে আমরা প্রথম মিটিং করলাম। আমরা পরিচিত হলাম। কীভাবে আমরা কাজ করব, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের কিছু চিঠি লিখতে হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি, আমাদের সাচিবিক সুবিধা দিতে হবে। অফিস দিতে হবে। আজ আমরা বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি আমাদের সাদরে গ্রহণ করেছেন। ৫ রাইফেল ব্যাটালিয়নের একটা অফিস আমাদের কাজ চালানোর জন্য দিয়েছেন।’
বিডিআরের সাবেক ডিজি আরও বলেন, ‘আমরা কতগুলো বিষয় চিহ্নিত করেছি। এটা কিন্তু অন্য কমিশনের মতো নয়। এটা অন্যরকমের কমিশন। যেখানে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চিহ্নিত করতে আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা কিছু বাড়তি বিষয় চেয়েছি, যার মধ্যে আমরা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিরাপত্তা, পরিবহন সুবিধা, সাচিবিক সুবিধা ও অফিস চেয়েছি। এই কমিশনের সভাপতির পদমর্যাদা হতে হবে একজন উপদেষ্টার সমান। কারণ তাকে দেশি-বিদেশি মানুষের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই সমমর্যাদায় থেকে যেন কাজ করতে পারি। পাশাপাশি কমিশনের অন্য সদস্যদের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারকের মর্যাদা চেয়েছি। এই সবগুলো হলেই আমরা পরবর্তী মিটিং ও সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করব। প্রতিটি মিটিং শেষে যে বিষয়গুলো জানানো উচিত, সেগুলো আমরা দেশবাসীকে জানাব। আমরা কাউকে অন্ধকারে রেখে কাজ করতে চাই না।’
বিচার প্রক্রিয়া কী হবে জানতে চাইলে কমিশনের প্রধান বলেন, ‘আমরা চারজন দেশি-বিদেশি আইন বিশেষজ্ঞকে সম্পৃক্ত করতে বলেছি। বাংলাদেশের একজন সিভিল আইন বিশেষজ্ঞ, সামরিক ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ একজন পেলে ভালো হয়। দুজনকে আমরা বাংলাদেশ থেকে যুক্ত করতে বলব। আর যেহেতু বিদেশি শক্তিকে শনাক্ত করতে হবে, তাই বিষয়টা আন্তর্জাতিক হয়ে গেছে। তাই আমরা অপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ দুজনকে যুক্ত করতে আবেদন দেব।’
কমিশন গঠন করার পরপরই বিজিবির একজন সাবেক মহাপরিচালক দেশত্যাগের চেষ্টা করেছিলেন। বিডিআর বিদ্রোহের আগে ও পরে তদন্তসহ নানা কিছুতে জড়িত ছিল এমন ব্যক্তিদের দেশত্যাগের বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেবেন কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করব। যদি আমরা মনে করি, এই তদন্তের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে তাকে দেশে থাকতে হবে, তাহলে আমরা সেই সিদ্ধান্ত নেব।’
যেহেতু পিলখানা হত্যাকাণ্ডে দেশি-বিদেশি চক্রান্তের কথা বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো দেশের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো দেশকে শনাক্ত করতে চাই না। আমরা নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে আগাতে চাই। সেটা করতে গিয়ে যারা দালিলিক ও পারিপার্শ্বিক প্রমাণে দায়ী হবেন, তখন আমরা মতামত দেব। যেহেতু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছে, তার একটা অংশ আমাদের দেশের পার্টে যারা আছেন, তারা এই কমিশনের জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হবেন।
পাশাপাশি আপনারা জানেন, ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর অনেকেই দেশ থেকে পালিয়েছেন। তারা যেসব দেশে গেছেন, সেসব দেশের সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করব। এরপর যদি না হয়, তাহলে ওই দেশে গিয়ে বক্তব্য নিতে আমরা টিম পাঠাব।
আপনার মতামত লিখুন :