ঢাকা: ২০০৫ সালে বন্ধ হয়ে যায় রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর তীরঘেঁষা ঐতিহ্যবাহী ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরি। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে অচল হাজার কোটি টাকা মূল্যের বিশাল এই শিল্পকারখানা। বেশির ভাগ মূল্যবান যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে গেছে। বাকিগুলো মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিছু যন্ত্রপাতি চুরিও হয়ে গেছে। চালুর উদ্যোগ না নেওয়ায় এভাবে ধ্বংসের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরি।
সরকারি নির্দেশনা কার্যকর না হওয়া, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতা ও সিন্ধান্তহীনতায় একসময়ের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাচ (দেশলাই) কারখানাটির এমন করুণ হাল বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাদের দাবি, যেহেতু বর্তমানে ম্যাচ বা দেশলাইয়ের তেমন কদর নেই, তাই প্রায় ৪৪ বিঘা জমির ওপর যুগোপযোগী ও আধুনিক মানের একটি জেটি নির্মাণ কিংবা শিল্প পার্ক করা হোক। এ ক্ষেত্রে সরকারি তরফ থেকে বেসরকারি কোম্পানির কাছে দ্রুত কারখানাটি হস্তান্তর ও চালু করার ব্যাপারে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে বেশির ভাগ অংশের মালিক কোম্পানির কাছে পুরোটা শেয়ার ছেড়ে দেওয়া উচিত। নতুন আঙ্গিকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু হলে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বিশাল পতিত জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হলে ভূমিকা রাখবে দেশের অর্থনীতিতে।
ঢাকা ম্যাচ ও দাদা ম্যাচ নামের ফ্যাক্টরি বা কারখানা দুটি ঢাকা ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৪ সালে বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতির আওতায় এটি করা হয়। এই কোম্পানির ৭০ শতাংশের মালিকানা দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী ভাইয়া গ্রুপের। আর বাকি ৩০ শতাংশের মালিকানা শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি)। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের কদমতলী-শ্যামপুরের চাকদা এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরি। ১৯৫৫ সালে প্রায় ১৪ একর জমির ওপর বেসরকারি উদ্যোগে কারখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আর দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির অবস্থান খুলনার রূপসা স্ট্র্যান্ড রোডে। এটিও বেসরকারি উদ্যোগে ১৯৫৫ সালে রূপসা নদীর তীরে ১৭ দশমিক ৭৯ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠে। পরে জাতীয়করণ করা হয়। ঢাকা ম্যাচ ও খুলনার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পরিচালনা করে সুইডিশ একটি কোম্পানি।
জানা যায়, কয়েক যুগ আগের পুরোনো মেশিনারিজসহ ১৯৯৩ সালে সুইডেনের কোম্পানিটি তাদের ৭০ শতাংশ মালিকানা বিক্রি করে দেয়, যা সাফ কবলামূলে কিনে নেয় ভাইয়া গ্রুপ। এরপর সরকারি-বেসরকারি মালিকানায় ২০০৫ সাল পর্যন্ত চলে। পরিচালনা বোর্ডে বিসিআইসির দুজন পরিচালক ও বেসরকারি শেয়ার হোল্ডারদের মনোনীত পাঁচজন পরিচালক দ্বারা প্রতিষ্ঠনটি পরিচালিত হয়। পুরোনো মেশিন নিয়ে চলতে গিয়ে উপর্যুপরি ও টানা লোকসানের মুখে ২০০৫ সালে ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কোম্পানি। পরে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়ে চলতি মূলধনের জন্য একাধিক আবেদন করেও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়। চালু করতে সহযোগিতা না করে ২০১১ সালের মার্চ মাসে সিলগালা করে দেয় সরকারি কর্তৃপক্ষ। ওই বছরের ২১ মার্চ প্রথমে পুঁজি বৃদ্ধির জন্য রাইড শেয়ার ইস্যুর তথ্য চেয়ে কোম্পানির কাছে চিঠি দেওয়া হয়। আবার একই দিন রহস্যজনকভাবে ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ও খুলনার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি সিলগালা করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এর আগে কারখানা দুটি লিজ দেওয়া এমন গুজব রটিয়ে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে দখলের চেষ্টা চালায় সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী খুলনার আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিবিদ বেগম মন্নুজান সুফিয়ানসহ কথিত শ্রমিকনেতারা। পরে সার্বিক বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি ও সিন্ধান্তহীনতায় ১৯ বছর ধরে অচল কারখানাটি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঐতিহ্যবাহী ও বিরাট কারখানা দুটি এত বছর বন্ধ রাখা একেবারেই অযৌক্তিক ও সরকারি তরফের উদাসীনতা। এভাবে ফেলে না রেখে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। যৌথ মালিকানায় না চালালে প্রয়োজনে ৭০ শতাংশের মালিকানা থাকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটির কাছে বাকি ৩০ ভাগ সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে পারে সরকার তথা শিল্প মন্ত্রণালয়। ফেলে না রেখে এজাতীয় কারখানাগুলো যেভাবেই হোক দ্রুত চালু করা উচিত। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে বলে প্রত্যাশা করছি।
কর্মচাঞ্চল্যে মুখরিত কারখানাটি এখন নীরব-নিথর: দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরি। গত ২৬ আগস্ট সরেজমিনে দেখা যায়, কদমতলী-শ্যামপুর এলাকায় এক সময়ের কর্মচাঞ্চল্য মুখরিত ম্যাচ ফ্যাক্টরিটি তার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে প্রতিষ্ঠানটি। পুরোনো স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষের মধ্যেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি বড় কাঠামোর ঘরগুলো। সেখানে রয়েছে দামি যন্ত্রপাতি। যা মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু ভবনের ছাদ ধসে পড়েছে, টিনের ছাউনি ভেঙে পড়ছে। ভবন-দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। দেয়ালগুলোতে গজিয়েছে বট-বৃক্ষসহ নানা ধরনের গাছ। পুরো ফ্যাক্টরি যেন এক ভৌতিক দৃশ্যের গা-ছম ছম করা এক বিশাল ধ্বংসস্তূপ।
১৪ জন নিরাপত্তাকর্মী থাকলেও বিশাল এরিয়ার দেয়াল টপকে কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে চুরির চেষ্টা, মাদক সেবনের চেষ্টা হয় মাঝে মাঝে। কারখানাটি প্রধান সড়কের পাশেই অবস্থিত। ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরির পাশ দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর দিয়ে সরু একটি রাস্তা করা হয়েছে। যে রাস্তাটি ফ্যাক্টরিকে অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ করেছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
নিরাপত্তাকর্মী শাহাব উদ্দিন জানান, আমরা ১৪ জন দিনরাত পালাক্রমে ডিউটি করি। রাতে লাইট জ্বলে। নানা ধরনের ঝুঁকির মধ্যেই আমাদের পাহারা দিতে হয়। রাতে দেয়াল টপকে ভেতরে চোর ঢুকে বিভিন্ন রুমে থাকা মেশিনারিজ, লোহার জিনিসপত্র চুরি করতে আসে। কয়েকবার ধরাও পড়েছে, কিন্তু থামানো যায়নি। রাত নামলেই বিভিন্ন কায়দায় চুরির জন্য ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। তবে, সর্বক্ষণ পাহারা থাকায় তারা চুরি করতে সক্ষম হয়নি। তিনি বলেন, এই কারখানাতে একসময় শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্যে মুখরিত ছিল। এখন নীরব-নিথর। সরকারের উচিত কারখানাটি খুব দ্রুত চালু করে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। বর্তমানে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ আমরা নিরাপত্তারক্ষী মোট ১৭ জন কর্মী আছি। আমাদের বেতন ভাইয়া গ্রুপের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়।
ফ্যাক্টরি সচলের দাবি শ্রমিকসহ এলাকাবাসীর: এলাকাবাসীসহ কারখানা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরির জমি খুবই মূল্যবান। বিনিয়োগের জন্য খুবই উপযুক্ত। সেখানে অন্য কোনো কারখানা হতে পারে। এ জন্য দরকার উদ্যোগ। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে সরকারি উদ্যোগ না থাকাটা খুবই হতাশাজনক। সরকারি-বেসরকারি মালিকানার এই কারখানার এমন দুরবস্থা কোনোভাবেই মানতে পারছেন না কারখানার কর্মী ও এলাকাবাসী। তারা বলছেন, ফ্যাক্টরির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কিছু শ্রমিক এখনো ফ্যাক্টরিটি চালুর অপেক্ষায় আছেন। ঢাকা শহরের মধ্যে এমন নামিদামি শিল্প-কারখানা এভাবে পড়ে থাকা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। এটি দ্রুত চালু করা দরকার। নদীর পাড়ের বিশাল ওই জমিতে একটি শিল্প পার্ক করে সেখানে জেটি নির্মাণসহ বিভিন্ন কারখানা তৈরি করতে সরকার কিংবা কোম্পানির এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এতে করে এলাকাবাসী, শ্রমিক ও বেকার যুবসমাজের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে তারা মনে করছেন।
ঢাকা ম্যাচ ফাক্টরির বেহাল অবস্থা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা গতকাল মঙ্গলবার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরির বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা এখনো সরেজমিনে যেতে পারেননি। জুলাই-আগস্টে টিমটা যেতে পারেনি। তারা শিগগিরই যাবে এবং প্রতিবেদন জমা দিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ সচিব বলেন, ‘দীর্ঘ দিনের পুরোনো বিষয়। ওখানে জমি ও নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা আছে। প্রতিবেদনটি দেখার পরে আমরা সিদ্ধান্ত নেব কোন আঙ্গিকে আগানো যায়। আইন-কানুন দেখতে হবে’।
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতা কিংবা সিদ্ধান্তহীনতায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা দাবি করেন, ‘দীর্ঘসূত্রতা নয়, বরং আমরাই এটা ভেলিডেটেড (যথার্থ সমর্থন করা/আইনগত বৈধতা দেওয়া) করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কয়েক দফায় বৈঠকে বসেছি, দুই পক্ষকে নিয়ে বসেছি, কীভাবে বিষয়টা সমাধান করা যায়, কীভাবে চালু করা যায়Ñ সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে’। সিলগালা করে রাখার জন্য বেসরকারি কোম্পানিও ঢাকা ম্যাচ কারখানাটি চালু কিংবা নতুন কিছু করার পদক্ষেপ নিতে পারছে নাÑ এ প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘সিলগালা ঠিক না, কেউ দায়িত্ব নিতে চায় না, কে নিরাপত্তার খরচ দিবে, আগে জেলা প্রশাসন দিলেও পরে দিতে চাচ্ছে না। আমরাও পুরো অংশের খরচ দিতে চাই না এসব নানা ধরনের জটিলতা রয়েছে’। সেক্ষেত্রে পুরোটা বেসরকারি খাতে দেওয়া যায় কি নাÑ জবাবে তিনি বলেন, না, ‘যৌথ মালিকানায়ই যেতে হবে। কিন্তু কীভাবে লভ্যাংশ বাড়ানো যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। ওই জায়গায় যুগোপযোগী বা সময়োপযোগী কী করা যায়, সেটি ভাবতে হচ্ছে’।
এদিকে চালু করতে সমস্যা কোথায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. মাসুদ খান গতকাল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তহীনতার পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতাই কারখানা দুটি (ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি) চালুকরণে বড় সমস্য।’ কোম্পানি এখন কী চাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রায় ১৪ বছর যাবৎ কারখানা দুটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যেহেতু শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষে গত ১৪ বছরে কারখানাগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি; বরং নিরাপত্তা দিতেই অপারগ সেহেতু কোম্পানি চাচ্ছে কারখানা দুটি বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় কোম্পানিকে বুঝিয়ে দেওয়া হোক। যাতে করে কোম্পানি কারখানা দুটিতে সময়োপযোগী একাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে চলমান অচলাবস্থা নিরসনপূর্বক উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করতে পারে। মো. মাসুদ খান আরও বলেন, এতে করে একদিকে যেমন বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে অন্যদিকে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অংশগ্রহণের সুযোগ হবে। কেননা দুটি কারখানাই প্রচুর শিল্প উপযোগী।
অন্যদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা ম্যাচের জায়গায় লজিস্টিক সাপোর্টসহ একটি আধুনিক জেটি নির্মাণ ও খুলনা ফ্যাক্টরিতে একটি আধুনিক ফয়েল প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি (মোড়কজাত) করার প্রকল্প প্রস্তাব শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বেসরকারি শেয়ারহোন্ডার কোম্পানি। ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দেওয়া এক চিঠিতে বিসিআইসিতে (বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন) সেটি দাখিল করা হয়। যাতে ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বরে দেওয়া চিঠির প্রস্তাব মোতাবেক দ্রুত সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এতে বেসরকারি শেয়ার হোল্ডাররা প্রতিষ্ঠানটির বেসরকারি মালিকানাধীন ৭০ শতাংশ শেয়ার সরকারকে গ্রহণ কিংবা সরকারি মালিকানাধীন ৩০ শতাংশ শেয়ার বেসরকারি শেয়ারহোল্ডারদের কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়।
আরও জানা যায়, বেসরকারি কোম্পানির ওই প্রস্তাবের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরের নির্দেশনা মোতাবেক ফ্যাক্টরির সম্পদের মূল্যায়ন ও দায়-দেনার হিসাব একটি প্রতিষ্ঠিত অডিট ফার্মের মাধ্যমে নিরীক্ষা করে সেই নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিলের পর দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়। প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে কয়েকটি সভা হয়। শিল্প সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ২০২০ সালের ৫ নভেম্বরের সভায় দাখিলকৃত নিরীক্ষা প্রতিবেদনের আলোকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত এখনো কার্যকর হয়নি। তবে অডিট ফার্মের দাখিলকৃত প্রতিবেদনে কারখানার জমির বর্তমান মূল্যের দ্বিগুণ করে মূল্য নির্ধারণ করা হলে কোম্পানির আপত্তি থাকা সত্ত্বেও কোম্পানি তা মেনে নিয়েছে, যাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। শ্রমিকসহ কারখানা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারপরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এভাবে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় চলতে থাকলে আগামী দিনে কারখানা দুটির অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
ফ্যাক্টরি দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ড: ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল প্রকাশ্যে রাজধানীর কদমতলীতে ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরির বাউন্ডারি দেয়াল ভেঙে স্থানীয় ট্রাক মালিক সমিতি কয়েকশ ট্রাক ঢুকিয়ে কারখানার জায়গা জবরদখল করেছিল। ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে তারা ট্রাক মালিক সমিতি শ্যামপুর শাখার নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। জবরদখলের পর সমিতির শ্যামপুর শাখার সভাপতি কথিত শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম সেন্টুর ছবিসহ ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন নীরব ভূমিকা পালন করে পুলিশ। দুদিন পরে কারখানায় অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন। পরে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও জেলা প্রশাসনের তৎপরতায় দখলমুক্ত হয় ম্যাচ ফ্যাক্টরির জায়গা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা বলেন, এ ক্ষেত্রে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আছে। এখন একটা ভালো সময়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার হচ্ছে। কারখানা দীর্ঘ সময় বন্ধ রাখায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। দ্রুত চালু করা দরকার। পদক্ষেপ নিয়ে দেখতে হবে, অচল ওই ফ্যাক্টরির জায়গায় কোনো সম্ভাবনাময় শিল্প করা যায় কি না।
আপনার মতামত লিখুন :