ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। জুলাই বিপ্লবের পর আয়ে ধাক্কা খেলেও তা আবারও গতি পেয়েছে। ধারাবাহিকভাবে আয়ের গতি বেড়ে নভেম্বর মাসে দেশে এসেছে ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। যা দেশের সংকটময় বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করছে। ইতোমধ্যে তা বেড়ে (গ্রস রিজার্ভ) দাঁড়িয়েছে ২৪,১৬৬.৯৪ মিলিয়ন ডলারে, যা ২০ বিলিয়ন ডলারের অধিক। বিপি-৬ হিসাবে গতকাল পর্যন্ত হয়েছে ২০,১৬৬.৯৪ মিলিয়ন।
চলতি ডিসেম্বর মাসে প্রবাসী আয় নতুন উচ্চতার দিকে যাচ্ছে। নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বর মাসে ২৭.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদনেও চলতি বছরে অনন্য উচ্চতায় উঠেছে প্রবাসী আয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে গতকাল সোমবার জানা গেছে, চলতি বছরে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ হাজার ১৪৫ মিলিয়ন। অন্যদিকে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রবাসী আয় আসে ১০ হাজার ৩৭৮ মিলিয়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদনের হিসাবে ২৬.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলাদেশে ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি ডিসেম্বর মাসে ২১ দিনে দেশে এসেছে ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। মাসের শেষে তা আরও বেড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার হওয়ার সম্ভাবনা। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতার দিকে ছুটছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো এই আয়। প্রবাসী আয়ের ধাক্কায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ বেড়ে ২০ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে যা বেড়েছে দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি। আর এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে পৌনে এক বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ায় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে গত রোববার জানা গেছে, চলতি ডিসেম্বরের ২১ দিনে ২০০ কোটি ৭৩ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। যা, দেশীয় মুদ্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)। সে হিসাবে দৈনিক গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৯ কোটি ৫৫ লাখ ডলার বা এক হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। গত নভেম্বর মাসে ছিল প্রায় ২২০ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। চলতি ডিসেম্বরে তা নতুন উচ্চতার আভাস দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ডিসেম্বর মাসের প্রথম ২১ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬১ কোটি ৩১ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৭৩ লাখ মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩১ কোটি ১৬ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫১ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য বলছে, নভেম্বর মাসে প্রবাসী আয়ে এসেছে প্রায় ২২০ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে) যা প্রায় ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বিদেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা নভেম্বরে পাঠিয়েছেন ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার ডলার। প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৭ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের বেশি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে এসেছে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। প্রবাসী আয় আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার, অক্টোবরে ২৪০ কোটি (২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন) ডলার এবং নভেম্বরে মাসে এসেছে ২২০ কোটি (২ দশমিক ২০ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই হাজার ৩৯২ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। দেশীয় মুদ্রার যার পরিমাণ দুই লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। রেমিট্যান্সের অঙ্ক এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আহরণ। দেশের ইতিহাসে রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে, দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার।
আপনার মতামত লিখুন :