রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় ছিনতাই চক্রের দৌরাত্ম্য থামছে না কিছুতেই। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উত্তরা পর্যন্ত ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে অপরাধী চক্র। অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইকারীদের হাতে সহায় সম্বল ও প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রেহাই মিলছে না পুলিশ সদস্যদেরও। তবে এসব অপরাধী চক্রের টার্গেট বিশেষ করে যারা বিদেশ যেতে ঢাকায় আসেন বা বিদেশ থেকে এসে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে যান তারা।
গত এক মাসে ৭৮ জন পেশাদার ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে বিমানবন্দর থানা পুলিশ। তবুও দৌরাত্ম্য কমছে না ছিনতাই চক্রের। অভিযোগ রয়েছে, গ্রেপ্তারের পর জামিনে বেরিয়ে ফের একই কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে তারা।
জানা গেছে, বিমানবন্দর গোলচত্বর থেকে আবদুল্লাহপুর ব্রিজ পর্যন্ত ভয় বেশি। দিনে-রাতে এখানে একাধিক টানা পার্টি ছুরি ও সুইচগিয়ার হাতে সক্রিয় থাকে। দিনে থাকে মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি ও পকেটমার।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উত্তরা হাউস বিল্ডিং, আবদুল্লাহপুর ব্রিজ ও বিমানবন্দর গোলচত্বর এলাকায় বেড়ে গেছে বহিরাগত, টোকাই ও মাদকাসক্তদের দৌরাত্ম্য। তারাই সংঘবদ্ধভাবে ছিনতাই করছে। পুলিশ বলছে, বিমানবন্দর এলাকায় অজ্ঞান পার্টি, ছিনতাই ও মলম পার্টির সঙ্গে জড়িতরা বহিরাগত। টঙ্গী, দক্ষিণখান, উত্তরখান ও তুরাগ এলাকা থেকে এসে টানা পার্টির কাজ করে।
মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে এসে সড়কের পাশে গাড়ির জন্য অপেক্ষারত পথচারীদের জিম্মি করে ২-৩ মিনিটেই সর্বস্ব নিয়ে পালিয়ে যায়।
গত ২৪ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগত যাত্রীদের মালামাল জোরপূর্বক ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে বিমানবন্দর থানা পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলো- নূর আলম, রাজু আহমেদ ওরফে জাহিদ ও অন্তর মিয়া।
বিমানবন্দর থানা সূত্রে জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংরক্ষিত এলাকায় অবৈধভাবে প্রবেশ করে তিন ছিনতাইকারী বিমানবন্দর গোলচত্বর এলাকায় আগত যাত্রীদের মালামাল জোরপূর্বক ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। থানা পুলিশ এই তথ্য পেয়ে গত বৃহস্পতিবার সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভ্রাম্যমাণ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে উপস্থাপন করলে তিনি প্রত্যেককে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমানবন্দরে ফ্লাইওভারসহ উত্তরার বিভিন্ন ফুটওভার ব্রিজের নিচে ধারালো অস্ত্র বা আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে পথচারীদের টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও দামি বস্তু ছিনিয়ে নিচ্ছে এসব চক্র।
আবার প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে এসে পথরোধ করে ছিনতাই করছে। কেউ প্রতিবাদ করারও সাহস পায় না। কেউ সাহস দেখালে তাদের ওপরও চালানো হয় হামলা। ফলে ঘটছে প্রাণহানি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নানা পদক্ষেপ নিলেও কার্যত সুফল মিলছে না।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নগরীতে ছিনতাই রোধে নিয়মিতই অভিযান চালানো হচ্ছে। এরপরও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। প্রায় প্রতিদিনই র্যাব-পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ছে ছিনতাইকারীরা। তবে রাতে চলাচল নির্বিঘ্ন করতে এবং ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঠেকাতে কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
ভুক্তভোগী উত্তরার বাসিন্দা মোতাহার হোসেন জানান, বিমানবন্দর থেকে আবদুল্লাহপুর ব্রিজ পর্যন্ত এলাকায় বহিরাগত, টোকাই ও মাদকাসক্তদের বিচরণ বেড়ে গেছে। এরাই সংঘবদ্ধভাবে পকেটমার ও ছিনতাই করছে।
পুলিশ জানায়, গত অক্টোবর মাসে মোট ৭৮ জন পেশাদার ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে বিমানবন্দর থানা পুলিশ। বিমানবন্দর এলাকায় ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে তাদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তাররা হলো- মনিরুজ্জামান, দুঃখু মিয়া, জাহাঙ্গীর গাজী, আমিনুল ইসলাম, রাকিব, মহসিন, ইসমাইল হোসেন ওরফে কালু, সোহাগ, আকাশ ইসলাম, কাউসার, সহিদ, তাজুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন, রানা, শরীফ, মারুফ আকমল সজীব, হিরা, আলফাজ হোসেন জনি, রুবেল, লিটন, খোকন, মানিক, আমিনুর রহমান, মনি মিয়া, শাহাদাত হোসেন, খোকন, মাসুদ শেখ, মনির, শাহিন মিয়া, সেলিম ইসলাম, রনি, সজিব মন্ডল, মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম, রাসেল, রিফাত, হাসান, জয়নাল উদ্দীন মিঠু, জয়, হৃদয়, সুমন মিয়া, বাবু শেখ, সোহেল ওরফে মুরগি সোহেল, রাজা হোসেন বিশাল, দুলু মিয়া, সোহাগ মিয়া, মুন্না, ইমরান শেখ, ইখলাছ পালন, রাকিব ওরফে সোহেল, মমিন, ইসমাইল হোসেন, ইসমাইল হোসেন, রফিকুল ইসলাম, নূর আলম, রাজু আহমেদ ওরফে জাহিদ, অন্তর মিয়া, গোলাম নবী, কামরুল শরীফ, মারুফ, সুমন, কাউসার, সাব্বির হোসেন, জুয়েল, মিন্টু, আজিজুল হক, রাসেল ঢালী, মোরশেদ, সাব্বির হোসেন, সানোয়ার হোসেন, স্বপন আলী, নাহিদ, নুরুজ্জামান, লাবু মিয়া, আব্দুর রাজ্জাক, আলী আকবর, হৃদয় মঞ্জিল, সাকিব, জয় ও সুমন ওরফে সুমন আলী ওরফে মনিরুজ্জামান সুমন সরদার।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, নগরীতে ছিনতাই রোধে নিয়মিতই অভিযান চালানো হচ্ছে। এরপরও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। প্রায় প্রতিদিনই র্যাব-পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ছে ছিনতাইকারীরা। গত অক্টোবরে শুধু বিমানবন্দর এলাকা থেকেই ৭৮ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা বিমানবন্দর গোলচত্বর এলাকাসহ থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় পথচারী এবং বিদেশগামী যাত্রীদের মূল্যবান মালামাল ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে বিভিন্ন সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করে বিমানবন্দর থানা পুলিশ। ছিনতাই প্রতিরোধে গোলচত্বর এলাকাসহ থানাধীন বিভিন্ন জায়গায় বিমানবন্দর থানা পুলিশের বিশেষ টিম নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। নাগরিকদের নির্বিঘ্নে চলাচল করতে ও ছিনতাই রোধে পুলিশি অভিযান আরও জোরদার করা হচ্ছে।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার ৭৮ জনের প্রায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট গ্রেপ্তারকৃতদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেছেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
আপনার মতামত লিখুন :