ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কারাগারে আ.লীগ নেতাদের বিলাসী জীবন!

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪, ০৮:০১ পিএম

কারাগারে আ.লীগ নেতাদের বিলাসী জীবন!

ছবি: সংগৃহীত

# এসি রুমে থাকছেন, বাসার খাবার খাচ্ছেন
# রিমান্ডেও পাচ্ছেন বাড়তি সুযোগ-সুবিধা
# আড্ডা দিচ্ছেন গ্রুপভিত্তিক

 

শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, দলীয় নেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশ পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন। আবার কেউ কেউ রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেককে অসুস্থতার দোহাই দিয়ে রিমান্ড শেষ হওয়ার আগেই আদালতের আনুকূল্য পেয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। কারাগারে থাকা সদ্য পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। তারা এসি রুমে থাকছেন, বাসার খাবার খাচ্ছেন। রিমান্ডে থাকারাও পাচ্ছেন বাড়তি সুযোগ-সুবিধা। কারাগারে এবং রিমান্ডে থেকে আড্ডা দিচ্ছেন গ্রুপভিত্তিক।

গত এক মাসে গ্রেপ্তার হওয়া আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং কর্মকর্তাদের দফায় দফায় রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারসহ দেশে বিভিন্ন কারাগারগুলোর কুঠিরে দিন কাটছে। বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী উপমন্ত্রী সংসদ সদস্য হওয়ায় তারা বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। সরকারি সাবেক প্রভাবশালী কর্মকর্তা হওয়ায় তাদের বাড়তি তোষামোদ করছে জেল কর্তৃপক্ষ।

ডিবি সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকা সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ও নৌকর্মকর্তা মোহাম্মাদ সোয়াহেলসহ রিমান্ডে থাকা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর প্রভাবশালী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, দলীয় নেতা ও সরকারি আমলা গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে নানা তথ্য দিচ্ছেন। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রিমান্ডে আওয়ামী সরকারের ক্ষমতাবান নেতা এবং সহচররা এসি রুমে থাকছেন। তাদের সেখানেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিয়মিত তিন বেলা বাড়ি আসা খাবার খাচ্ছেন। এমনকি তারা গ্রুপভিত্তিক আড্ডাও দিচ্ছেন।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের পর রিমান্ড থাকা প্রত্যেকেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পতন হওয়া স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী বা ক্ষমতাবান ছিলেন। তাদের কথায় সরকার চলত, দেশের সবকিছুই তারা নিয়ন্ত্রণ করতেন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সাবেক সরকারের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করা এসব ব্যক্তিদের অত্যন্ত সতর্কতার সাথে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সঙ্গে তাদের দেয়া হচ্ছে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা। এটাকে বিলাসবহুল জীবনযাপন না বলে গোয়েন্দারা স্বাভাবিক বলছেন।কারাগার সূত্র জানায়, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিম, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ  ও  আওয়ামী লীগের নেতা ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিলীপ কুমার আগরওয়ালাসহ অনেকে রিমান্ড শেষে কারাগারে অবস্থান করছেন। কারাগারে প্রেরণ করা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সরচরদের আলাদা আলাদা কক্ষে রাখা হয়েছে। কাউকে কাউকে কারা হাসপাতালে রাখা হচ্ছে বলে রূপালী বাংলাদেশকে এক কারা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। কারাগারে থাকা সদ্য ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রভাবশালীরা বাড়িতে আসা খাবার পাচ্ছেন। তারা একে অপরের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন।

কারাগার সূত্র আরও জানায়, কারাগারে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সরকারি আমলারা সবসময় বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। সেটা ক্ষমতা বা অর্থের বিনিময়ে। বিরোধী দল বা ক্ষমতার বাইরে থাকা নেতাকর্মী  এবং সাবেক আমলা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বাড়তি সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। আর তাদেরকে সহায়তা করেন অসাধু কারা সদস্যরা। অনেক ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন করে অর্থের লোভে প্রভাবশালীদের সহায়তা করে থাকের কারা সদস্যরা।

ডিএমপি সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকা পুলিশের সাবেক দুই মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এবং এ কে এম শহিদুল হক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) হেফাজতে রয়েছেন। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা ডিএমপির উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের তদারকিতে। বাহিনীটির প্রভাবশালী এই দুই আইজিপিকে বেশ সতর্কতার সাথে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তাদের শীতাতপ (এসি) নিয়ন্ত্রিত কক্ষে রাখা হয়েছে। খেতে দেয়া হচ্ছে বাড়ি থেকে আসা খাবার।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডের জন্য আদালতে তোলা হলে সবাই অসুস্থার দোহাই দিয়ে জামিন চাচ্ছেন। আইনজীবি মাধ্যমে বা নিজেই কাটগড়ায় দাড়িয়ে বিচারকের কাছে বলছেন আমি অসুস্থ আমাকে দেয়া হোক। ইতিমধ্যে অসুস্থতা জনিত কারণে সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের রিমান্ড শেষ না করেই কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর আগে রাজধানীর আইডিয়াল কলেজের ১ম বর্ষের মেধাবী ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড শেষ না হতেই অসুস্থতার কারণে ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে কারাগারে প্রেরণ করে আদালত।

আরবি/জেডআর

Link copied!