ঢাকা শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪
ঐতিহ্যবাহী ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরি

কর্মচাঞ্চল্যে মুখর কারখানাটি এখন নীরব-নিথর!

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৪, ১১:১২ এএম

কর্মচাঞ্চল্যে মুখর কারখানাটি এখন নীরব-নিথর!

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রায় দুই দশক পূর্বে রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর তীরঘেঁষা ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ছিল কর্মচাঞ্চল্যে মুখর। তবে ২০০৫ সালে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় হাজার কোটি টাকা মূল্যের বিশাল এই শিল্পকারখানা। আর দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে বন্ধ থাকায় কারখানাটির বেশির ভাগ মূল্যবান যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে গেছে। বাকিগুলো মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিছু যন্ত্রপাতি চুরিও হয়ে গেছে। চালুর উদ্যোগ না নেওয়ায় এভাবে ধ্বংসের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরি।

গত ২৬ আগস্ট সরেজমিনে দেখা যায়, কদমতলী-শ্যামপুর এলাকায় এক সময়ের কর্মচাঞ্চল্য মুখরিত ম্যাচ ফ্যাক্টরিটি তার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে প্রতিষ্ঠানটি।

পুরোনো স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষের মধ্যেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি বড় কাঠামোর ঘরগুলো। সেখানে রয়েছে দামি যন্ত্রপাতি। যা মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু ভবনের ছাদ ধসে পড়েছে, টিনের ছাউনি ভেঙে পড়ছে। ভবন-দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে।

দেয়ালগুলোতে গজিয়েছে বট-বৃক্ষসহ নানা ধরনের গাছ। পুরো ফ্যাক্টরি যেন এক ভৌতিক দৃশ্যের গা-ছম ছম করা এক বিশাল ধ্বংসস্তূপ।  

১৪ জন নিরাপত্তাকর্মী থাকলেও বিশাল এরিয়ার দেয়াল টপকে কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে চুরির চেষ্টা, মাদক সেবনের চেষ্টা হয় মাঝে মাঝে। কারখানাটি প্রধান সড়কের পাশেই অবস্থিত। ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরির পাশ দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর দিয়ে সরু একটি রাস্তা করা হয়েছে। যে রাস্তাটি ফ্যাক্টরিকে অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ করেছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

নিরাপত্তাকর্মী শাহাব উদ্দিন জানান, আমরা ১৪ জন দিনরাত পালাক্রমে ডিউটি করি। রাতে লাইট জ্বলে। নানা ধরনের ঝুঁকির মধ্যেই আমাদের পাহারা দিতে হয়। রাতে দেয়াল টপকে ভেতরে চোর ঢুকে বিভিন্ন রুমে থাকা মেশিনারিজ, লোহার জিনিসপত্র চুরি করতে আসে। কয়েকবার ধরাও পড়েছে, কিন্তু থামানো যায়নি। রাত নামলেই বিভিন্ন কায়দায় চুরির জন্য ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। তবে, সর্বক্ষণ পাহারা থাকায় তারা চুরি করতে সক্ষম হয়নি।

তিনি বলেন, এই কারখানাতে একসময় শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্যে মুখরিত ছিল। কিন্তু এটি এখন নীরব-নিথর। সরকারের উচিত কারখানাটি খুব দ্রুত চালু করে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। বর্তমানে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ আমরা নিরাপত্তারক্ষী মোট ১৭ জন কর্মী আছি। আমাদের বেতন ‘ভাইয়া গ্রুপ’ এর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়।

সরকারি নির্দেশনা কার্যকর না হওয়া, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতা ও সিন্ধান্তহীনতায় একসময়ের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাচ (দেশলাই) কারখানাটির এমন করুণ হাল বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাদের দাবি, যেহেতু বর্তমানে ম্যাচ বা দেশলাইয়ের তেমন কদর নেই, তাই প্রায় ৪৪ বিঘা জমির ওপর যুগোপযোগী ও আধুনিক মানের একটি জেটি নির্মাণ কিংবা শিল্প পার্ক করা হোক। এ ক্ষেত্রে সরকারি তরফ থেকে বেসরকারি কোম্পানির কাছে দ্রুত কারখানাটি হস্তান্তর ও চালু করার ব্যাপারে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে বেশির ভাগ অংশের মালিক কোম্পানির কাছে পুরোটা শেয়ার ছেড়ে দেওয়া উচিত। নতুন আঙ্গিকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু হলে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বিশাল পতিত জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হলে ভূমিকা রাখবে দেশের অর্থনীতিতে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা ম্যাচ ও দাদা ম্যাচ নামের ফ্যাক্টরি বা কারখানা দুটি ঢাকা ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৪ সালে বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতির আওতায় এটি করা হয়। এই কোম্পানির ৭০ শতাংশের মালিকানা দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী ভাইয়া গ্রুপের। আর বাকি ৩০ শতাংশের মালিকানা শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি)।

আরবি/এফআই

Link copied!