ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

জীবনসঙ্গীর খোঁজে ৩ মহাসাগর পাড়ি দিয়েছে যে তিমি

হাসান মাহমুদ, ঢাকা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪, ০৮:০৩ পিএম

জীবনসঙ্গীর খোঁজে ৩ মহাসাগর পাড়ি দিয়েছে যে তিমি

ফাইল ছবি

প্রাণীদের একে অপরের জন্য ভালোবাসার অনেক নজির দেখা যায়। একসঙ্গে থাকে, একসঙ্গে ঘোরাফেরা করে। কিন্তু মনের মতো সঙ্গী খুঁজে পেতে তিন মহাসাগর বা ১৩ হাজার ৪৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার নজির মনে হয় বিরল।

২০১৩ সালে প্রশান্ত মহাসাগরের ভেসে উঠেছিল এক বিশালাকার পুরুষ তিমি। তার পর অতিবাহিত হয়েছে ৯টি বছর। সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে সেই পুরুষ তিমি ২০২২ সালে পৌছায় ভারত মহাসাগরে। এত দূর আসার একটিই কারণ, সেটা হলো ভালবাসার জীবনসঙ্গীকে খুঁজে বের করা।

তিমি বিশেষজ্ঞদের দাবি, ২০১৩ সালে কলম্বিয়ার উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে এক বিশাল তিমির দেখা পাওয়া যায়। এটি হাম্পব্যাক প্রজাতির পুরুষ তিমি। সেই সময় ওই মুহূর্তে ক্যামেরাবন্দি করে রাখা হয়েছিল।

২০১৩ সালের পর পুরুষ তিমিটি প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে ভারত মহাসাগরে গিয়ে পৌছায়। ৯ বছর পর আবার দেখা পাওয়া যায় হাম্পব্যাক তিমির।

২০২২ সালে আফ্রিকার জ়ানজ়িবার এলাকায় দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগরে পুরুষ প্রজাতির হাম্পব্যাক তিমির দেখা বোঝা যায় যে, ৯ বছর আগে যে তিমির দেখা পাওয়া গিয়েছিল তা ভারত মহাসাগরের অতল গভীরে সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে।

গবেষকেরা জানান, ৯ বছরের মধ্যে পুরুষ তিমিটি মোট ৮ হাজার ১০৫ মাইল অর্থাৎ ১৩ হাজার ৪৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে নজির গড়ে তুলেছে।

৯০ দশকে এমনই এক ঘটনার সাক্ষী ছিলেন তিমি বিশেষজ্ঞেরা। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে হাম্পব্যাক প্রজাতির এক স্ত্রী তিমির চলাফেরা লক্ষ করছিলেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, স্ত্রী তিমিটি ব্রাজ়িল থেকে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে মাদাগাস্কার চলে গিয়েছে। তিমিটি ৬ হাজার ১০০ মাইল অর্থাৎ ৯ হাজার ৮১৭ কিলোমিটার পথ সাঁতার কেটেছে।

২০২২ সালে ১৩ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আসা পুরুষ তিমিটি স্ত্রী তিমির সব নজির ভেঙে নতুন মাইলফলক তৈরি করে। কিন্তু এত পথ পেরিয়ে আসার কারণ কী?

অস্ট্রেলিয়ার সাদার্ন ক্রস ইউনিভার্সিটির গবেষক টেড চেসম্যানের মতে, হাম্পব্যাক প্রজাতির তিমি মনের মতো জীবনসঙ্গী খুঁজে বেড়ায় বলেই এত পথ সাঁতার কেটে পার হয়ে যায়। পথে অন্য ধরনের তিমির প্রজাতির সঙ্গে সাক্ষাৎ হলেও তাদের সঙ্গে মেলামেশা করে হাম্পব্যাক প্রজাতির তিমি। যেন বংশবিস্তার করাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।

সাঁতার কাটার পথে একাধিক স্ত্রী তিমির সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হলেও পুরুষ তিমির লক্ষ্য জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া। তাই সে মাইলের পর মাইল অতিক্রম করতে পারে।

আবার তিমি বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, শুধুমাত্র বংশবিস্তার করাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য না-ও হতে পারে। হাম্পব্যাক তিমি বাসস্থান বদলের জন্যও অন্য জায়গায় যেতে পারে।

সাধারণত প্রতি বছর তিমিরা নিজেদের পূর্ব বাসস্থান ছেড়ে উত্তর অথবা দক্ষিণ দিকে সর্বাধিক ৮ হাজার কিলোমিটার পথ সাঁতার কেটে যেতে পারে। তবে পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে তাদের যাতায়াত বিশেষ লক্ষ করা যায় না।

গবেষণা থেকে জানা যায়, পরিবেশগত পরিবর্তনের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং খাদ্যের প্রাচুর্যের মতো বিভিন্ন কারণেই তিমি সমুদ্রে পাড়ি দিতে পারে।

আরবি/ এইচএম

Link copied!