বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষে (বেবিচক) স্বেচ্ছাচারিতার রাজত্ব চলছে। বিশেষ করে পট পরিবর্তনের পর এ অবস্থা প্রকট হয়েছে। বদলি, পদায়ন, পদোন্নতি-কোথাও কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা নেই। সব বিভাগেই তৈরি হচ্ছে স্বেচ্ছাচারিতার উদাহরণ।
কাউকে বদলি করা হচ্ছে, তিনি যাচ্ছেন না আবার কারো কারো বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাদের স্পর্শ পর্যন্ত করা হচ্ছে না। এমনকি পতিত সরকারের ঘনিষ্ঠরা এবং দুদকের মামলার অভিযুক্তরাও থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবার দুদকে মামলা অনুসন্ধান চলা অবস্থায় থাকলেও অবলীলায় পদোন্নতি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কাউকে কাউকে প্রাইজ পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে। এমন একের পর এক অসংখ্য বাজে নজির তৈরি হচ্ছে বেবিচকে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, গোটা বেবিচক জুড়ে চেইন অব কমান্ড নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে সেখানে বিরাজ করছে চরম অরাজকতা।
রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বলা নেই কওয়া নেই সদস্য (প্ল্যানিং অ্যান্ড অপারেশনস) ও সদস্য (ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড রেগুলেশনস) এই দুজনকে প্রত্যাহার করে মাতৃ বিভাগে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অথচ আওয়ামী ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সদস্য (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. মহিউদ্দিন এবং সদস্য (অর্থ) এস এম লাভলু রহমান ঠিকই জেঁকে বসে আছেন। গত চার মাসে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। উলটো তারা গোটা বেবিচককেই নিজেদের কবজায় নিয়ে নিয়েছেন। বলতে গেলে, বেবিচক এখন চলছে এই দুজনের অঙ্গুলি হেলনে। এদিকে নিয়োগ, বদলি ও রিপ্লেসমেন্টে চলছে তদবির এবং টাকার খেলা। খরচ হচ্ছে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, গত ২ ডিসেম্বর সদস্য (নিরাপত্তা) নাঈমুজ্জামানকে বদলি করে বিমান বাহিনীতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রায় পক্ষকাল পেরিয়ে গেলেও তিনি বেবিচকের নিজ আসনে বসে আছেন।
এর আগে সদস্য (অপারেশনস অ্যান্ড প্ল্যানিং) এ এফ এম আতিকুজ্জামানকে বেবিচক থেকে বদলি করা হয়। এরা দুজনই মাতৃ বিভাগে অর্থাৎ বিমান বাহিনীতে ফিরে গেছেন। মজার বিষয়, সদস্য (অর্থ) লাভলু রহমান থার্ড টার্মিনালে ঠিকাদারি কোম্পানির পক্ষে অর্থ ছাড় করানোর জন্য ওকালতি করছেন বলে ব্যাপক চাউর আছে।
এ নিয়ে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে তার হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে বলে শোনা যায়। ‘মি. ফাইভ পার্সেন্ট’খ্যাত এই কর্মকর্তাকে বেবিচক থেকে বদলি না করে তাকে উলটো পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত সচিব করা হয়েছে। বেবিচক ঠিকাদাররা তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ঠিকাদাররা তার বদলি দাবি করছেন।
নতুন প্রধান প্রকৌশলী দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রকৌশল বিভাগে কিছুটা রদবদল করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেক ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছেন। অর্থাৎ ফিরেছেন বেবিচকে। ওদিকে সহকারী প্রকৌশলী (ইএম) এনামুল কবীরকে যশোর বিমানবন্দরে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু যশোর না যাওয়ার জন্য তিনি দিন-রাত তদবির করে বেড়াচ্ছেন বলে জানা যায়।
আপনার মতামত লিখুন :