আওয়ামী সরকারের আমলে পাঁচ বছরে ৩৬টি কোম্পানির পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯টি খারাপ অবস্থানে রয়েছে। এই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ইস্যুয়ার কোম্পানিগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
দেশের শীর্ষ ইস্যু ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে কমিশন। ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া দুর্বল কোম্পানি ও ইস্যু ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। শীর্ষ ইস্যু ব্যবস্থাপনা কোম্পানির মধ্যে রয়েছে লংকা বাংলা, আইডিএলসি ও আইসিবি।
বৃহৎ কোম্পানিগুলো আইপিওতে আসার সময় মুনাফা এবং গ্রোথ ছিল আশাব্যঞ্জক। তালিকাভুক্তির পর কোম্পানির শেয়ারপ্রতি দর ও মুনাফা কমতে শুরু করে। তার মধ্যে অধিকাংশ কোম্পানির বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে মূল্যায়িত হওয়া দর কাট অব প্রাইসের নিচে রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সেই কোম্পানিগুলোর শেয়ারপ্রতি দর নিয়ে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরিবর্তিত কমিশন ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩৬ কোম্পানির মধ্যে মূল্যায়ন অতি দুর্বল ৯টি কোম্পানিকে অতি দুর্বল হিসেবে আখ্যাহিত করেন।
তবে কোন কোন কোম্পানি তালিকায় রয়েছে, তা প্রকাশ করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এসব কোম্পানির আমলনামা আজ মঙ্গলবার এফআইডি প্রতিনিধিদলের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে বিশেষ সূত্র জানিয়েছে।
আইপিও ইস্যু ব্যবস্থাপকগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল বলেন, আমরা একটি তালিকা প্রস্তুত করছি। পাঁচ বছরে ৩৬টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে, তার মধ্যে ৯টির অবস্থা খারাপ। এসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করেছে দেশের শীর্ষ ইস্যু কোম্পানিগুলো।
তিনি রূপালী বাংলাদেশকে গতকাল আরও বলেন, কোম্পানি এবং আইপিও ইস্যুয়ার কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না নিলেও কী ধরনের ব্যবস্থা, তা নির্ধারণের এখনো সময় হয়নি। আপাতত আমরা তালিকা করেছি।
দেশের শীর্ষ ইস্যু ব্যবস্থাপক কোম্পানিগুলোর একটি আইডিএলসি। বৃহৎ কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আনার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। সেই প্রতিষ্ঠানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান গতকাল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এখানে দুই ধরনের সময় এবং প্রেক্ষাপট আলাদা। সেই সময়ে কোম্পানিগুলোর মুনাফার রেস এবং বর্তমান সময়ে এক নয়। কেন নয় এবং ব্যর্থতা কার বা কোথায় এটা ইস্যুয়ার কোম্পানির বিষয় নয়।
শাস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করেই তো ব্যবস্থা নেবে। এখানে আমাদের ব্যর্থতা থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে বলেন তিনি। এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সচেতনতামূলক কর্মশালায় গতকাল ঢাকা ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, গত ১৫ বছরে পুঁজিবাজারে অনেক নিম্নমানের আইপিও এসেছে। যা পুঁজিবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ জন্য নিম্নমানের আইপিও বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করা হয়েছে। যেটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সাভারের আর্মি ইনস্টিটটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য সচেতনতামূলক কর্মশালায় তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কখন, কোথায় এবং কেন বিনিয়োগ করবেন তা জানা প্রয়োজন। এ জন্য বিনিয়োগ শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইমোশনাল হয়ে বিনিয়োগ করা যাবে না। এ ছাড়া কোম্পানির পারফরম্যান্স ও উদ্যোক্তা, পরিচালক দেখে শেয়ারের দাম যখন কম থাকে তখন বিনিয়োগ করতে হবে বলেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :