ঢাকা বুধবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫

অঢেল সম্পদের মালিক বিআরটিএ কর্মকর্তা সুনীল

মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৪, ০১:৩৮ এএম

অঢেল সম্পদের মালিক বিআরটিএ কর্মকর্তা সুনীল

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

অবৈধভাবে অঢেল সম্পদের মালিক উত্তরা বিআরটিএর রাজস্ব কর্মকর্তা সুনীল চন্দ্র দাস। বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো সার্কেল-৩, দিয়াবাড়ী, উত্তরায় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত সুনীল। তিনি অবৈধ ঘুষ বাণিজ্য, দালাল নিয়োগ করে প্রতিদিন অসংখ্য টাকা হাতিয়ে নিয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। গড়েছেন নামে-বেনামে জমি, কিনেছেন ফ্ল্যাট ও প্লট। এসব সম্পদের অধিকাংশই তার স্ত্রী চন্দনা দাসের নামে রয়েছে। এসব অভিযোগের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে বেশ কিছু সত্যতাও পাওয়া গেছে, যার প্রমাণ রূপালী বাংলাদেশের হাতে এসেছে। তবে এসব বিষয়ে সুনীল চন্দ্র দাসের দাবি, তিনি এসব সম্পদ বৈধ পথে করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা মিথ্যা। 


সূত্র জানায়, সুনীল চন্দ্র দাস বিআরটিএতে দালাল নিয়োগ করে তাদের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত গাড়ি ফিটনেসসহ যাবতীয় কাজ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এ ছাড়া তিনি নিজেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী ব্যক্তি হিসেবে অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছে পরিচয় দেন। তবে বিআরটিএর সবার মুখে মুখে তার এই পিএইচডি ডিগ্রির নামটা শোনা যায়। অনেকেই তাকে পিএইচডি সুনীল ও ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ সুনীল হিসেবে চেনেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ উঠেছে। 


সূত্র জানায়, সুনীলের চাকরির শুরুতে তেমন কিছু ছিল না, হঠাৎ করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যান। অবৈধ পথে গড়ে তোলেন লাখ লাখ টাকা। তিনি এলাকার কাউকে পরোয়া করেন না। অফিস সময় শেষেও তদবির বাণিজ্যে লিপ্ত থাকেন এমন অসংখ্য অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। সুনীল তার অফিসের উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। তার অপকর্মের কেউ প্রতিবাদ করছেন না। তথ্যমতে জানা যায়, সুনীলের পিতার নাম মৃত রামেস চন্দ্র দাস, মাতা নামাহরি প্রিয়া রানী দাস, স্ত্রী চন্দনা দাস। সুনীল চন্দ্র দাসের টিন নং-৫৭৫৬১২৪৫৮৪৪৭, কর সার্কেল-৮৫, কর অঞ্চল-০৪, ঢাকা। সুনিল চন্দ্র দাস বর্তমানে ৩৯০/২/১, পশ্চিম রামপুরার বাসায় বসবাস করেন। 


অনুসন্ধানে জানা যায়, বাড়ি নং-৪৫, মধুপুরী, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। এই বাড়িও সুনীল চন্দ্র দাসের। তার স্ত্রী চন্দনা দাসের টিন নং-২৫৮০৭৫৭৭২৪৯৯। সুনীল চন্দ্র দাস তার স্ত্রী চন্দনা দাসের নামে বিলাসবহুল আলিশান একটি ফ্ল্যাট কেনেন ঢাকার ডেমরার থানার কোনাপাড়ায়। সুনীল চন্দ্র দাস ২৪ পরগণায় ঘুষের টাকা দিয়ে দুটি বাড়ি কিনেছেন।  এদিকে অভিযোগ রয়েছে, সুনীল আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার প্রভাবে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা অনেক হয়রানির শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। তথ্যমতে, সুনীলের উল্লেখযোগ্য বাড়ি ও সম্পত্তি রয়েছে, বাসা ২৭ রোড ০৫, ধানমন্ডি আবাসিক এরিয়া, ঢাকা। ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজারমূল্য ৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। 


এ ছাড়া প্লট নং-১১ রোড-৪১১, সেক্টর-১০, পূর্বাচল আবাসিক এরিয়া, ঢাকা। উক্ত প্লটটি তার স্ত্রীকে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে কিনে দেন। বাসা নং-১৫, রোড নং-৩, সেক্টর ১৫, উত্তরা, ঢাকা ১২৩০, ৪ কোটি টাকা দিয়ে কেনেন। বাসা নং-৭৭, রোড ০৫, বসিলা মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭ বাড়িটি ১০ কাঠা জমির ওপর সাততলা ভবন নির্মাণ করেছেন কোটি টাকা ব্যয় করে। প্লট নং-৯/২ রোড নং-৭, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। এই বাড়ির  চতুর্থ তলায় ২৮০০ স্কয়ার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছেন ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা মূল্যে। সাভারের মধুমতি আবাসিক সিটির উল্টো দিকে ২০ বিঘা সম্পত্তি কিনে শতকোটি টাকা ব্যয় করেন। এ ছাড়া নামে-বেনামে তার কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে।


অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুনীল চন্দ্র দাস রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার কোনো সম্পত্তি নেই। এসব অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আমার স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে ডেমরায়, তাও পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে কেনা। আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগে। আপনি দালাল নিয়োগ দিয়ে বিআরটিএর সব কাজ করেন এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কোনো দালাল নেই। আর আমি কাউকে সহযোগিতাও করি না।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!