গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন সরকার ফ্যাসিবাদের সহযোগী থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও এখনো বহাল রয়েছেন। অভিযোগ আছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ ও লোপাট করেছেন। এ ছাড়া শুধু প্রকল্পের দুর্নীতির নয়, উন্নয়নের নামে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতির মাধ্যমে জাল, নথি গায়েবসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে রূপালী বাংলাদেশের এক অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। যার বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণও পাওয়া গেছে।
অভিযোগ আছে, কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন সরকার চার বছরে ফ্যাসিস্টের সহযোগী হিসেবে কাজ করে অবৈধ পথে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তা ছাড়া এক জায়গায় তিনি চার বছরের বেশি সময় ধরে মধু খাচ্ছেন। তার বদলির আদেশ হলেও ছাড়পত্র নেননি। ফ্যাসিবাদের সহযোগী হয়েও তিনি বর্তমানে বিএনপির কিছু অসাধু নেতাকে টাকা-পয়সা দিয়ে আগের মতো বহাল রয়েছেন।
সূত্র জানায়, প্রায় চার বছরের বেশি সময় কালীগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্ব পালনের পর বদলির আদেশ হলেও প্রকৌশলী বেলাল আরো কিছুদিন চেয়ার আঁকড়ে ধরে কালীগঞ্জে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। অপরদিকে নতুন সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ইশতিয়াক আহমেদ কর্মস্থলের দায়িত্ব বুঝে না পেয়ে অপেক্ষমাণ রয়েছেন। জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার নতুন সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ইশতিয়াক আহমেদ বর্তমানে এলজিইডির গাজীপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে যোগদান করে কালীগঞ্জের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছেন। ইশতিয়াক আহমেদ সর্বশেষ মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষ করে কালীগঞ্জে যোগদানের অপেক্ষায় ঝুলে রয়েছেন।
বদলি চাঁদপুরে হলেও অফিস করছেন কালীগঞ্জে : সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ মার্চ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আলি আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই দিন পৃথক এক আদেশে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী বেলাল সরকারকে চাঁদপুর সদরে বদলি করা হলেও তিনি এখন পর্যন্ত কালীগঞ্জেই বহাল রয়েছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে তদবির করে মোটা টাকা দিয়ে তিনি কালীগঞ্জে থাকার জন্য চেষ্টায় আছেন।
জানা গেছে, বেলাল হোসেন সরকার ২০২০ সালের ৫ মার্চ কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। এর পর থেকে তিনি টানা চার বছর এক মাসের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্বরত অবস্থায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি এবং সিন্ডিকেট করে কতিপয় অসাধু ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এমন বেশ কিছু অভিযোগ নিয়ে ইতিপূর্বে একাধিকবার আলোচনা-সমালোচনায় ছিলেন প্রকৌশলী বেলাল।
সূত্রে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ওঠায় তদন্তের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশল (চদা) মোহাম্মদ রেজাউল করিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালের ১০ জুলাই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজাউল করিম সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
এসব বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান বলেছেন, উপজেলা প্রকৌশলীর বদলির আদেশ আছে। তবে তার কিছু পেন্ডিং কাজ বাকি। বেলাল হোসেন সব কিছু বুঝিয়ে দিলেই আমাদের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ইশতিয়াক আহমেদ যোগদান করবেন।
প্রকৌশলী বেলালের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগে বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নতুন নতুন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ ও লোপাট করেছেন তিনি। এ ছাড়া শুধু প্রকল্পের দুর্নীতি নয়, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতির মাধ্যমে জাল, নথি গায়েবসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সেবাগ্রহীতাদের ঘুষ হিসেবে অনেক টাকা দিয়ে কথা বলতে হয় তার সাথে।
সেবাগ্রহীতারা অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করেও হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। এর সঙ্গে রয়েছে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ। সম্প্রতি দুদকের একাধিক টিম এসব অভিযোগের অনুসন্ধান-তদন্ত করছে। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এ সংক্রান্ত বেশ কিছু নথিপত্র নিয়ে কাজ করছে সংস্থাটি। অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন সরকার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি মোবাইল ফোনে কথা বলি না। সরাসরি অফিসে আসেন কথা হবে, চায়ের আড্ডা হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :