রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা থেকে পালানো সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে অভিযানে নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য ইতিমধ্যে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এদিকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ওই ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিবুল্লাহ। এছাড়া একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আইনশৃৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্মকর্তারা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশ কর্মকর্তা শাহ আলম ছাত্রজনতার ওপর গুলি চালান। তিনি খুনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রওনক জাহান রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ওসি শাহ আলম ছাত্রজনতার ওপর সরাসরি গুলির করেছেন, সেই অপরাধে তাকে ধরা হয়। তাকে ধরতে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য সারা দেশে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ যৌথ অভিযানে নেমেছে।
জানা যায়, এর আগে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) উত্তরা পূর্ব থানার ওসির কক্ষ থেকে পালিয়ে যান শাহ আলম। হত্যা মামলার আসামি শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে হাজতখানায় না রেখে ওসির কক্ষে রাখা হয়। এরপর সেখান থেকে পুলিশ সদস্যের অবহেলার কারণে তিনি পালাতে সক্ষম হন।
থানা-পুলিশের সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় একটি মামলায় উত্তরা পূর্ব থানার ওসি শাহ আলমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি ছিলেন শাহ আলম। এরপরও গত ১ আগস্ট উত্তরা পূর্ব থানায় যোগদান করেন।
সর্বশেষ তিনি ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে পরিদর্শক কুষ্টিয়ায় কর্মরত ছিলেন। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া একাধিক হত্যা মামলায় আসামি ছিলেন তিনি। পরে মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আদালতে সোপর্দের প্রক্রিয়া চলাকালীন তিনি কৌশলে পালিয়ে যান। তবে এর সঙ্গে থানা-পুলিশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।
এ বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ছাত্রজনতার আন্দোলনের সময় গত ২ সেপ্টেম্বর শাহ আলমের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়। ওই মামলায় বুধবার তাকে আটক করা হয়। তাকে আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়ার সময় তিনি পালিয়ে যান। এরপর থেকে ধরতে যৌথ বাহিনী একত্রিত হয়ে অভিযানে নামে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে দায়িত্বরত একজন সহকারী উপপরিদর্শককে (এএসআই) সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, থানা থেকে একজন হত্যা মামলার আসামি কীভাবে পালিয়ে যায়, সেটা আমার বোধগম্য নয়। থানা-পুলিশ এর দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।
আসামি যেহেতু পুলিশের সাবেক একজন সদস্য, তার জন্য আলাদা নিরাপত্তার দরকার ছিল। সে অবশ্যই কৌশলী হবে এটা স্বাভাবিক। বর্তমান ওসির রুমে তাকে রাখার মানে হয় না। অবশ্যই পুলিশের কেউ না কেউ এর সঙ্গে জড়িত। পুলিশ বাহিনীর এই ক্রান্তিকালে যে ঘটনাটি ঘটাল, এতে করে পুলিশ আরও ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রশ্নের মুখে পড়ল বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা থেকে পালানো সাবেক ওসি শাহ আলমকে গ্রেপ্তারের জন্য সারা দেশে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। আশা করি খুব কম সময়ের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে পুলিশ।
আপনার মতামত লিখুন :