রাজধানী উত্তরার পূর্ব ফায়দাবাদ বালুর মাঠ রোডে ২১১৫ নম্বর স্বপ্ন বিলাস নামে আটতলা ভবনের মালিক আলামিন। রাজউকের নকশাবহির্ভূত ও অনুমোদহীন এই বাড়ির বর্তমান দাম প্রায় ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অথচ বিগত সরকার ক্ষমতায় আসার আগে আলামিন ছিলেন একজন গার্মেন্টস কর্মী। কোথায় পেলেন এমন আলাদিনের চেরাগ?
অনুসন্ধানে কেঁচো খুঁড়তে যেন সাপ বেরিয়ে আসছে। ঢাকা উত্তর ডিএনসিসি ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোতালেবের ছেলে হেলালের সঙ্গে ছিল তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এলাকার অনেকের ধারণা, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ছেলের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে আলামিন কোটি টাকার মালিক। সূত্র বলছে, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ক্ষমতাবলেই আলামিন আজ প্রতিষ্ঠিত এবং অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার মালিক। আলামিনের আছে গার্মেন্টসের ব্যবসা। কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কোনো কাগজপত্র ছাড়াই আবাসিক ভবনের মধ্যে নির্মাণ করেছেন গার্মেন্টসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আলামিনের গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ন্যূনতম ট্রেড লাইসেন্সটি দেখাতে সক্ষম হননি।
এ বিষয়ে উত্তরা রাজউক ইন্সপেক্টর মেহেদির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত। পূর্বে কীভাবে কেমন করে কী করেছে, তা আমার জানা নেই। আবাসিক ভবনে গার্মেন্টসের অনুমোদন আমরা কখনোই দিতে পারি না। তার সমস্ত কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে এবং অফিসে তাকে তলব করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা খুব গুরুত্বসহকারে দেখছি এবং খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এই আলামিনের রয়েছে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন সাবেক কাউন্সিলর মোতালেবের ছেলে হেলাল। বাহিনীর সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন নাজমুল ও থাই সুমন। নাজমুল ও থাই সুমনকে ব্যবহার করে উত্তরা ট্রান্সমিটার এলাকায় আলামিন গড়ে তুলেছেন নিজস্ব বাহিনী এবং নিজস্ব সাম্রাজ্য। বর্তমানে হেলাল ও নাজমুলকে খুঁজছে পুলিশ। যৌথ বাহিনীর অভিযানে তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দক্ষিণখান থানার ওসি মোহাম্মদ তাইফুর রহমান মির্জা বলেন, ‘কাউন্সিলর মোতালেবসহ তার বাহিনীর অনেককেই খোঁজা হচ্ছে, কিন্তু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সঠিক তথ্য-প্রমাণ পেলেই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আমরা দেখছি।’ এ বিষয়ে থাই সুমনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী নন।
জানা গেছে, আলামিন নিজ পিতার নামে বানিয়েছেন একটি এতিমখানা। তার পিতা আজগর আলীর নামেই এতিমখানাটি পরিচিত। কিন্তু এতিমখানার এতিমকে দিয়ে তিনি বিভিন্ন স্থানে অর্থ তোলার দায়িত্ব পালন করান। নিজের পকেট ভরে সামান্য কিছু অর্থ তাদের পেছনে ব্যয় করেন, এমনটাই অভিযোগ লাল মসজিদের সামনে বসবাসকারী এক বাসিন্দার। ওয়াক্্ফকৃত সম্পত্তি যা ক্রয়-বিক্রয় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আলামিন মসজিদের নামে সেই ওয়াক্্ফকৃত সম্পত্তি নিজ সম্পত্তি বলে রিমি আক্তার ও তার ছেলে আবরার আহসানের কাছে বিক্রি করেন।
এ বিষয়ে রিমি আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের নামে এক কাঠা ৯০ পয়েন্ট জায়গা ক্রয় করা হয়। এক কাঠা জায়গার দলিল আলামিন ব্যবস্থা করে দিলেও ৯০ পয়েন্টের এখনো দলিল হয়নি। না দলিল দিচ্ছে, না বর্তমান মূল দিচ্ছে; দিনের পর দিন শুধু ঘোরাচ্ছে এই প্রতারক আলামিন।’ এ বিষয়ে আলামিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার সাথে দেখা করেন, দুই ভাই বসে একসাথে চা খেতে খেতে কথা বলি।’ পরে শুধু বিষয়বস্তু নিয়ে তার কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা যেই সমস্যার কথা বললেন, তা আমি সমাধান করে দেব, কিন্তু এখন আপনারা আসেন, আমরা একসাথে চা খাই।’
আলামিন নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন তার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিটি সম্পূর্ণ অবৈধ। স্বীকার করেছেন তিনি ঠিকমতো বুঝতে পারেন নাই, তাই রাজউকের কোনো অনুমোদন নেননি।
আপনার মতামত লিখুন :