ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

চটপটির দোকান খুলতেও ঋণ নেয় এস আলম

মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৫, ০৯:০১ এএম

চটপটির দোকান খুলতেও  ঋণ নেয় এস আলম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চটপটির দোকান ও দুটি রেস্তোরাঁ রয়েছে এমন তথ্য-উপাত্ত দেখিয়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৩টি শাখা থেকে ২৩৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে চট্টগ্রামের নওরোজ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। 

মালিক নাজমি নওরোজ হলেও প্রকৃত অর্থে ঋণের টাকা যায় এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যাংকটির মালিক সাইফুল আলম মাসুদের পকেটে। এমন অনিয়ম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

এস আলমের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই আর্থিক খাতের কেলেঙ্কারির এমন নানা অভিযোগ আসছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের ক্যাশিয়ার ও দোসর হিসেবে পরিচিত ছিলেন সাইফুল আলম মাসুদ। 

একসময় ব্যাংক লোপাটের তথ্য লুকাতে নতুন নতুন মিডিয়া তৈরি করেন তিনি। এসব মিডিয়া এখনো শেখ হাসিনার সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। ইতিমধ্যে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলমসহ তার পরিবারের নামে থাকা ৬৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার আদেশ দেন আদালত। পাশাপাশি তার ১৬টি স্থাবর সম্পত্তি জব্দের (ক্রোক) করা হয়। কর ফাঁকির তদন্ত শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। 

সূত্রে জানা যায়, ইট অ্যান্ড ট্রিট নামের চটপটির দোকানটি নগরীর আসকার দিঘির পাড়ে। এর পাশেই ফিউশন ইটস নামের একটি রেস্তোরাঁ ও অপরটি লা এরিস্টোক্রেসি নামের রেস্তোরাঁটি তিনবার জায়গা বদল করে এখন নগরীর আগ্রাবাদে।

সামান্য ব্যবসার বিপরীতে ২৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে লা এরিস্টোক্রেসি রেস্তোরাঁটির নামে ২ কোটি টাকার ঋণসীমা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নাজমি নওরোজ উত্তোলন করেছেন ৭০ কোটি টাকা, যা সুদ-আসলে ১১৭ কোটি টাকা হয়েছে। 

ওই টাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের আসকার দিঘির পাড়ের মহিলা শাখা থেকে। একই প্রতিষ্ঠানের নামে নগরীর প্রবর্তক মোড়ে অবস্থিত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক শাখা থেকে ৫৪ কোটি টাকা ঋণ উত্তোলন হয়। 

যা সুদে-আসলে ৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা হয়েছে। এর বাইরে ব্যাংকটির চকবাজার শাখা থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ২৭ কোটি টাকা। চকবাজার শাখার পুরো টাকাসহ অন্যান্য ঋণ এস এলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যাংকটির মালিক সাইফুল আলম মাসুদ নিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রামে নওরোজ এন্টারপ্রাইজের একটি চটপটির দোকান ও দুটি রেস্তোরাঁর বিপরীতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২৩৪ কোটি টাকা ব্যাংকঋণ প্রদানে অনিয়মের অভিযোগে নওরোজ এন্টারপ্রাইজের মালিক নাজমি নওরোজ ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। 

এই ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যাংকটির মালিক সাইফুল আলম মাসুদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যায়। এসব অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দোষীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। 

দুদক সূত্র জানায়, জালিয়াতির শীর্ষে থাকায় এস আলমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে অর্থনৈতিক দুর্নীতির তথ্য পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক। জানা যায়, রেস্তোরাঁর নামেও এস আলম ২৩৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে প্রতারণা করেছে এবং দেশে ঋণ জালিয়াতির শীর্ষে এস আলম গ্রুপ অব কোম্পানি। তারা দেশের অর্ধেক অর্থ খেয়ে দিয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এস আলম গ্রুপ অব কোম্পানি খেলাপি ঋণ ও অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি। তারা শেখ হাসিনা সরকারের ক্যাশিয়ার ও দোসর হিসেবে পরিচিত। তারা বাংলাদেশে নতুন নতুন মিডিয়া আনেন এবং সেসব মিডিয়া এখনো শেখ হাসিনার সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। 

জুলাই-আগস্টে ওইসব মিডিয়া ছাত্র-জনতার বিপক্ষে ছিল। পরে ভোল পাল্টিয়ে থাকলেও বর্তমান সময়ে এস আলমের প্রতিষ্ঠিত মিডিয়াগুলো এখনো দোসরদের পক্ষে কাজ করছে। এস আলম গ্রুপ অব কোম্পানি বাংলাদেশের সব অর্থনৈতিক খাত নিয়ন্ত্রণ করেন এবং তাদের মিডিয়া মাফিয়া বলা হয়। তারা অর্থ খাত লুটপাটের জন্য মিডিয়ার জন্ম দেয়। এবং এসব কাজে তারা মিডিয়া ব্যবহার করে।

এস আলমের পরিবারের ৬৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ, সম্পদ জব্দের আদেশ দেন আদালত: এর আগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলমসহ তার পরিবারের নামে থাকা ৬৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার আদেশ দেন আদালত। পাশাপাশি তার ১৬টি স্থাবর সম্পত্তি জব্দের (ক্রোক) করা হয়। 

জানা যায়, দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। 

আদালতে সম্পদ ক্রোকের আবেদনকারী  দুদকের উপপরিচালক সিফফাত উদ্দীন জানান, দুদকের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। পরে বিচারক দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন। 

জব্দকৃত ১৬টি সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে- গুলশানের এস আলম টাওয়ার নামে ১০ তলা ভবন, ধানমন্ডিতে এক বিঘা জমিসহ ৬ তলা ভবন, ধানমন্ডি লেক সার্কাসে ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ জমিসহ ৪ তলা ভবন, গুলশানের ২৬৫৮ বর্গফুট জমির ওপর নির্মিত ফ্ল্যাট, গুলশান ২-এর প্লট দশমিক ৭৮৮৮ একর জমি। 

উত্তরা আবাসিক এলাকায় ৭ তলা ভবন, ভাটারায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ১০৩ দশমিক ০৩ কাঠা জমির প্লট, এক দশমিক ৭২০০ একর জমি, ৯৬ কাঠার জমি, ১ দশমিক ৯৫৩৬ একর জমি, ১১ দশমিক ১০৬১ বিঘা, ১৩১ দশমিক ০৪ কাঠা জমি।

এস আলম গ্রুপের তথ্য নিয়ে কাজ করছে গোয়েন্দা সংস্থা: এদিকে বেশ কিছুদিন আগে এস আলম গ্রুপের তথ্য চায় সিঙ্গাপুরের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ)। 

বাংলাদেশের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ এবং এর মালিকদের দেশে-বিদেশে থাকা সম্পদের বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়। 

বিএফআইইউ-এর তদন্তকারী কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য জানান। সূত্র জানায়, একটি বৈঠকে বিএফআইইউ কর্মকর্তারা বলছেন, সিঙ্গাপুরের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। 

সম্প্রতি গণমাধ্যমে কিছু প্রতিবেদনের পর সিঙ্গাপুরসহ এস আলম গ্রুপের বিদেশি সম্পদ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। এস আলম গ্রুপ বাংলাদেশের ছয়টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর এসব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হারায় তারা।

বাঁচার জন্য কাজের মেয়ে মর্জিনার হিসাবে ১৬ কোটি টাকা ছিল কেন? তাহলে তাদের কত: বিতর্কিত ব্যবসায়ীগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। গ্রুপটির কর্ণধার মো. সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্য এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন সময়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ জমা হয়েছে।

এর মধ্যে কেবল সাইফুল আলমের গৃহকর্মীর ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১৬ কোটি টাকা জমা হওয়ার তথ্য মিলেছে। এ ছাড়া গ্রুপটির চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের পরিবারের সদস্য ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা ছয়টি ব্যাংকের হিসাবে এক লাখ ৮০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা জমা হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। 

বিগত পাঁচ বছরের হিসাব পর্যালোচনা করে ওই লেনদেনের তথ্য পেয়েছে এনবিআরের কর অঞ্চল-১৫। হিসাবগুলোর সর্বশেষ স্থিতিতে মিলেছে ৩২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। যেখানে গত ৩০ জুন পর্যন্ত ছয় হাজার ৮০০ কোটি টাকা জমা ছিল। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

এনবিআরের আওতাধীন কর অঞ্চল-১৫ এস আলম গ্রুপের আর্থিক লেনদেন ও কর ফাঁকির বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। কর অঞ্চলটির অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত এস আলম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও মালিকদের নামে ৬৫টি আয়কর নথির অস্তিত্ব মিলেছে। যার যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান। 

এনবিআর সূত্র বলছে, ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের মাধ্যমে হিসাবগুলো পরিচালিত হতো। এর মধ্যে পাঁচটি ব্যাংক ছিল এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর অঞ্চল-১৫-এর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গত পাঁচ বছরের তথ্য যাচাই-বাছাই করে ঋণ ও বিক্রির অর্থসহ ব্যাংকগুলোতে এখন পর্যন্ত তাদের এক লাখ ৮০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা জমার সন্ধান মিলেছে। আমরা ওই অর্থের বিপরীতে সরকারি ফান্ডে প্রদত্ত কর পরিশোধ হয়েছে কি না, তা যাচাই করছি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য টাকা যেন বেহাত না হয়ে যায়। 

এ বিষয়ে ট্যাক্স জোন-১৫-এর কমিশনার আহসান হাবিব বলেছেন, এস আলমের পরিবারের সদস্য ও গ্রুপের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান। আমাদের আওতাধীন সব হিসাব যাচাই করা হচ্ছে। কর ফাঁকির বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। 

এস আলমের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক: জানা যায়, সাইফুল আলম আওয়ামী লীগ সরকারের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। 

সাধারণত বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও গ্রুপটি কোনো নিয়মনীতি মানেনি। প্রতিষ্ঠানটি এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১২ হাজার কোটি টাকা পাচার করার মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছে। 

গত এক দশকে সিঙ্গাপুরে এস আলম অন্তত দুটি হোটেল, দুটি বাড়ি, একটি বাণিজ্যিক স্পেস এবং অন্যান্য সম্পদ গড়েছেন। সেখানেও বিভিন্ন উপায়ে কাগজপত্র থেকে তাদের নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে। 

২০১৬ সালে সিঙ্গাপুরের ১৯ তলাবিশিষ্ট সেন্ট্রিয়াম স্কয়ারে ২৭ হাজার বর্গফুটের একটি বাণিজ্যিক স্পেস ১০০ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয় এস আলমের প্রতিষ্ঠান ক্যানালি লজিস্টিক প্রাইভেট লিমিটেড। অধিগ্রহণের এক বছর পর ক্যানালি লজিস্টিক নাম পরিবর্তন করে উইলকিনসন ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড রাখে। 

১৯৮৫ সালে এস আলম গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ দখলে নেয়: ১৯৮৫ সালে সাইফুল আলম এস আলম গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। ধীরে ধীরে এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। 

ব্যবসার পরিধি বাড়াতে নির্মাণসামগ্রী থেকে আবাসন ব্যবসা, টেক্সটাইল থেকে মিডিয়া, আন্তঃনগর বাস থেকে শিপিং, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ থেকে ব্যাংকিং, এমনকি বিমা খাতে রয়েছে তার বিচরণ। এর পর থেকেই এস আলম গ্রুপ ধীরে ধীরে বাংলাদেশ অর্থ খাত দখলে নেন। 

সূত্র বলছে, ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশ থেকে ৪০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে বিনিয়োগের জন্য পাচার করেছে এস আলম গ্রুপ। দুদক ও এনবিআর ছাড়াও বিএফআইইউ এবং সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা গ্রুপটির বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম খুঁজে বের করতে এখনো কাজ করছে।

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা: এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর এস আলম গ্রুপ এবং প্রতিষ্ঠানটির সব সম্পত্তি স্থানান্তর বা বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা রিট দায়ের করা হয়। আইনজীবী মো. রোকনুজ্জামান এ রিট দায়ের করেন। 

এ বিষয়ে আইনজীবী মো. রোকনুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এস আলম গ্রুপের এ পর্যন্ত নেওয়া ঋণের পরিমাণ, সেগুলোর বর্তমান অবস্থা ও দায়, বিদেশে পাচার করা অর্থ ও সব স্থাবর সম্পত্তির তালিকা, সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশনা চাওয়া হয়। 

আদালতের অনুমতি ছাড়া কোম্পানির পরিচালকসহ পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রয়েছে। 

এস আলম গ্রুপের জমি ও সম্পদ না কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়: এদিকে ২৮ আগস্ট এস আলমের দুর্নীতির সার্বিক বিষয় উঠে আসার পর এস আলম গ্রুপ ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের ব্যাংকিং লেনদেন ও ঋণ স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই রাষ্ট্রীয় স্বার্থে এস আলম গ্রুপের জমি ও সম্পদ না কেনার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। 

এস আলম বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি, যিনি পরিকল্পিতভাবে ব্যাংক লুটপাটে যুক্ত: ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এস আলম গ্রুপ এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক লেনদেন ও ঋণ স্থগিত করা হয়েছে। 

এখন প্রতিষ্ঠানটির নামে-বেনামে থাকা বিভিন্ন জমি ও সম্পদ বিক্রি করার চেষ্টা করছে। এগুলো ঠেকাতে আইনি প্রক্রিয়া দরকার। ড. মনসুর বলেন, এস আলম বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি, যিনি পরিকল্পিতভাবে ব্যাংক লুটপাট করা প্রতিষ্ঠান। এভাবে পৃথিবীতে কেউ ব্যাংক ডাকাতি হয়নি। 

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!