ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

ডিম প্রতিদিন উৎপাদন ৬ কোটি ৪০ লাখ, চাহিদা ৫ কোটি

শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৪, ০১:১৭ এএম

ডিম প্রতিদিন উৎপাদন ৬ কোটি ৪০ লাখ, চাহিদা ৫ কোটি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা: ঢাকার খোলা বাজারে ডিমের তীব্র সংকট থাকলেও গতকাল বুধবার বিকেলে সরবরাহ বেড়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় দামও কমেছে। তবুও সরকার নির্ধারিত ১৪২ টাকা হালির ডিম ১৫৫ টাকায় বাড়তি দামেই বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। হালিতে ৯ টাকা বেশি হলেও ডিম মেলায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা। এদিকে নতুন করে কারওয়ান বাজারে গত রাতে প্রবেশ করেছে আরও ৫০ লাখ ডিম।

বাজারে পণ্যমূল্য কমাতে গত সপ্তাহে ট্যাস্ক ফোর্স গঠনের পর দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত দু’দিন ধরে চট্টগ্রাম ও ঢাকার বাজারে ডিম বিক্রি বন্ধ করে দেয় আড়তদাররা। তাদের অভিযোগ, বাজারে বাড়তি দামে ডিম কিনে সরকারি মূল্যে তারা বিক্রি করতে পারছে না। কাজেই সরকারের অভিযান ও জরিমানার ভয়ে তারা দোকান বন্ধ রাখেন।

তবে গত মঙ্গলবার জাতীয় ভোক্তা অধিকারের সঙ্গে আড়তদারের বৈঠকে নতুন দাম নির্ধারণ হয়। এরপরে দোকান খোলেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ঢাকার বাজারে গতকাল বিকেল থেকে সরবরাহ বাড়তে থাকায় দামও কমতে থাকে। যদিও তা সরকারি মূল্যের চেয়ে হালিতে ৯ টাকা বেশি।

ডিমের দাম বৃদ্ধির কারণ ফিডের দাম বেশি। উৎপাদক হিসেবে খামারির মালিকরা দুই সপ্তাহ আগেও ৫০ কেজির এক বস্তা ফিড কিনেছেন ২১শ টাকায়। তা বেড়ে এখন হয়েছে ৩১শ টাকা। প্রতি বস্তায় ১ হাজার টাকা দাম বাড়ায় প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ১০। ৪২ টাকার ফিড এখন ৫২ টাকায় তাদের কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে মুরগির বাচ্চা ১৩০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬০ টাকা। তবে মূল্যবৃদ্ধির মুনাফা উৎপাদক পর্যায়ে খামারির মালিকরা নিতে পারছেন না।

মুনাফা সম্পর্কে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাটের খামারি শফিকুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ডিমের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ডিম আগেই বিক্রি হয়েছে। কোম্পানি আমাদের বাচ্চা, খাদ্য এবং ওষুধ দেয়। তাছাড়া বিভিন্ন পরামর্শ কোম্পানির লোক দিয়ে থাকে। তাদের মাধ্যমে তৃতীয় একটিপক্ষ ডিম কেনেন। তাদের কাছ থেকে আরেকটি পক্ষ ডিম কিনে বড় মোকামে পাঠায়। সেখান থেকে আড়তদার কিনে এবং গ্রাহক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেন। মুনাফা আমরা করতে পারি না কিন্তু সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিতে হয়।

দেশে বর্তমানে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা ৫ কোটি, অন্যদিকে উৎপাদন ৬ কোটি ৪০ লাখ। এক কোটির বেশি উদ্বৃত্ত থাকলেও সংকটের কারণ জানাতে পারেনি ঢাকার প্রাণি অধিদপ্তর। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ দক্ষিণাঞ্চলে প্রবল বন্যা হয়েছে এবং চলতি মাসেও উত্তরের জেলাগুলোতে জলডুবিতে অনেক প্রাণী মারা গেছে। যার কারণে ডিম 
উৎপাদনের হালনাগাদ তথ্য নেই প্রাণী অধিদপ্তরের কাছে। উৎপাদন সম্পর্কে কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক শরিফুল হক গতকাল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, দিনে চাহিদা ৫ কোটি এবং উৎপাদন ৬ কোটির বেশি। তবে সম্প্রতি বন্যার কারণে এই প্রভাব পড়তে পারে।

এদিকে গতকাল সকালে মগবাজারে খুচরাবাজারে প্রতি হালি ৬৫ টাকা এবং প্রতি ডজন ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। ঢাকার অধিকাংশ দোকান ছিল ডিমশূন্য।

ঢাকার মগবাজারে আব্দুর রাজ্জাক স্টোরের মাালিক মেহেদী হাসান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, কারওয়ান বাজারে গতকাল (মঙ্গলবার) ডিম পাইনি। আগে একশ ডিম আড়তের বাইরে থেকে সংগ্রহ করেছি ১৫শ টাকায়। তাহলে বলেন, কীভাবে সরকারি মূল্যে ডিম বিক্রি করব। প্রতি পিস কেনা ১৫ টাকা। সাথে আরও বাড়তি খরচ আছে।

তিনি আরও বলেন, বিকেলে (গতকাল) ১৩২০ টাকায় একশ ডিম কিনতে পেরেছি। যে কারণে এখন ১৬৫-১৬৮ টাকা ডজন বিক্রি করছি। গত পরশুদিন ছিল আরও বেশি, ২১০ টাকা ডজনও বিক্রি হয়েছে।  

আব্দুর রহিম মগবাজারে মাঝারি আকারে ডিমের একজন ব্যবসায়ী। প্রতিদিন মগবাজারে নির্দিষ্ট দোকান থেকে তিনি ডিম অন্যসব দোকানে সাপ্লাই দেন। তার সঙ্গে কথা হলে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমার ঘরে সবসময় দুই-তিন হাজার ডিম থাকে। এখন একশ ডিমও নেই। যারা প্রধান খরিদদার তাদেরও দিতে পারছি না। চাহিদা আছে, হঠাৎ দাম বেশি। কি করব, কিনতে না পারলে বেচব ক্যামনে?

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারে কাল তিনশ ডিম পেয়েছি। পনেরোশ টাকা শ। এক পিস ডিম ১৬ টাকার কমে বেচি ক্যামনে, বলেন। সরকার দাম দিছে ধরেন ১২ টাকা।

তবে বিকেল থেকে সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। গতকাল সকালে সরবরাহ সংকট থাকলেও দুপুরের পরে ডিমের সরবরাহ বাড়ে। ফলে দাম কমে প্রতি ডজন ১৫৫ টাকায় বিক্রি হয়। সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্য ১৪২ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সম্প্রতি ডিমের ‘যৌক্তিক দাম’ নির্ধারণ করে দিয়েছে বলেন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, প্রতিটি ডিমের দাম উৎপাদন পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা (ডজন ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা) বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু কোম্পানিগুলো নিজ উদ্যোগে আড়তে ডিম সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই প্রতিটি ডিম বিক্রি হবে ১০ টাকা ৯১ পয়সায়। আড়তদারেরা সেই ডিম ভোক্তা পর্যায়ে ১২ টাকায় বিক্রি নিশ্চিত করবেন, এমন শর্তেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি বলেন মাহবুবুর রহমান।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!