ঢাকা শনিবার, ০৪ জানুয়ারি, ২০২৫

দখলমুক্ত হচ্ছে রাজধানীর ৫৮ পুকুর

মাইনুল হক ভূঁঁইয়া

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৫, ১২:৩১ এএম

দখলমুক্ত হচ্ছে রাজধানীর ৫৮ পুকুর

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাজধানী ঢাকার সরকারি ৫৮ পুকুর দখলমুক্ত করা হচ্ছে। যদিও এসব পুকুর কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই। নামে পুকুর হলেও দখল-দূষণে এসব অস্তিত্ব হারিয়ে পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। এই পুকুরগুলোর অধিকাংশই মতিঝিল, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও তেজগাঁও সার্কেলে।


সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এই ৫৮ পুকুরকে চিহ্নিত করা হয় এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে দখলমুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। এর পরপরই এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হয়। পুকুরগুলো স্বরূপে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ঢাকা জেলা প্রশাসন ত্বরিতগতিতে এগুলোর মালিকানা রাজউককে বুঝিয়ে দেয়।


রাজউক সূত্র বলছে, প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য প্রকল্প তৈরির পর এগুলোতে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে স্বরূপে ফিরিয়ে আনা হবে।


প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত এই ৫৮ পুকুরের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বিভিন্ন দায়িত্বশীলদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রূপালী বাংলাদেশ। এতে করে বেরিয়ে আসা তথ্যে দেখা যায়, এসব পুকুরের মধ্যে কোতোয়ালী মৌজায় রয়েছে: সূত্রাপুরের আরএস ৭৩৯৬ দাগে ৮০ শতাংশ, সিটি জরিপ-২০০০৫ দাগে ৭০ শতাংশ, আরএস ১৪০২৪ দাগে ১৮ শতাংশ, ওয়ারীর আরএস ৪১১৫ দাগে ৫০ শতাংশ, রমনা মৌজায় আরএস ৩৯৫ দাগে ১ একর ৮৫ শতাংশ, আরএস ৭৮৩ দাগে ৭০ শতাংশ, আরএস ৭৯৮ দাগে ১৮ শতাংশ আয়তনের পুকুর রয়েছে।


এদিকে সরকারি নথিতে মতিঝিল রাজস্ব সার্কেলে রয়েছে ১৩ পুকুর। সেখানে গড়ে উঠেছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর। এই ১৩টির মধ্যে যাত্রাবাড়ী মৌজায় সিটি জরিপ ৪৮০৮ দাগে ৮৫ শতাংশ ও সিটি জরিপ ২৭৫২ দাগে ১৪ শতাংশ, মান্ডায় ১৮২৫ দাগে ১৭ শতাংশ, দনিয়ায় ৭৭৮২ দাগে ২১ শতাংশ, কদমতলীতে ৯৩০১ দাগে ১ একর ১৭ শতাংশ ও ৯৭১৩ দাগে ৪ একর ৮৮ শতাংশ, ব্রাহ্মণ চিরণে ২৪৩৩ দাগে ২০ শতাংশ ও ২১১০ দাগে ২৬ শতাংশ, মতিঝিলে ২১০৮ দাগে ১ একর ৯২ শতাংশ, রাজারবাগে ৯০১৩ দাগে ৪৭ শতাংশ ও ৭৩৪০ দাগে ১১ শতাংশ এবং ১৯০৪ দাগে ২৬ শতাংশ পুকুর ছিল। 

লালবাগ রাজস্ব সার্কেলের কালুনগরে আরএস ৫৮০ দাগে ২০ কাঠা, আরএস ১৫৩০ দাগে ৬১ শতাংশ ও আরএস ১৬৬৫ দাগে ২০ শতাংশ, লালবাগে আরএস ৫৬৫৭ দাগে ১ একর ২০ শতাংশ এবং সিটি জরিপ ১৭১১ দাগে ৫৮ শতাংশ, হাজারীবাগ মৌজায় আরএস ৬০৩৪ দাগে একটি পুকুর, ক্যান্টনমেন্ট সার্কেলে আরএস ২৮২৭ দাগে ৪৩ শতাংশ, দক্ষিণখান ভূমি অফিসের আওতায় আরএস ৫৬৮২ দাগে ২৯ শতাংশ, আরএস ১১৬৬৩ দাগে ৫৯ শতাংশ, দক্ষিণখানে ৫০ শতাংশ, আরএস ১১৫৬২ দাগে একটি, ১১৫১২ দাগে ৩৬ শতাংশ, আরএস ৫৭৪৭ দাগে ১ একর ২৯ শতাংশ, ১১২৭০ দাগে ৩০ শতাংশ, উত্তরখানে এসএ ১৯২৩ দাগে ৩৪ শতাংশ, আমুলীয়ায় আরএস ৪১ দাগে ৪৩ শতাংশ, আরএস ৯৩ দাগে ৪৮ শতাংশ, উত্তরখানে সিটি জরিপ ৫৫১৬ দাগে ৩৫ শতাংশ পুকুর রয়েছে।


এ ছাড়া, মোহাম্মদপুর রাজস্ব সার্কেলে লালমাটিয়া মৌজায় সিটি জরিপে ২ একর ১১ শতাংশ, মিরপুর রাজস্ব সার্কেলের বসুপাড়া মৌজায় ১১৩৫ দাগে ৬৮ শতাংশ, ছোট দিয়াবাড়ীতে ২৩৪ দাগে ৭৫ শতাংশ, মিরপুরে ৩৪৩ দাগে ১৫ শতাংশ, গড়ান চটবাড়ীতে ২৪৩৪ দাগে ১৩ শতাংশ, বাউনিয়া মৌজায় ১২৫৫২ দাগে ৭৮ শতাংশ, চণ্ডালভোগে ৩০ নং দাগে ৬৩ শতাংশ এবং দিয়াবাড়ীতে ২০২৫ দাগে ৪৫ শতাংশ আয়তনের পুকুর রয়েছে। তেজগাঁও রাজস্ব সার্কেলের আওতাধীন বেরাইদে সিটি জরিপ ৪৪২ দাগে ১৮ শতাংশ, গজারিয়ায় ১০৩৫০ দাগে ৪০ শতাংশ, বাড্ডায় ৫৪০৮ দাগে ৬৮ শতাংশ, সাতারকুলে ৩৮৬০ দাগে ২৮ শতাংশ, ৮৪৯ দাগে ৯৩ শতাংশ, ৪৯৪৪ দাগে ৪০ শতাংশ, ২১৯১৩ দাগে ১১ শতাংশ, ২১৯১৫ দাগে ১৭ শতাংশ এবং ২১৯১৮ দাগে ২৪ শতাংশ পুকুর ছিল।


ওদিকে গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরডিএসের সমীক্ষা সামনে রেখে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, বিগত তিন-চার দশকে রাজধানীর প্রায় ১ হাজার ৯০০ পুকুর ও জলাশয় বেদখল হয়ে ভরাটের শিকার হয়েছে। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় ২ হাজারেরও বেশি পুকুর ছিল। আরডিএসের হিসাব আর তত্ত্বতালাশির যোগফলে দেখা যায়, ২০২১ সালেও রাজধানীতে পুকুরের সংখ্যা ছিল ২৪১।


২০২৪-এ এসে খুঁজলে দেখা যাবে, এই ২৪১ পুকুরও নেই। ঠাঁই নিয়েছে শুধুই কাগজে-কলমে। সব পুকুর ও জলাশয় একশ্রেণির স্বার্থান্বেষীর লোলুপ দৃষ্টিতে পড়ে ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং নানামুখী স্থাপনায় রূপ নিয়েছে। এসব লোকের সিংহভাগই প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক লেবাশধারী। বছরের পর বছর সরকার এসেছে, সরকার গেছে- প্রকৃতিবান্ধব এসব পুকুর-জলাশয়ের খোঁজ পর্যন্ত হয়নি। 


নদীর জল অনেক গড়িয়ে, অনেক রক্তের সিঁড়ি বেয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এখন মসনদে। এই সময়ে এসে প্রায় ২ হাজার পুকুরের মধ্যে মাত্র ৫৮ সরকারি পুকুর দখলমুক্ত করা কম সাহসী পদক্ষেপ নয়। কিন্তু কীভাবে এই সাহসিকতা বাস্তবায়িত হবে জানতে এই প্রতিবেদক কথা বলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ছিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আমরা কাজ করছি। শিগ্্গিরই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। এরপর সংস্কারের পর এসব পুকুরকে দষ্টিনন্দন করা হবে। পুকুরের পাশ দিয়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। রোপণ করা হবে গাছ-গাছালি।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!