বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৫, ১১:২৭ এএম

banner

বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর এফটিএ সভা

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৫, ১১:২৭ এএম

বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর এফটিএ সভা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সিঙ্গাপুরের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরে আনুষ্ঠানিকভাবে মূল পর্ব অর্থাৎ নেগোসিয়েশন বা দর কষাকষি পর্ব শুরু করেছে বাংলাদেশ। এই আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক করা হবে এই চুক্তির মাধ্যমে কোন দেশ কি পরিমাণ সুবিধা পাবে বা কোন দেশ কতটা ছাড় দিবে। এ ছাড়া আলোচনার সাইড লাইনে এস আলম গ্রুপ ও এর মালিকদের থাকা সম্পদের তথ্য নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া এই সভায় শুরু হয়েছে সিঙ্গাপুরে। তিনি দিনব্যাপী এই সভায় বাংলাদেশের পক্ষে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) আয়েশা আক্তার। বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর ১৯৭২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এরপর গত ৫০ বছর ধরে উষ্ণ এবং দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের জুনে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে এফটিএ স্বাক্ষরের বিষয়টি উত্থাপিত হয়। তার পর থেকে যৌথ কমিটি গঠিত হয়। উভয় দেশ বৈঠক করে ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এফটিএর আওতায় অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, লজিস্টিকস এবং পরিবহনের মতো ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য একটি সম্ভাবনাময় এলাকা। পণ্য ছাড়াও সেবা ও বিনিয়োগ খাতেও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ এবং সিঙ্গাপুরের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

এই চুক্তি স্বাক্ষর হলে দুই দেশই লাভবান হবে। এই বিষয়ে প্রতিনিধি দলের সদস্য এবং অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ রেজাউল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, গতকাল সোমবার থেকে আলোচনা শুরু করেছি। আলোচনার মাধ্যমে উভয় দেশের চাহিদা উপস্থাপন করা হবে। এর পর আলোচনার ভিত্তিতে করণীয় ঠিক করা হবে।

জানা গেছে, আলোচনা শেষ করে দুই দেশের মধ্যে এফটিএ স্বাক্ষর হবে। এই কার্যক্রম শেষ করতে কত দিন সময় লাগবে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। কারণ এর সঙ্গে নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত। তবে তারা আশা করছেন, খুব লম্বা সময়ের প্রয়োজন হবে না।

জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বেশকিছু দেশের সঙ্গে এফটিএ করার জন্য বিগত সরকার কাজ শুরু করেছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দেশগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে। এসব দেশের পাশাপাশি যত বেশি দেশের সঙ্গে সম্ভব মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করবে সরকার। এ ছাড়া আসিয়ানে যোগ দেওয়ারও চেষ্টা করবে এই সরকার।

বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। এ অর্জন বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টির পাশাপাশি বেশকিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করবে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশ ও বাণিজ্য জোটের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ বছরে ১৩ বিলিয়ন ডলারের মূলধনি যন্ত্রপাতি ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি করে। এদিকে সিঙ্গাপুর বছরে ২২০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। গত বছর বাংলাদেশ ৩৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। তিন বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে সিঙ্গাপুর। অথচ বাংলাদেশ গত বছর সিঙ্গাপুরে মাত্র ২০০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। 

এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। এফটিএ স্বাক্ষরের ফলে দুই দেশের মধ্যে এফডিআই, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং বাণিজ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে বলে সকরার ধারণা করছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার ডেরেক লো এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সিঙ্গাপুরের জন্য বাংলাদেশ বিশেষ করে চট্টগ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রামের বে-টার্মিনালে সিঙ্গাপুরের শিপিং কোম্পানি পিএসএ বিনিয়োগ করছে। বে-টার্মিনাল ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে এটি আন্তর্জাতিক বৃহৎ বন্দরে উপনীত হবে। এই সূত্রে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে।

সিঙ্গাপুর ছোট দেশ হওয়ায় সবজি, ফলমূল এবং মিঠা পানির মাছ বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা থেকে আমদানি করে। দূরত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের কাছাকাছি হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে এসব পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে লজিস্টিক্স সেক্টরে বিশ্বে উন্নত সিঙ্গাপুর। বাংলাদেশেও রয়েছে লজিস্টিক্স সেক্টরের অফুরন্ত সম্ভাবনা। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সিঙ্গাপুরের লজিস্টিক্স সেক্টর সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারবেন। 
২০২৬ সালে এলডিসির তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে বাংলাদেশ। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য শুল্কসহ বেশ কিছু ইস্যুতে চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। তাই এলডিসি উত্তরণের সময়টি ২০২৬ সাল থেকে আরও কয়েক বছর পিছিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করার প্রক্রিয়া হুট করে বাস্তবায়ন করবে না সরকার। সময় নিয়ে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হবে। 

চট্টগ্রামের বে-টার্মিনালে সিঙ্গাপুরের শিপিং কোম্পানি পিএসএ বিনিয়োগ : চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তাবিত বে টার্মিনাল প্রকল্পে ৮০০ কোটি ডলার (৮৮ হাজার কোটি টাকা) বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানোর চারটি টার্মিনাল ও নৌপথ তৈরিতে এই বিনিয়োগ হবে।

বে টার্মিনালের চারটি টার্মিনালের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হবে গ্যাস ও তেল খালাসের টার্মিনালে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে ইস্ট কোস্ট গ্রুপ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। তাতে ৩৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হবে। কনটেইনার ও পণ্য ওঠানো-নামানোর তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ হবে। এর মধ্যে ১৫০ কোটি ডলার করে বিনিয়োগ করে আলাদা দুটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা করবে সিঙ্গাপুরে পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল ও আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড। 

মাল্টিপারপাস নামের আরেকটি টার্মিনাল আবুধাবি পোর্টস নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ হতে পারে। এ ছাড়া নৌপথ তৈরিতে ৫৯ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

বে-টার্মিনাল ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে এ আন্তর্জাতিক বৃহৎ বন্দরে উপনীত হবে। এ সূত্রে দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। শিপিং খাতে অনুকরণীয় দেশ হচ্ছে সিঙ্গাপুর। বাংলাদেশের চলমান বে-টার্মিনাল প্রকল্পে সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ শিপিং সেক্টরের ব্যবসায়ীদের মনে আশার সঞ্চার করেছে। 

সিঙ্গাপুরের পিএসএ কোম্পানি বে-টার্মিনালকে আন্তর্জাতিক টার্মিনালে পরিণত করবে। তারা একই সঙ্গে বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক খাত, ডিস্যালাইনেশন, শিক্ষা, প্রযুক্তি, কারিগরি এবং শিপিং খাতে সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারীদের একক বা যৌথ বিনিয়োগের আহ্বান জানান ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরতে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সিঙ্গাপুর সফরের আমন্ত্রণ জানান।

এস আলম গ্রুপের সম্পদের তথ্য: সিঙ্গাপুরের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ) ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে এস আলম গ্রুপ ও এর মালিকদের দেশে-বিদেশে থাকা সম্পদের বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছিল। এফটিএ আলোচনার সাইডলাইনে এ বিষয়েও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্রের দাবি।

দ্বীপরাষ্ট্রটির আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ ই-মেইলের মাধ্যমে তথ্য জানতে চেয়েছিল। এরপর বাংলাদেশের গোয়েন্দ বিভাগ এস আলম গ্রুপ ও এর মালিকের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রস্তুত করে তা সিঙ্গাপুরের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কাছে পাঠায়। 

মূলত সিঙ্গাপুরের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগসহ বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন সংক্রান্ত তথ্য পাঠানো বিএফআইইউ দায়িত্ব। গত এক দশক ধরে সিঙ্গাপুরে সাইফুল আলম হোটেল, বাড়ি, রিটেইল স্পেসসহ অন্যান্য সম্পত্তি কিনেছেন এবং সাইফুল আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই বিদেশে ব্যবসা করেছেন।

বাংলাদেশে এস আলম গ্রুপ ছয়টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করত। তবে গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর এস আলম গ্রুপ অর্ধডজন ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হারায়। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে।

অভিযোগ আছে, এস আলম গ্রুপ ওই ব্যাংকগুলো থেকে এক লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে। বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে বর্তমান সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। 

বিএফআইইউ ব্যবসায়ী গ্রুপটির সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকজনের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। তবে গত ১২ সেপ্টেম্বর এস আলম গ্রুপ বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব জব্দের কারণে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আর্থিক, সামাজিক ও আইনি সহায়তা দিতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি অনুরোধ জানায়। এরপর কয়েকটি ব্যাংক এস আলম গ্রুপের ব্যবসায়িক হিসাব আনব্লক করছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!