ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরি নিয়েছেন কমবেশি ৮৯ হাজার জন। এ তথ্য প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত চৌধুরী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এই বিপুলসংখ্যক সরকারি চাকরিজীবীর তালিকা বিভিন্ন সরকারি-আধা সরকারি সংস্থা থেকে এসেছে। মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে তালিকা চেয়ে ইতিপূর্বে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। দেরিতে হলেও সেই তালিকা পাওয়া গেছে, এটাই সুখের বিষয়।
তিনি জানান, বর্তমানে এই তালিকা কম্পিউটারে এন্ট্রি করা হচ্ছে। এরপর শুরু হবে যাচাই-বাছাই।
যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া কী হবে- জানতে চাইলে সচিব ইশরাত চৌধুরী বলেন, সবার নাম অবশ্যই মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত ও প্রকাশিত সমন্বিত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। নতুবা তাদের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের প্রযুক্তিগত শাখায় লোকবল সংকটের কারণে হয়তো কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে, অচিরেই ইনশাল্লাহ এই দুরূহ কাজটি আমরা সম্পন্ন করতে পারব।
মন্ত্রণালয় ইতিপূর্বে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছিল। ওই সংস্কারকাজ কতদূর এগোল- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, কাজটি মূলত করবে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। তারা ইতিমধ্যে এ কাজ সুচারুরূপে সম্পন্নের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি কাজও শুরু করেছে, ক’দিন পরই বোঝা যাবে অগ্রগতি কতখানি।
তিনি বলেন, কমিটির তালিকা পেলে তা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও জনসাধারণের অবগতি ও পর্যালোচনার স্বার্থে সব জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর কাছে পাঠানো হবে। তারা তাদের নোটিশ বোর্ডে তা টাঙানোর ব্যবস্থা করবেন। যেখান থেকেই যে অভিযোগ আসবে তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে। কোনো ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হবে এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, পতিত হাসিনা সরকারের টানা তিন মেয়াদে প্রায় ১৮ হাজার ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইতিমধ্যেই ৮ হাজার ব্যক্তিকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা সবাই ভুয়া সনদধারী বলে মন্ত্রণালয়ের ধারণা। এখন তাদের বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে। এর পরপরই তাদের সম্পর্কে গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে।
তবে আরেকটি দায়িত্বশীল সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছে, পট পরিবর্তনের পর অনেকেই সাহস করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে নানা তথ্য নিয়ে হাজির হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত অভিযোগের সংখ্যা হবে প্রায় ৫০ হাজার। কিন্তু জামুকা কর্তৃক গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের আগে এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত জাহান।
আপনার মতামত লিখুন :