ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

সংবিধানসহ নির্বাচনব্যবস্থা বদল

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৫, ০৮:২৫ এএম

সংবিধানসহ নির্বাচনব্যবস্থা বদল

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি সংবিধানের সংস্কারে গঠিত কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেখানে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি, দেশের সাংবিধানিক নাম এবং সংসদীয় কাঠামোতে পরিবর্তনের মতো সুপারিশ রয়েছে। 

বাংলাদেশকে যেভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বলা হয়, তার মধ্যে আসলে যে প্রজাতন্ত্রের কথা হয়, তারও দ্বিমত পোষণ করা হয়েছে। আর জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান করার লক্ষ্যে ‘ভাঙা’ নির্বাচনব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক করাসহ সব অংশীজনকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে বেআইনি সমাবেশ ও শোভাযাত্রা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের শক্তি প্রয়োগের সীমা নির্ধারণ, পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও আসামিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসছে। এ ছাড়া সংশোধন ও পরিমার্জন হবে বাহিনী সংস্কারের জন্য ২২টি আইনের। 

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সংবিধানের অঙ্গীকার, দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন, আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ লেনদেনকে অবৈধ ঘোষণা, ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা ও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিলের প্রস্তাব রয়েছে। 

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল বুধবার প্রতিবেদন জমা দেন চার সংস্কার কমিশনের প্রধান। তারা হলেন- সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক সচিব সফর রাজ হোসেন ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি সংবিধানের সংস্কারে গঠিত কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি, দেশের সাংবিধানিক নাম এবং সংসদীয় কাঠামোতে পরিবর্তনের মতো সুপারিশ রয়েছে। বাংলাদেশকে যেভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বলা হয়, তার মধ্যে আসলে যে প্রজাতন্ত্রের কথা হয়, তারও দ্বিমত পোষণ করা হয়েছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের কাছে তাদের সুপারিশগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের যে জনআকাক্সক্ষা, তার প্রতিফলন হিসেবে আমরা রাষ্ট্রের পাঁচটি মূলনীতি সুপারিশ করছি। 

সেগুলো হচ্ছে- সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র। বর্তমান বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ রয়েছে।

সেই মূলনীতির আলোকে ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত’ করাকে রাষ্ট্রের লক্ষ্য হিসেবে রয়েছে সংবিধানে। 

বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ সুপারিশ প্রতিবেদন করার কথা তুলে ধরেন সংস্কার কমিশনের প্রধান।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের শিক্ষক ড. আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশকে যেভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বলা হয়, তার মধ্যে আসলে যে প্রজাতন্ত্রের কথা হয়, সেটায় আমরা দ্বিমত পোষণ করেছি। 

আমরা বলেছি, বাংলাদেশের পরিচিত হওয়া উচিত ‘জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ’। মৌলিক অধিকারের আওতা সম্প্রসারণের বিষয়ে সুপারিশ করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, আমরা সাংবিধানিকভাবে তার সুরক্ষা এবং তা যেন বলবতযোগ্য হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য একটা সমন্বিত একক সনদের কথা বলেছি।

দ্বিকক্ষের সংসদ, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল: সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের পুনরুদ্ধার বা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা সুপারিশে তুলে ধরার কথা বলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান। 

এ ছাড়া দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ চালুর প্রস্তাব করার কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, এ দুই কক্ষ মিলে যাতে সকলের প্রতিনিধিত্ব থাকে, তার জন্য একই সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নিম্নকক্ষ, কিন্তু সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে উচ্চকক্ষ তৈরি করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। কারণ গত ১৬ বছর বাংলাদেশ যে ‘একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র মোকাবেলা করেছে’, তার একটা বড় কারণ ছিল ক্ষমতার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য ছিল না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যাতে কোনো এক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হতে না পারে, সে জন্য রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ এবং নির্বাহী বিভাগের দুটি পদ, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য একটা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের বিষয় হিসেবে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল নামে একটি সাংবিধানিক সংস্থা প্রবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। 

এতে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা এবং সংসদের দুকক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারদের পাশাপাশি অন্যান্য দলের প্রতিনিধিত্বকারী একজনকে এই কাউন্সিলে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। 

প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ে সাংবিধানিক কাউন্সিল: নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে ‘সুস্পষ্ট কাঠামোর’ পরামর্শ প্রতিবেদনে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, কমিশন মনে করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে বাছাইয়ের দায়িত্বভার কোনো ব্যক্তি বা একক প্রতিষ্ঠানের ওপর থাকা ঠিক নয়। 

সে কারণে কমিশন জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের কাছে এই বাছাইপ্রক্রিয়া অর্পণ করেছে বা সুপারিশ করেছে। কমিশন আশা করছে, সেটা সম্ভব হবে। বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের এখতিয়ার ও মর্যাদাসম্পন্ন আদালত স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। 

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন: জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান করার লক্ষ্যে ‘ভাঙা’ নির্বাচনব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক করাসহ সব অংশীজনকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনার লক্ষ্যে প্রায় ১৫০ সুপারিশ রেখেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা একটা গুরুদায়িত্ব। 

নির্বাচনব্যবস্থা ‘ভেঙে’ গিয়েছে, এটাকে জোড়া লাগানোর জন্য এই সংস্কার কমিশনের প্রচেষ্টা। কাজটি করতে গিয়ে তিনি উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ছিলেন এবং সামনের দিনে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা কতগুলো প্রস্তাব করেছি- যেগুলো পরিস্থিটাকে আরও উত্তপ্ত করতে সহায়তা করবে।

মূলত, নির্বাচনব্যবস্থায় যাতে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হয়, সে চেষ্টাই করার কথা তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। একই সাথে সব অংশীজনের দায়বদ্ধতা যেন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নির্বাচনটা যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়, ভোটারের ভোট দেওয়ার অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করা হয়েছে। এ জন্য ১৫০টি ছোট-বড় সুপারিশ রয়েছে। এ লক্ষ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ে সংবিধান সংক্রান্ত সুপারিশ রয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে। 

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দলের বর্জনের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। প্রবল আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। 

তার আগে ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগের আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচন ব্যাপক সমালোচিত হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ ওঠে। দুর্নীতি, অর্থ পাচার, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দেশে ও বিদেশে চাপে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকার। ফলে ক্ষমতার পালাবদলের পর রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। দুই ধাপে গঠিত হয় ১১টি সংস্কার কমিশন।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর এই প্রচেষ্টার পেছনে অনুপ্রেরণার কথা তুলে ধরে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “গ্রামের থেকে অনেক মানুষ এসেছে কথা বলতে। দু-একজন বলে গিয়েছে-সংসদ ভবনের এ ইমারতে যেন কুৎসিত লোক আসতে না পারে।

 আমরা মনে করি- এটা ছিল আমাদের প্রতি ম্যান্ডেট। ১৮টি উল্লেখযোগ্য জায়গায় ১৫০টির মতো সুপারিশ করেছি। এ সুপারিশের অন্যতম লক্ষ্য-নির্বাচন কমিশনের (ইসি) স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। তাদের ক্ষমতায়িত করা। একই সাথে তাদের দায়বদ্ধ করা।

দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা যাবে, সে আশা করাও দুরাশা বলে মন্তব্য করেন কমিশন প্রধান। 

রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক চর্চা ও জবাবদিহিতার ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোটের কথা উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিশেষত গত তিনটি নির্বাচনে যারা নির্বাচনব্যবস্থাকে নির্বাসনে ফেলে দিয়েছে। 

কর্মকর্তা শুধু নয়, আমাদের কমিশন সদস্যরা, তাদের ব্যাপারে তদন্ত করার, বিশেষত ২০১৮ সালের মধ্যরাতে যে অভূতপূর্ব কাণ্ড ঘটেছে, সে ব্যাপারে তদন্ত করে তাদের বিচারের আওতায়, দায়বদ্ধতার আওতায় আনা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।

যা আছে পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে: বেআইনি সমাবেশ ও শোভাযাত্রা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের শক্তি প্রয়োগের সীমা নির্ধারণ, পরোয়ান ছাড়া গ্রেপ্তার ও আসামিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা চেয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। 

এ ছাড়া বাহিনী সংস্কারের জন্য ২২টি আইনের সংশোধন ও পরিমার্জন চেয়েছে এই কমিশন। কারণ ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি পুলিশকে তিন হাজারের বেশি আইন নিয়ে কাজ করতে হয়। 

গত বছরের ৩ অক্টোবর সাবেক সচিব সফর রাজ হোসেনের নেতৃত্বাধীন গঠিত এ কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। সে হিসাবে ২ জানুয়ারির মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমার কথা ছিল। পরে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার মেয়াদ এক দফা বাড়িয়ে ১৫ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। 

কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন বলেছেন, সব আইন খুঁটিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। তবে এ ২২টি আইনের হয় সংশোধন, পরিমার্জন বা কোনো ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে হবে। ওই ২২টি আইনের কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের আপত্তি আছে, বলে দিয়েছি; তাই সংস্কারের সুপারিশ করেছি। 

পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ বলেছেন, ভিড় বা জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কিছু নিয়ম-কানুন আছে। এটার ব্যাপারে তার কোনো আইডিয়া দিইনি। তাই ইউরোপের মডেলটাই ফলো করতে বলেছেন। সেটার ব্যাপারে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে ডিটেইল একটা গাইডলাইন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। 

অর্থাৎ ইউজ অব ফোর্স ৫টা স্তরে হবে। বেআইনি সমাবেশ, শোভাযাত্রা নিয়ন্ত্রণে যে শক্তি প্রয়োগ করা হয়, এ শক্তি প্রয়োগটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। ক্রাউডের ক্ষেত্রে কী কী করতে হবে। ভবিষ্যতেও যদি কোনো ঘটনা ঘটে, কেউ প্রাণহীন হবে না। 

জুলাই-আগস্টে সরকার পতনের আন্দোলন দমাতে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ ওঠে। আন্দোলনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের কাছে পুলিশের তরফ থেকে ক্ষমা প্রার্থনাও করা হয়। 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে সংস্কারের পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীতে সংস্কার আনতে পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে। পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে পুলিশি জেরার বিষয়েও সুপারিশ করেছে এই কমিশন।

কমিশন প্রধান বলেছেন, গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে দুটি ক্ষেত্রেই হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের কিছু নির্দেশনা আছে, সেগুলো যদি বাস্তবায়ন করা যেত, তাহলে হয়তো বা জনসাধারণের কষ্ট লাঘব হতো।

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন: ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সংবিধানের অঙ্গীকার, দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন, আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ লেনদেনকে অবৈধ ঘোষণা, ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা ও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিলের প্রস্তাবসহ ৪৭ দফা সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন। 

একইভাবে সংস্কার কমিশন চায় দুদক স্বাধীন ও কার্যকর হোক। তবে দুদকের কোনো স্বাধীনতা সীমাহীন নয়। দুদক যে কাজ করবে, তার জবাবদিহি থাকবে। ভালো কাজের যেমন প্রশংসা থাকবে, তেমন কাজ করতে না পারলে জবাবদিহি করতে হবে।

দুদককে শক্তিশালী করতে আট সদস্যের কমিশনের তৈরি করা সংস্কার প্রতিবেদন নিয়ে সরকারপ্রধানের কার্যালয়ে কথা বলছিলেন টিআইবি প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা বলছে। 

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এ কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। তবে কাজ শেষ না হওয়ায় ৩ জানুয়ারি প্রতিবেদন দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়। ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে এ সংস্কার কমিশন গত ৩ অক্টোবর তার কার্যক্রম শুরু করে। 

দুদককে শক্তিশালী, কার্যকর ও ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে কমিশনারদের পদ বাড়ানো, নিয়োগ, সার্চ কমিটি, আইনের সংস্কার, বেতন বৃদ্ধি ও প্রণোদনার জন্য সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন।

দুর্নীতি দমনে সব সেবামূলক খাত স্বয়ংক্রিয় বা অটোমেশনের আওতায় আনার সুপারিশ করে কমিশন বলছে, বেসরকারি খাতে ঘুষ লেনদেন এখন পর্যন্ত অবৈধ নয়। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের আওতায় সরকারি খাতের মতো বেসরকারি খাতেও ঘুষ লেনদেন অবৈধ, কিন্তু সেটা এখনো কার্যকর হয়নি। 

দুদককে শক্তিশালী করতে কয়েকটি আইন সংস্কারের কথা বলেছে কমিশন। দুর্নীতির তথ্য প্রকাশকারীর সুরক্ষা আইন এর একটি। যে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করেন, তার সুরক্ষায় আইন করতে হবে। একটা তথ্য প্রকাশ সুরক্ষা আইন রয়েছে, তবে সেটির কোনো প্রয়োগ ও কার্যকর প্রচার নেই।

 এ আইন যথেষ্ট নয়। তাই আইনটি সংশোধন করে কার্যকর ও প্রচার করার সুপারিশ করা হয়েছে।দুদকে নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা বিবেচনায় যে ধরনের পেশাগত বৈচিত্র্য থাকা দরকার, সেটি নিশ্চিত করতে একজন নারীসহ পাঁচজন দুদক কমিশনার নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। তাঁদের মেয়াদ হবে চার বছর।

সংস্কার কমিশন মনে করে, শুধু কমিশনের সংখ্যা বাড়ালে হবে না। নিয়োগেও বৈচিত্র্য থাকতে হবে। যেসব পেশা দুদকের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা যুক্ত, সেখান থেকে দুদকের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিতে হবে। দুদকে শুধু আমলাদের নিয়োগে যে প্রধান্য দেওয়া হয়, তা থেকে সরে আসতে হবে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!