ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫

হাঁটাচলা করছেন খালেদা জিয়া

রুবেল রহমান

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৫, ১০:১৪ এএম

হাঁটাচলা করছেন খালেদা জিয়া

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

লন্ডন ক্লিনিকে ফিজিওথেরাপি দেওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়াকে। ফিজিওথেরাপিস্টরা খালেদা জিয়াকে হাঁটাচলা করার ব্যবস্থাও করেছেন। এ ছাড়া নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমানও খালেদা জিয়াকে সাহস দিয়ে মাঝে মাঝে হাঁটাচলা করানোর চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার সফরে থাকা তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. এনামুল হক চৌধুরী। 

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের বিখ্যাত ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নতুন এ পরিবর্তন আনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। এ ছাড়া নেফ্রোলজিস্ট, কার্ডিওলজিস্ট ও ইনটেনসিভিস্ট চিকিৎসকরা দেখছেন খালেদা জিয়াকে।

দিন দিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। 

রূপালী বাংলাদেশকে টেলিফোনে লন্ডন থেকে ডা. জাহিদ হোসেন জানান, ‘আলহামদুলিল্লাহ ম্যাডাম যথেষ্ট ভালো আছেন। ডাক্তাররা নিয়মিত দেখছেন। বলতে পারি গত কয়কদিনের চেয়ে তিনি এখন আরও ভালো আছেন। তাঁর স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে।’ 

লন্ডনে শনি ও রোববার ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও ডাক্তাররা নিয়মিত যত্নসহকারে ম্যাডাম’কে দেখছেন বলেও জানান ডা. জাহিদ। তাঁর স্বাস্থ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চলমান। তিনি পরিবারের সবার সঙ্গে সময় দিচ্ছেন। অনেক হাসি-খুশি আছেন। আপনারা ম্যাডামের জন্য দোয়া করবেন। 

তিনি আরও বলেন, লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকদের পরামর্শে যেসব পরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলোর রিপোর্ট পর্যালোচনা করে বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁকে নিয়মিত ফিজিওথেরাপিও দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া নেফ্রোলজিস্ট, কার্ডিওলজিস্ট ও ইনটেনসিভিস্ট চিকিৎসকরা ওনাকে দেখেছেন। 

ডা. জাহিদ বলেন, গেল শুক্রবার থেকে ওনার চিকিৎসায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন ম্যাডামের অবস্থা স্থিতিশীল। এভাবে আরও কয়েকদিন চিকিৎসা চলার পর ওনার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আরও সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা যাবে।

খালেদা জিয়ার সফরে থাকা তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. এনামুল হক চৌধুরী টেলিফোনে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা আগের চেয়ে বেশ ভালো। গত রোববার ছুটির দিন ছিল ডাক্তার কম ছিল হাসপাতালে। তবুও খালেদা জিয়ার খোঁজখবর নিয়েছে। ফিজিওথেরাপি দেওয়া হচ্ছে তাকে। নিজে অসুস্থ, চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবুও দেশের মানুষের খোঁজখবর নিচ্ছেন। আমরা উনার সুস্থতা কামনা করছি। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর মানুষের কাছে আমাদের আবেদন আপনারা আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করবেন। উনি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে যাবেন সেটাই প্রত্যাশা করি আমরা। 

গত ৪ বছর যারা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করেছেন তাদের এপ্রিশিয়েট করেছেন লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এখানে যেসব টেস্ট দেওয়া হয়েছে কিছু রিপোর্ট এখনো বাকি আছে। সেসব রিপোর্ট আসার পর তার চিকিৎসা কেমন হবে, কোনো ধরনের পরিবর্তন আসবে কি নাÑ তার অপেক্ষা করছি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবদি আমরা হাসপাতালে অপেক্ষা করি কখন কি করা লাগবে তার জন্য। চিকিৎসায় কত দিন সময় লাগতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। চিকিৎসকরা সেটা বলতে পারবে।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমাদের নেত্রীর মুখে হাসি ফুটেছে। আমরা অনেক খুশি। তার নাতনিদের সঙ্গে হাসিখুশি অবস্থায় দেখে এসেছি। না দেখলে বুঝতে পারবেন না তিনি কেমন আছেন। মহান আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আমাদের নেত্রীকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। মানুষের দোয়ায় আমাদের নেত্রী বেঁচে আছেন। লন্ডন চিকিৎসকরা খুব যত্ন করে চিকিৎসা করছেন খালেদা জিয়ার। আমরা আশা করি, দ্রুতই বেশ সুস্থ বোধ করবেন তিনি।

খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান, ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান ছাড়াও খালেদা জিয়ার তিন নাতনি হাসপাতালে সবসময় ওনার দেখভাল করছেন। পরিবারের মাঝে থেকে গল্পগুজবে ভালো দিন কাটছে বিএনপি চেয়ারপার্সনের। নাতনিরা সাহস জোগাচ্ছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর। প্রতিদিন খালেদা জিয়ার জন্য বাসা থেকে পরম যত্নে খাবার তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। মায়ের জন্য দোয়া চেয়েছেন তারেক রহমান। রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টার দিকে লন্ডন ক্লিনিকে যেতে দেখা যায় সস্ত্রীক তারেক রহমানকে। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সবাই সবার জন্য দোয়া করবেন। 

গতকাল সোমবারও স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে স্ত্রী জুবাইদাসহ তারেক রহমানকে হাসপাতালে ঢুকতে দেখা গেছে। চিকিৎসকের পরামর্শে চিকেন স্যুপ আর ডাল খাচ্ছেন খালেদা জিয়া। তারেক রহমানের পারিবারিক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও জিয়া ফাউন্ডেশন ইউরোপের সমন্বয়ক কামাল উদ্দিন জানান, পুত্রবধূ জুবাইদা রহমানের হাতের রান্না করা চিকেন স্যুপ আর ডাল খেয়েছেন খালেদা জিয়া।

 ডায়াবেটিসের কারণে সব সময় ভাত খাচ্ছেন না তিনি। তবে মাঝেমধ্যে খুবই অল্প ভাত খাচ্ছেন। এর আগে দেখা করতে গিয়ে শনিবার রাত ১২টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সাংবাদিকদের বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এখন মানসিকভাবেও যথেষ্ট চাঙা রয়েছেন। পরিবারকে কাছে পেয়ে তিনি অনেকটা ভালো আছেন। ছেলে, ছেলের বউ ও নাতনিদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন তিনি।

গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। ওই দিনই লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তাঁকে লন্ডনের বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতাল দ্য লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এই হাসপাতালে তিনি লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির অধীন চিকিৎসাধীন।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!