রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এফ এ শাহেদ 

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৫, ১১:৪৬ পিএম

দুই উপদেষ্টা ঘিরে বিতর্ক চাপে অন্তর্বর্তী সরকার 

এফ এ শাহেদ 

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৫, ১১:৪৬ পিএম

দুই উপদেষ্টা ঘিরে বিতর্ক চাপে অন্তর্বর্তী সরকার 

আসিফ মাহমুদ ও নূরজাহান বেগম। ছবি: রূপালি বাংলাদেশ

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। সরকার গঠনের সাত মাস পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ‘ব্যর্থ’ চিহ্নিত করে তাঁর পদত্যাগ দাবি করে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ নামের সংগঠন। সেই দাবি আড়াল হওয়ার আগেই এবার নানামুখি বিতর্কের মুখে পড়েছেন সরকারের আরও দুই প্রভাবশালী উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও নূরজাহান বেগম। তাদের একান্ত সচিব (এপিএস) এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তার (পিও) দুর্নীতির অভিযোগকে সামনে এনে পদত্যাগ দাবি করেছে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। ফোরামের নেতারা বলছেন, উপদেষ্টাদের মদদ ছাড়া তাদের কর্মকর্তাদের এই ধরনের অপকর্ম সম্ভব নয়। এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ নিয়ে ইতোমধ্যে অনুসন্ধানও শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব বিতর্ককে কেন্দ্র করে অনেকটা বিব্রত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও। এ ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার কাজ সম্পর্কে অস্পষ্টতার পাশাপাশি সমন্বয়হীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। 

গতকাল রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে কর্মচারী ঐক্য ফোরাম বলছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, মোয়াজ্জেম হোসেন তদবির বাণিজ্য করে ৪শ কোটি টাকা অর্জন করেছে। একই অভিযোগ স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তুহিন ফারাবি ও ডা. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে। কিন্তু ডা. মাহমুদুল হাসানকে এখনো অপসারণ করা হয়নি। তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ঘুরে ঘুরে বদলি, পদোন্নতি, পদায়ন ও টেন্ডার ইত্যাদির তদবির করেছে বলে অভিযোগ আছে।

এতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা তাদের ভয়ে তটস্থ থাকত ও তাদের নির্দেশমতো অবৈধ তদবির বাস্তবায়ন করত। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে তারা কি কারো অদৃশ্য ইঙ্গিতে বা আশ্রয়-প্রশ্রয় ব্যতীত এমন সব দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছিল? মোটেই না। সঙ্গত কারণেই তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রতিই আঙুল ওঠে।

দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, জনমনের এসব প্রশ্নের সদুত্তর প্রদানের জন্য নিজেদের অক্ষমতা এবং নৈতিক কারণেই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পদত্যাগ করা উচিত। অবিলম্বে এই দুজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি অথবা তাদের অপসারণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় সংগঠনটি।

এদিকে দুর্নীতির অভিযোগে অব্যাহতি পাওয়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন এবং উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) ছাত্র প্রতিনিধি তুহিন ফারাবির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগে সোমবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেনকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মুহাম্মদ তুহিন ফারাবীকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়।

এ বিষয়ে দুদক মহাপরিচালক বলেন, ‘এটি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। দুদক এ-জাতীয় যেকোনো অভিযোগের বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। আমাদের গোয়েন্দা ইউনিট এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ বিষয়ে অগ্রগতি শিগগিরই জানতে পারবেন।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাদের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ সাধারণ ছাত্র-জনতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে জোরালো আন্দোলন হয়েছিল। এরপর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় সেই আন্দোলন কিছুটা গতি হারায়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ছাড়াও নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের পদত্যাগ দাবিতে মাঠ গরম করে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ও জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ। আবার দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করেছেন গণঅধিকার পরিষদ। দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর সম্প্রতি এক সমাবেশে বলেছেন, ‘এই সরকারে দুই ছাত্র উপদেষ্টা আছেন, তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেওয়া হবে।’ গেল মার্চে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পদত্যাগ চান শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা। শিল্পকলা একাডেমির সামনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভা থেকে পদত্যাগের এ দাবি জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর ৮ আগস্ট নোভেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া দুই ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম ও আফিস মাহমুদ সজীব ভুইয়াকে। যদিও নতুন দল গঠন করার কারণে ইতোমধ্যে উপদেষ্টা পদ ছেড়েছেন নাহিদ ইসলাম। বর্তমানে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও ২২ জন উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীনে ৭ জন বিশেষ সহকারী এবং প্রধান উপদেষ্টার অধীনে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় ৫ জন বিশেষ সহকারী রয়েছেন। 

গত ’২৪ এর ৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে ১৬ জনকে নিযুক্ত করেন। তারা হলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, এ এফ হাসান আরিফ, মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শারমীন এস মুরশিদ, ফারুক-ই-আজম, এম. সাখাওয়াত হোসেন, সুপ্রদীপ চাকমা, বিধান রঞ্জন রায়, আ ফ ম খালিদ হোসেন, ফরিদা আখতার, নূরজাহান বেগম, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ ইউনূসকে শপথবাক্য পাঠ করান। রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি নিযুক্ত ১৬ জন উপদেষ্টার মধ্যে ১৩ জনকে শপথবাক্য পাঠ করান। গত ১১ আগস্ট সরকারের পদ পুনর্বণ্টনসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন রাষ্ট্রপতি সুপ্রদীপ চাকমা এবং বিধান রঞ্জন রায়কে উপদেষ্টা হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করান। তাদের নিয়োগের পর ড. ইউনূস, চাকমা এবং রায়ের মধ্যে মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়। গত ১৩ আগস্ট ফারুক-ই-আজম উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তার নিয়োগের পর ড. ইউনূস এবং ফারুকের মধ্যে মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলো পুনর্বণ্টন করা হয়। একইসাথে, সাংবাদিক শফিকুল আলম, এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেসের বাংলাদেশ ব্যুরোপ্রধান সচিবের মর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। 

এরপর গত ১০ নভেম্বর মাহফুজ আলম, শেখ বশির উদ্দিন এবং মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন উপদেষ্টা হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করান। ২০ ডিসেম্বর উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ মৃত্যুবরণ করেন। ২০ জানুয়ারি আলী ইমাম মজুমদারকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দেন। ৬ ফেব্রুয়ারি মাহফুজ আলমকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর পদ থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পদে স্থানান্তরিত করা হয়।

এদিকে গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স আর নতুন বাংলাদেশের প্রত্যয় ছিল সাধারণ মানুষসহ সর্বস্তর থেকে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা, বাজারসহ নানা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় বিতর্কের মুখে পড়ে সরকার। এ ছাড়াও তাদের পিও, এপিএসদের দুর্নীতির সংবাদ আলোচনার খোরাক জোগায়। স্বৈরাচার সরকারের দুর্নীতিকে হার মানিয়ে স্বল্প সময়ে বিশাল দুর্নীতি, লুটপাটের খেলা দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন জুলাই আন্দোলনের আহত থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।  

ইতোমধ্যে, দুর্নীতির অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ২ উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তার পিওকে। তাদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে গোয়েন্দা কার্যক্রম। গত ২৭ এপ্রিল ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।  

উপদেষ্টাদের দিকে আঙুল তুলছেন রাজনীতিবিদরা
উপদেষ্টা পরিষদের অগ্রাধিকার কাজ সম্পর্কে সুস্পষ্টতার অভাব, নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত রোডম্যাপ না থাকাসহ উপদেষ্টারা নানা বিতর্কিত কাজে জড়িত থাকায় রাজনীতির মাঠেও উঠছে সমালোচনার ঝড়। সভা-সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারাও তাদের দিকে আঙুল তুলে কথা বলছেন।

সার্বিক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার কাজ সম্পর্কে অস্পষ্টতার পাশাপাশি সমন্বয়হীনতাও দেখা যাচ্ছে। আত্মবিশ্বাসেরও ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার যাতে বিশেষ কোনো স্বার্থান্বেষীদের কাছে কোনোভাবে জিম্মি না হয়ে পড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার বিতর্কিত হলে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তবে, বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের একান্ত সচিব (এপিএস) ব্যক্তিগত কর্মকর্তার পিওর এমন কর্মকাণ্ড সরকারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। 

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দুই উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিবের (এপিএস) দুর্নীতির কাহিনি শুনলে শেখ হাসিনাও বিস্ময়ে তিনবার ডিগবাজি খেতে পারেন। তারা ভালো করতেন যদি রাষ্ট্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সোচ্চার থাকতেন। অনেক অনাচার ঘটে গেছে রাষ্ট্রের মধ্যে। সেটাকে ঠিক করার জন্য ছাত্রদের কণ্ঠের শক্তি আরও তীব্র করার দরকার ছিল। তবে, তারা যখন ক্ষমতার অংশ হয়েছেন তখন তাদের আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল। কেন তাদের এপিএসের নামে শতকোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ আসবে! কেন তাদের বিরুদ্ধে বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠবে!

Link copied!