বরিশালের আগৈলঝাড়ায় একটি এনজিওর স্কুলে ভর্তি হতে আসা দরিদ্র শিশুরা ও তাদের অভিভাবকরা স্কুল কর্তৃপক্ষের বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অন্য একটি বেসরকারি এনজিও 'চার্চ অব বাংলাদেশ' নারী-শিশুসহ ১১ জনকে উদ্ধার করে আশ্রয় দিয়েছে। ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
রোববার (২৭ এপ্রিল) রাতে আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের ছবিখাঁপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, দরিদ্র খ্রিষ্টান শিশুদের শিক্ষা, থাকা ও খাবারের সুবিধা দিতে ইন্টারন্যাশনাল নিডস নামক একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের ভর্তি করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার যোসেফপাড়া গ্রাম থেকে চারজন শিশু শিক্ষার্থী — ইমন হেমরন (১০), সিমিয়ন মুর্মু (১১), জেসান মুর্মু (৯) ও অর্পণ হাঁসদা (৯) — প্রায় তিন মাস আগে আবেদন করে। ইন্টারন্যাশনাল নিডস কর্তৃপক্ষ গত শনিবার (২৬ এপ্রিল) ফোন করে তাদের রোববার ভর্তির জন্য আসতে বলে।
পরিকল্পনামতো রোববার ভোরে রওনা হয়ে বিকেল ৩টায় আগৈলঝাড়ায় পৌঁছান শিশুরা এবং তাদের অভিভাবকরা — মেরি মাদরী, নিতু হেমরন, সাবিনা মাদরী, জেরন মুর্মু, এলিয় মুর্মু (৩), জোহন হাঁসদা ও এমিলি মুর্মু।
কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল নিডস কর্তৃপক্ষ জানায়, ওইদিন ভর্তি হবে না; পরদিন সোমবার ভর্তি নেওয়া হবে। অভিভাবকরা রাতে আশ্রয়ের অনুরোধ করলেও কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে। বাধ্য হয়ে শিশুসহ ১১ জন খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় খুঁজতে থাকেন এবং শেষমেষ একটি বন্ধ দোকানের সামনে রাত কাটাতে বসে পড়েন।
পরে সাংবাদিকদের সহযোগিতায় চার্চ অব বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের আশ্রয়, খাবার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে।
অভিভাবক মেরি মাদরী বলেন, ‘আমাদের ফোন করে রোববার আসতে বলেছিল। এসে জানায় আজ ভর্তি হবে না। রাস্তায় রাত কাটাতে বাধ্য হয়েছি।’
আগৈলঝাড়া উপজেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজল দাশ গুপ্ত বলেন, ‘ঘটনাটি অমানবিক। ভর্তির জন্য আসা অভিভাবক-শিশুদের অন্তত রাতে থাকার ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। এনজিও সমন্বয় পরিষদের সভায় এ বিষয়ে জবাবদিহি চাইব।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুশান্ত বালা বলেন, ‘বিষয়টি অমানবিক। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইন্টারন্যাশনাল নিডস’র কো-অর্ডিনেটর আলবার্ট বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের এখানে বয়স্ক মহিলা ও পুরুষদের রাখার নিয়ম নেই। তাই ওনাদের অন্যত্র থাকার জন্য বলা হয়েছে।’