সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর একবার এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘৫৩ বছরের বাংলাদেশে সাকিব আল হাসান শ্রেষ্ঠ ব্র্যান্ড’। আর আসিফ আকবরের এই মন্তব্যের কাঁটাছেড়া করলে সন্দেহাতীতভাবেই এর সত্যতা পাওয়া যায়। খেলোয়াড় হিসেবে সাকিব আল হাসান অনেক বড়। কোন সন্দেহ ছাড়াই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সব সময়ের সেরা অলরাউন্ডার। প্রায় দেড় যুগ ধরে জাতীয় দলের প্রধান চালিকাশক্তি। ব্যাটে-বলে সমান পারদর্শিতা, দক্ষতা ও পারফরম্যান্স দেখিয়ে দলের সেরা সম্পদ বনে গেছেন সাকিব। ব্যাটার সাকিব দলের বড় নির্ভরশীল তারকা। আর বোলার সাকিব বোলিংয়ে বাংলাদেশের কার্যকর অস্ত্র।
বাংলাদেশের জান, বাংলাদেশের প্রাণ, সাকিব আল হাসান- এই প্রশংসাসূচক বাক্যটি শুধু ভক্তদের গুণকীর্তন নয়। বাস্তবেও তিনি টিম বাংলাদেশের প্রধান চালিকাশক্তি ও প্রাণভোমরা।
টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের যত সাফল্য আছে, সেগুলোর বড় অংশের রূপকার ও স্থপতি হলেন সাকিব। তিন ফরম্যাটে ৪৫ বার ম্যাচসেরা পারফরমার হওয়ার দুর্লভ কৃতিত্বের অধিকারীও তিনি। টেস্টে বাংলাদেশের সর্বাধিক উইকেটশিকারি (২৪৭) বোলার হলেন সাকিব। রান তোলায় বাঁহাতি অলরাউন্ডারের (৪৬০৯) ওপরে আছেন কেবল মুশফিকুর রহিম (৫৯৬১) ও তামিম ইকবাল (৫১৩৪)।
এছাড়া টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ছয়বার ম্যাচসেরার কৃতিত্বটাও সাকিবের দখলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরও হলেন ৩৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
সাকিবের ইচ্ছে ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগামীকাল সোমবার শুরু হতে যাওয়া টেস্ট খেলেই দীর্ঘ ফরম্যাটের ক্রিকেট বিদায় জানাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশা পূরণ হচ্ছে না। নিরাপত্তা শঙ্কা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সাকিবকে দেশে ফিরতে নিষেধ করা হয়েছে।
ঢাকা টেস্টে সাকিব খেলবেন- ভক্ত ও সমর্থকদের তা নিয়ে বড় পরিকল্পনা ছিল। পাশাপাশি জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা তাদের ‘সাকিব ভাইকে’ একটা চমৎকার ও স্মরণীয় বিদায় জানাতে কী প্রস্তুতি নিয়েছিল এবং তারা সাকিবকে মিস করছেন কি না- এসব কৌতূহলি প্রশ্ন এখন ভক্তদের মুখে মুখে।
রোববার (২০ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনেও সেই প্রশ্নের সম্মুখীন হলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি জানিয়েছেন, শেরে বাংলায় সাকিব শেষ টেস্ট খেলতে না পারায় তারও মন খারাপ।
শান্ত বলেন, ‘পরিকল্পনা তো ছিলই, বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। শুধু বাংলাদেশই বলবো না, গোটা বিশ্বের। খুবই দুর্ভাগ্যজনক, যে কোনো কারণেই হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রত্যেক খেলোয়াড় মনে করে, পেন্ডিং থেকেই গেলো। দুর্ভাগ্যজনক। হওয়া উচিত ছিল। আমরা সবাই জানি কেন হয়নি। এটা নিয়ে টেস্ট ম্যাচের আগের দিন বেশি কথা বলতে চাই না। আমি চাই প্রত্যেক খেলোয়াড় খেলায় মনোযোগ রাখুক।’
সাকিব ঢাকা টেস্ট খেলে বিদায় নিতে পারলে ভালো লাগতো বলে উল্লেখ করেন শান্ত। তবে ঢাকা টেস্টে না পারলেও সাকিবকে বিদায়ী শুভেচ্ছ জানানোর ইচ্ছা এখনো প্রবল টাইগার অধিনায়কের। শান্তর অনুভব, একটা বড় ও স্মরণীয় বিদায় পাওয়ার যোগ্য সাকিব।
শান্ত বলেন, ‘উনি যদি এখান থেকে শেষ করতে পারতো, খুবই ভালো হতো। আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনুভব করি এবং আমাদের প্রতিটি খেলোয়াড়ের অনুভবও এটা। সাকিব ভাইয়ের ফেয়ারওয়েলটা তোলা থাকল।’
বর্তমান প্রেক্ষাপটে শান্তর চিন্তায় ঢাকা টেস্ট। এই ম্যাচ নিয়ে শান্ত বলেন, ‘আমি যেটা একটু আগে বললাম, আগামীকাল একটা টেস্ট ম্যাচ শুরু হবে। মনোযোগ পরে ওই জায়গায় আনা হয়েছে; কীভাবে আমরা টেস্ট ম্যাচটা জিততে পারি।’
আপনার মতামত লিখুন :