ম্যাচের আগে কোচ-খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্ব। এর প্রভাব খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে কতটা ফেলবে তা নিয়ে সংশয় ছিল। তার ওপর প্রতিপক্ষ ছিল শক্তিধর ভারত। তবে আশার কথা সাবিনা-রুপনারা ম্যাচে কোনও প্রভাবই পড়তে দেননি।
সেমিফাইনালে যেতে হলে এক পয়েন্ট হলেই যেখানে যথেষ্ঠ ছিল, সেখানে বাংলাদেশ অভাবিতভাবে তহুরা খাতুনের জোড়া লক্ষ্যভেদে ৩-১ গোলে ভারতকে হারিয়ে গ্রুপ সেরা হয়েছে। সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে এমন জয়ে সেমিফাইনালে উঠে গেছে পিটার বাটলারের দল।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ কেমন ফল করে, সেদিকে সবার দৃষ্টি। তবে আশার কথা সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে কাঠমান্ডুর দশরথে প্রথমার্ধে বাংলাদেশ দারুণ পারফরম্যান্স করেছে। তহুরার জোড়া লক্ষ্যভেদে লাল-সবুজ দল ৩-১ গোলে এগিয়ে যায়। এর আগে শুরুর গোলটি ডিফেন্ডার আফঈদা খন্দকারের। শেষ দিকে এসে ভারতের অধিনায়ক বালা দেবী এক গোল শোধ দেন।
একাদশে দুটি পরিবর্তন এনে পিটার বাটলারের দল শুরু থেকে দারুণ খেলছে। বিল্ডআপ ফুটবলের পাশাপাশি আজ ফিনিশিংও ভালো হচ্ছে। একের পর এক আক্রমণ গড়ে প্রতিপক্ষকে রেখেছে চাপে।
ম্যাচের তিন মিনিটে শামসুন্নাহার সিনিয়রের ক্রসে শামসুন্নাহার জুনিয়র ঠিকমতো প্লেসিং করতে পারেননি। বল চলে যায় অনেক দূর দিয়ে।
দুই মিনিট পর দারুণ সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। ঋতুপর্ণার ক্রসে শামসুন্নাহার ফাঁকায় দৌড়ে গিয়ে অল্পের জন্য বলের নাগাল পাননি। তা না হলে পোস্টের কাছাকাছি থেকে প্লেসিং করতে পারলে গোল হতে পারতো।
আট মিনিটে মারিয়া মান্দার দূরপাল্লার শট পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে যায়। দুই মিনিট পর আফঈদার ব্যাকপাস রুপনা চাকমা ক্লিয়ার করতে গিয়ে সামনে থাকা মানিশার পায়ে লেগে অল্পের জন্য জাল ছুঁতে পারেনি। বল যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে।
১৮ মিনিটে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। সাবিনা খাতুনের কর্নারে গোলকিপার হাত উঁচিয়ে ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি। পেছনে বল পেয়ে ফাঁকায় ডিফেন্ডার আফঈদা খন্দকার দারুণ বুদ্ধিমত্তায় গোলকিপার ও ডিফেন্ডারদের ওপর দিয়ে দ্বিতীয় পোস্টে জাল কাঁপান।
২৬ মিনিটে বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য। ঋতুপর্ণা বাঁদিক থেকে ক্ষিপ্রতায় একজনকে ডজ দিয়ে বক্সে ঢুকে জোরালো শট নিলেও তা ক্রসবারে লেগে ফিরে আসায় ব্যবধান বাড়েনি। তিন মিনিট পর আর হতাশ হতে হয়নি। বাংলাদেশ ব্যবধান বাড়ায়। আসালাঙ্কা দেবী ঠিকমতো বল ক্লিয়ার করতে পারেননি। ঋতুপর্ণা বল পেয়ে তা ভাসিয়ে দেন পোস্টের মুখে, সেখানে তহুরা শরীর দিয়েই তা ঠেলে দেন জালে। এক ডিফেন্ডার তহুরার গায়ে সেঁটে থাকলেও কিছুই করতে পারেননি। আনন্দে মাতেন সবাই।
৩৫ মিনিটে বালা দেবীর শট রুখে দিয়ে রুপনা চাকমা বাংলাদেশকে ঠিকভাবে ম্যাচে বাঁচিয়ে রাখেন। তিন মিনিট পর মানিশার ফ্রি কিক ক্রসবারে লেগে প্রতিহত হলে ভারত গোল পায়নি।
৪৩ মিনিটে বাংলাদেশ তৃতীয় গোল পায়। বক্সের ভেতর থেকে শামসুন্নাহার সিনিয়রের পাসে বাইরে থেকে তহুরার বুলেট গতির শট জালে আশ্রয় নেয়। গোলকিপার ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পাননি।
বিরতির আগে ভারত এক গোল শোধ দেয়। সতীর্থের ক্রসে রুপনা ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি, একদম সামনে থেকে অধিনায়ক বালা দেবী হেড থেকে লক্ষ্যভেদ করেন।
ড্রেসিংরুম থেকে ঘুরে এসে ভারত কিছুটা মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে। গোল শোধের সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি। কোনও সময় নিজেদের ব্যর্থতায়, আবার গোলকিপার রুপনা দাঁড়ান প্রাচীর হয়ে।
৫৬ মিনিটে ভারত ব্যবধান কমানোর আরও একটি সুযোগ পেয়েছিল। সংগীতা বাসফোরের জোরালো শট রুপনা বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে প্রতিহত করে গোল হতে দেননি। কৃষ্ণা রানী-স্বপ্না রানীরা বদলি হয়ে মাঠে নামেন। তবে ভারত ৬২ মিনিটে আবারও সুযোগ পায়। জোতি চৌহান বক্সে ঢুকে শট নেন, তবে পয়েন্ট ব্লাঙ্ক সেভ করেন রুপনা।
এরপর জোতি সতীর্থের ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি। বাংলাদেশ ফাঁকে ফাঁকে সুযোগ তৈরি করে। ৮১ মিনিটে বদলি স্বপ্নার জোরালো শট এক হাত দিয়ে প্রতিহত করে জালে জড়াতে দেননি গোলকিপার।
শেষ দিকে ৩-১ স্কোরলাইন ধরে রেখে বাংলাদেশ সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে। ভারত হয়েছে গ্রুপ রানার্সআপ। আর বিদায় পাকিস্তানের। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ যোগ করা সময়ে গোল করে পাকিস্তানের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছিল।
আপনার মতামত লিখুন :