ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন

বিপিএলে ২ বছরে ৩০টির বেশি দুর্নীতি হয়েছে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২৪, ০৭:২০ পিএম

বিপিএলে ২ বছরে ৩০টির বেশি দুর্নীতি হয়েছে

ফাইল ছবি

বিশ্বক্রিকেটে বর্তমানে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের জয়জয়কার। ক্রিকেট খেলা হয় এমন দেশগুলোর মধ্যে খুব কম দেশই আছে যেখানে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি বা টি-টেন টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয় না। তবে এই জনপ্রিয় টুর্নামেন্টগুলোকে ঘিরে সম্প্রতি এক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সন্দেহের তালিকায় আছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগও (বিপিএল)।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) একজন সাবেক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, বেশ কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালা মানছে না। সাবেক এই কর্মকর্তা জানান, আইসিসি নির্ধারিত দুর্নীতিবিরোধী সুরক্ষা এবং নিয়ম-কানুন না মেনে এসব টুর্নামেন্টে আর্থিক অনিয়ম এবং ফিক্সিংয়ের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। যা ক্রিকেটের মতো জনপ্রিয় খেলাটির স্বচ্ছতা এবং গ্রহণযোগ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টেলিগ্রাফে’ বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে যথাযথভাবে নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না। আইসিসির সাবেক কর্মকর্তা স্টিভ রিচার্ডসন এই বিষয়ে দ্য টেলিগ্রাফের সঙ্গে কথা বলেন এবং জানান, ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা নিজেই দুর্নীতিবিরোধী নিয়ম ঠিকমতো পালন করছে না।

সেই প্রতিবেদনে ‘কীভাবে ক্রিকেট নিজেকেই নিজে খেয়েছে’- এই শিরোনামের অন্য একটি সংবাদ সংযুক্ত করা হয়। যেখানে ক্রিকেটে দুর্নীতির বিস্তার এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে সুরক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়েও সেখানে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, অন্যান্য লিগের মতোই বিপিএলও দুর্নীতিবিরোধী কাজের জন্য আইসিসিকে তালিকাভুক্ত করেনি এবং দুর্নীতি দমনে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, গত দুই বছরে বিপিএলে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ৩০টিরও বেশি, কিন্তু এ পর্যন্ত কাউকেই নিষিদ্ধ করা হয়নি। এমনকি যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তারা দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্বিঘ্নে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটে সাবেক তদন্ত সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা স্টিভ রিচার্ডসন জানান, ছোট ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো নিজেদের ইভেন্টে দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালা কার্যকর করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যখন ছোট ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইভেন্ট পরিচালনা করে, তখন ঝুঁকি থেকেই যায়। শুধু একজন দুর্নীতিবিরোধী কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করলেই কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত হয় না। অভিজ্ঞতা এবং তথ্যের অভাবের কারণে দুর্বলতা থেকে যায় এবং এর ফলে লিগের জন্য ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়।’

রিচার্ডসন আরও বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সব সময়ই দুর্নীতিবাজরা তৎপর হওয়ার চেষ্টা চালায়। তবে এর মানে এই নয় যে সব লিগেই দুর্নীতিবাজরা কাজ করছেন। অনেক লিগের আয়োজকই হয়তো ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে আসেন, কিন্তু তাঁরা বুঝতে পারেন না যে তাঁদের কাজের মাধ্যমে দুর্বলতা তৈরি হচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি এই বিষয়ে বলেন, ‘অভিযোগ জানাতে অনেক খেলোয়াড়ই ভয় পান। প্রথম কারণ, তাদের পারিশ্রমিক নাও দেওয়া হতে পারে, দ্বিতীয় কারণ তারা নিজেদের অনিরাপদ বোধ করতে পারেন। তারা তখনই জানান, যখন সরাসরি অ্যাপ্রোচ করা হয়। কিন্তু শুধু সন্দেহের ওপর খুব কমই বলেন।’

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত হওয়া জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে, এবং অনেকেই এসব টুর্নামেন্টের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য আইসিসিকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

আরবি/ এইচএম

Link copied!