‘সোয়া লাখের ভরা গ্যালারিকে একসঙ্গে চুপ করিয়ে দেওয়ার মতো শান্তি আর কিছুতে নেই’– ২০২৩ সালের ১৮ নভেম্বর আহমেদাবাদে কথাটি বলেছিলেন প্যাট কামিন্স। পরের দিন মাঠে সেই কথা অনুযায়ী পুরো স্টেডিয়ামকেই যেন নিস্তব্ধ করে দিয়েছিলেন অজিরা। রোহিত-কোহলিদের কান্নাভেজা চোখটা যেন প্রতিনিয়ত তাদের ভেতরটা তছনছ করে দিচ্ছিল।
আজ আবারও তেমনই এক দিন। আজও দুবাইয়ের গ্যালারি ভারতীয় সমর্থকে পরিপূর্ণ থাকবে। যদিও কামিন্সের অনুপস্থিতিতে নিশ্চিতভাবেই তাঁর সেই কথা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবেন স্মিথ-ম্যাক্সওয়েলরা। তাই ভারতবাসীর মনে একটা ভয়-শঙ্কা কাজ করছেই। আহমেদাবাদের ফাইনালের মতো হৃদয় ভেঙে দেবে না তো অস্ট্রেলিয়া! এই ভয়ের উল্টো পিঠে ভারতের জন্য রয়েছে প্রতিশোধের সুবর্ণ সুযোগও। মরুর দেশে আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিতে কে বাজিমাত করবে?
এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার জন্য গ্রুপ পর্বটা একেবারেই আদর্শ ছিল না। বৃষ্টির কারণে পাকিস্তানে তাদের দুটি ম্যাচ পরিত্যক্ত। তার পর তড়িঘড়ি করে ফ্লাইট ধরে দুবাইয়ে উড়ে আসতে হয়েছে সেমির জন্য। তার ওপর দলের সেরা তিন পেসার– কামিন্স, স্টার্ক, হ্যাজেলউডসহ নিয়মিত ছয়জন নেই।
কিন্তু এতকিছুর মাঝেও দলটির নাম যে অস্ট্রেলিয়া। আর তাই কোনোভাবেই হেলাফেলা করা যায় না। কারণ আইসিসি ইভেন্টে তাদের রেকর্ড অনন্য। হলুদ জার্সি গায়ে জড়ালেই অপরিচিত জনসন-ইংলিসরা দানব হয়ে ওঠেন। যেমনটা ২০২৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে করেছিলেন ট্রাভিস হেড। দু’দলের সর্বশেষ সেই ওয়ানডে ম্যাচে ভারতের ২৪০ রান তাড়া করতে নেমে পঞ্চাশের আগেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে ১৩৭ রানের নান্দনিক এক ইনিংস খেলে চোখের পলকে ভারতকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ ছিনিয়ে নিয়েছিলেন ট্রাভিস হেড।
এর আগে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও ভারতকে কাঁদিয়েছিলেন তিনি। আজও কি তিনি জ্বলে উঠবেন? নাকি অন্য কোনো নবীন হয়ে উঠবেন ট্রাভিস হেড! কিংবা অভিজ্ঞ স্টিভ স্মিথ বা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ঝলক দেখা যাবে আজ?
দুই বছর আগের সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতা এখনো মনে রেখেছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তবে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলতে চাননি তিনি। রোহিত বলেন, “অস্ট্রেলিয়া কঠিন প্রতিপক্ষ। গত তিন ম্যাচে যেভাবে আমরা খেলেছি, সেই চিন্তাভাবনা নিয়েই মাঠে নামব। এই ম্যাচেও একই মনোভাব থাকবে।”

যদিও অস্ট্রেলিয়ার সেরা একাদশের ছয়জন না থাকার পরও তাদের মনোভাব নিয়ে কোনো পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন না রোহিত, “অস্ট্রেলিয়া বহু বছর ধরে পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। তারা কঠিন লড়াই করবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সেমিফাইনালে দুটি দলেরই জয়লাভের চাপ থাকে। আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমরা নিজেদের কাজটি সঠিকভাবে ও পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে করব।”
এই ম্যাচে ভারতের জন্য একাদশ নির্বাচন কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে সেমিফাইনালের আগে। স্পিনার বরুন চক্রবর্তীকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, যেখানে তিনি ৫ উইকেট তুলে নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টকে নতুনভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করেছেন। বরুনের দারুণ পারফরম্যান্সের কারণে ভারত সামনে নতুন বিকল্পের মুখোমুখি। দুবাইয়ের মন্থর পিচে ভারত সম্ভবত চার স্পিনার নিয়ে মাঠে নামবে। এমন পরিস্থিতিতে আজও কপাল পুড়তে পারে পেসার হার্সিত রানার।

অস্ট্রেলিয়া জানে, ভারত অলআউট স্পিন আক্রমণ নিয়ে মাঠে নামবে এবং এই বিষয়টি গতকাল সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কার করেছেন অসি অধিনায়ক স্মিথ। তিনি বলেন, “ভারতের স্কোয়াডে থাকা সকল স্পিনারই ভালো। বরুন তো বটেই, অন্য সবাইও যথেষ্ট শক্তিশালী। আমরা তাদের স্পিন মোকাবিলা কীভাবে করব, বিশেষ করে মাঝের ওভারগুলোতে, সেটাই আমাদের জয়-পরাজয়ের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
আজকের এই ম্যাচের পূর্বে স্থানীয় আবহাওয়া বার্তা সূত্রে জানা গেছে, দুবাইয়ের আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে এবং গত দুই ম্যাচের মতো আজ অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে বৃষ্টির বাধা আসার সম্ভাবনা খুব কম।
আপনার মতামত লিখুন :