আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। মাঠের লড়াই শুরুর আগে শুরু হয়ে যায় তর্কের লড়াই। ক্রিকেট বোদ্ধা থেকে শুরু করে ভক্ত-সমর্থক; উত্তেজনার পারদ থাকে শীর্ষে।
এতদিন এই উত্তেজনা সীমাবদ্ধ ছিল শুধু ক্রিকেটে। এর ধারেকাছেও ছিল না ফুটবল। তবে আজ মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় মেঘালয়ের রাজধানী, শৈলশহর শিলংয়ে দুই দেশের ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেও নতুন একটা ধারা যে তৈরি হতে যাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই!
এদিন এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ার পর্বের ম্যাচে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় মুখোমুখি হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল, যে ম্যাচটিকে ঘিরে উন্মাদনার পারদ দু’দেশেই উর্ধ্বমুখী।
ফিফার আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে দুটো দলই ‘লাস্ট বেঞ্চের ছাত্র’। ২১০টি দেশের মধ্যে ভারতের বর্তমান র্যাঙ্কিং ১২৬, আর বাংলাদেশের ১৮৫। কাজেই বিশ্ব ফুটবলে নিচের সারির দুটো জাতীয় দলের ম্যাচকে ঘিরে আপাতদৃষ্টিতে তেমন কোনো হইচই হওয়ার কারণই ছিল না। কিন্তু হইচই তো হচ্ছে, তাও আবার অন্য মাত্রায়। এর কিছু কারণও রয়েছে। যার মধ্যে কিছুটা ফুটবল সংক্রান্ত, আবার কিছুটা ফুটবলের বাইরেরও।
মূলত বাংলাদেশের ফুটবলপাড়ায় সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে একটি নাম, হামজা চৌধুরী। আর তাকে ঘিরেই মূলত এত হইচই। কারণ এই ম্যাচের মধ্যে দিয়েই প্রথম বাংলাদেশের জার্সি পরে মাঠে নামছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই তারকা। আন্তর্জাতিক এই মাপের কোনো ফুটবলার এর আগে কখনো দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দলের হয়ে খেলেননি। যার জন্য এই ম্যাচের দিকে বিশ্ব ফুটবলের বিশেষ নজর থাকছে। আর হামজা চৌধুরীর যোগদানের কারণেই পুরো বাংলাদেশ দলের কাছে সমর্থকদের প্রত্যাশা এক লাফে অনেকটা বেড়েছে।
তবে শুধু হামজা চৌধুরীর কারণেই যে এই ম্যাচের উত্তেজনার পারদ শীর্ষে, ঠিক তাও নয়। এখানে রয়েছে আরেকটি কারণ। সেটি হচ্ছে, এই ম্যাচের ঠিক আগেই অবসর ভেঙে আবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তুলে নিয়েছেন ভারতের সফলতম ফুটবল অধিনায়ক ও সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক গোল স্কোরার সুনীল ছেত্রী। ৪০ পেরোনো ছেত্রী গত বুধবার (১৯ মার্চ) ওই শিলংয়ের মাঠেই মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ‘কামব্যাক’ করেছেন। যেখানে নিজে গোল করেছেন এবং দলকে ৩-০ ব্যবধানে জেতানোর পেছনেও বড় ভূমিকা রেখেছেন।
আর মূলত এ কারণেই আজকের এই ম্যাচকে দু’দেশের অনেক সমর্থকই হামজা চৌধুরী বনাম সুনীল ছেত্রীর মোকাবিলা হিসেবেই দেখছেন।
যদিও উপমহাদেশীয় ফুটবলের এ লড়াইয়ে অতীত পরিসংখ্যান ভারতেরই পক্ষে। তবে এবার ইতিহাস বদলাতে চায় নতুন করে স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশ।
এখন পর্যন্ত দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ২৮ বার। যেখানে ভারত জিতেছে ১৪ ম্যাচ এবং বাংলাদেশ জয় পেয়েছে মাত্র ৪টিতে। বাকি ১০টি হয়েছে ড্র। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ শেষবার জয় পেয়েছিল ২০০৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে। এতে বাংলাদেশ ২-১ গোলে জয়ী হয়। তবে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ কখনোই জয় পায়নি।
তবে জয়ের পরিসংখ্যান ভারতের পক্ষে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে দুই দলের লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। ২০১৯ সালে কলকাতার যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ভারতকে রুখে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখানে ৮৮তম মিনিটে আদিল খানের গোলেই ভারত ড্র বাঁচিয়েছিল। এছাড়া ২০২১ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও বাংলাদেশ ভারতকে ১-১ গোলে আটকে দিয়েছিল।
বাংলাদেশ দল এবার নতুন আশার আলো দেখছে হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তিতে। ইংলিশ ক্লাব লেস্টার সিটির এ মিডফিল্ডার সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন। তাকে ঘিরেই দল শক্তিশালী কৌশল সাজাচ্ছে। কোচ হাভিয়ের কাবরেরার অধীনে বাংলাদেশ দল উন্নতির পথে এগিয়ে চলেছে।
কোচ কাবরেরা বলেন, ‘আমরা জানি ভারত শক্তিশালী দল। কিন্তু আমরা জয়ের জন্য খেলতে যাচ্ছি। আমাদের দলে বেশ কিছু তরুণ প্রতিভা রয়েছে। যারা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।’
বাংলাদেশের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া মনে করেন, ‘এ ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ। আমরা প্রতিপক্ষকে সম্মান করি। আমরা নিজেদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত।’
এই ম্যাচে ভারতের প্রধান শক্তি অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার সুনিল ছেত্রী। তিনি বাংলাদেশকে আগেও ভুগিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে গত সাত ম্যাচে ছয়টি গোল করেছেন। এছাড়া, সান্দেশ ঝিঙ্গান রক্ষণভাগে ভারতের বড় ভরসা।
আর তাই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশ যদি রক্ষণভাগ শক্তিশালী করে ও আক্রমণে গতি বাড়ায়, তাহলে চমক দেখাতে পারে। তারা বলছেন, ভারতের বিপক্ষে জয় পেতে হলে বাংলাদেশকে নিখুঁত পরিকল্পনায় খেলতে হবে। গোলের সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না।
এই ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। লক্ষ কোটি ভক্তের প্রত্যাশা, হামজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ নতুন ইতিহাস গড়বে।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: মিতুল মারমা, তারিক কাজী, তপু বর্মণ, সাদ উদ্দিন, ঈসা ফয়সাল, শেখ মোরছালিন, জামাল ভূঁইয়া, হামজা চৌধুরী, মোহাম্মদ হৃদয়, আল আমিন ও রাকিব হোসেন।
আপনার মতামত লিখুন :