বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. আজাদ, মহেশপুর

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৫, ১২:০৮ এএম

পিঠে বড়শি গেঁথে শূন্যে ঘুরল ৭ সন্ন্যাসী

মো. আজাদ, মহেশপুর

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৫, ১২:০৮ এএম

পিঠে বড়শি গেঁথে শূন্যে ঘুরল ৭ সন্ন্যাসী

ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

বড়শিতে গাঁথা জ্যান্ত মানুষ। চড়কগাছে ঝুলিয়ে ২৫-৩০ ফুট শূন্যে ঘোরাতে ঘোরাতে সন্ন্যাসীরা ছুড়ে দিচ্ছেন বাতাসা। এভাবেই একে একে সাত সন্ন্যাসীর পিঠে বড়শী বিঁধে শূন্যে ঘুরে পালন করলেন শিবপূজারই অংশ চড়ক উৎসব। গাঁ শিউরে ওঠা এই দৃশ্য দেখলেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ।

ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের বকুলতলায় প্রতি বছরের মতো ৩ বৈশাখ বিকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে চড়ক উৎসব। মহেশপুর শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমের একটি গ্রাম ফতেপুরের বকুলতলা বাজার। হিন্দুধর্মাবলম্বীরা উৎসব আয়োজনে এই পূজা করে থাকেন। প্রতি বছর এই পূজার মূল আকর্ষণ থাকে ছয় থেকে সাতজন সন্ন্যাসীর পিঠে বড়শিবিদ্ধ হয়ে শূন্যে ঘোরা। এবার সাতজন সন্ন্যাসী বড়শি (বান) ফোঁড়ালেন।

স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ২০০ বছর ধরে চলে আসছে এই চড়কপূজা। আর এই পূজা ঘিরে বকুলতলা বাজারে তিন দিন ধরে চলছে বর্ণাঢ্য লোকজ মেলা। ফতেপুরের এই চড়ক মেলার মূল আকর্ষণ বড়শিবিদ্ধ হয়ে শূন্যে ঘোরানোর (স্থানীয় ভাষায় বলা হয় বান ফোঁড়ানো) এই দৃশ্য অবলোকনের সঙ্গে সঙ্গে মেলায় কেনাকাটা করতে সকাল থেকে হাজির হন হাজার হাজার নারী-পুরুষ। দুপুরের পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে মেলা প্রাঙ্গণে। বিকেলের মধ্যে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুরো এলাকা। এলাকাজুড়ে উৎসবের আমেজ।

পড়ন্ত বিকালে সাত সন্ন্যাসী অসীদ কর্মকার (মনা), মহাদেব হলদার, বিপ্লব কর্মকার, অধীর কুমার, বসুদেব, ভিম হালদার ও সাধন বাবু রায় ফতেপুর বাঁওড়ে স্নান করেন। এরপর সাত সন্ন্যাসী মাটির কলসে জল (পানি) ভরে মাথায় করে নিয়ে আসেন মেলা প্রাঙ্গণে চড়কগাছের গোড়ায়। প্রথমে অসীদ কর্মকারের পিঠে দুটি বড়শি বিদ্ধ করা হয়।

এ সময় স্মরণ করা হয় মহাদেব শিবঠাকুরকে। এরপর ১০-১৫ জন পুরুষ ধরাধরী করে ঝুলিয়ে দেন চড়কগাছে বাঁধা বড়শিতে। গাছের অপর প্রান্তে থাকা কপিকলের বাঁশ জোরে জোরে ঘোরাতে থাকেন ২০-৩০ জন যুবক। চড়কগাছে লটকে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু নারী তাদের এক-দেড় বছরের শিশুসন্তানকে তুলে দেন সন্ন্যাসীদের কোলে। তাকে নিয়েই শূন্যে ঘুরতে থাকেন সন্ন্যাসীরা। এ অবস্থায় ছিটিয়ে দেওয়া হয় বাতাসা। এভাবেই বড়শিতে বিঁধে চার-পাঁচ পাক শূন্যে ঘুরে নেমে আসেন সন্ন্যাসীরা।

সন্ন্যাসীরা জানান, পূর্বপুরুষদের কাছে শুনেছেন, ২০০ বছর আগে এখানে চড়কপূজা শুরু হয়। আগে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে এই পূজার আয়োজন করা হতো। সেই স্থানে সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলার কারণে এখন ফতেপুর বকুলতলার বাজারে চড়কপূজা হয়। এই পূজাকে ঘিরে বসে জমজমাট মেলা। লোকজ ঐতিহ্যের হরেক রকম পশরা সাজিয়ে দোকানিরা বেচাকেনা করেন দুই দিন ধরে। মিষ্টির দোকানিরা ১০-১২ রকমের মিষ্টি সাজিয়ে বিকিকিনি করছেন। তারা জানান, প্রতিবারের মতো এবারও মেলায় বেচাকেনা বেশ ভালোই হচ্ছে।

পূজা ও মেলা কমিটির সভাপতি শ্রী সাধন কুমার ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক সুবল কুমার জানান, চড়কপূজা মূলত শিবপূজারই অংশবিশেষ। নানা আনুষ্ঠানিকতায় তা সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ গোলাম হায়দার লান্টু জানিয়েছেন, এই উৎসব পালনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। পরিষদের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের সব সদস্য ও গ্রাম পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

Link copied!