২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলাকালে ড্রেসিংরুমে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বরখাস্ত করা হয় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহকে।
তবে তিনি শুরু থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন। এবার একই কথা বললেন তার সেসময়ের কোচিং প্যানেলে থাকা দুই সদস্য সহকারী কোচ নিক পোথাস এবং স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ।
মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে ফারুক আহমেদের নেতৃত্বাধীন বিসিবিরও মনে হয়েছিল, বিশ্বকাপের সময় নাসুমকে থাপ্পড় মেরেছিলেন হাথুরুসিংহে। যদিও লঙ্কান এই কোচ বরাবারই অভিযোগটি অস্বীকার করে এসেছেন।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। অসদাচরণ ও চাকরিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে চুক্তির মেয়াদ ফুরানোর পাঁচ মাস আগেই হাথুরুসিংহেকে ছাঁটাই করে বিসিবি। বরখাস্ত হওয়ার কয়েকদিন পর অস্ট্রেলিয়ায় পরিবারের কাছে ফিরে যান তিনি। যদিও হাথুরু আদৌ নাসুমকে থাপ্পড় মেরেছিলেন কি না, সেটার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ৫৬ বছর বয়সি এই কোচের পক্ষে–বিপক্ষেও কাউকে কথা বলতে শোনা যায়নি।
তবে এতদিন পর দুইজনকে পাশে পেয়েছেন হাথুরুসিংহে। তাঁরা বাংলাদেশের দলের সাবেক স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ ও সহকারী কোচ নিক পোথাস। বাংলাদেশ দলে দুজনই হাথুরুর সহকর্মী ছিলেন। নাসুমকে থাপ্পড় মারার ঘটনাকে দুজনের কাছেই বানোয়াট ও অতিরঞ্জিত মনে হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘কোড স্পোর্টস’কে হেরাথ ও পোথাস বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। কোড স্পোর্টসের বরাতে কাল এ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ। ৪৭ বছর বয়সি হেরাথ বলেছেন, ‘আমি সরাসরি বলতে পারি যে, এমন কিছুই ঘটেনি।
বিশ্বকাপ চলাকালীন তাঁর আশপাশে অনেক ক্যামেরা ছিল। মানুষ চাইলেই বলতে পারে যে, একটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রমাণ তো থাকতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বলছি, এ রকম কিছুই ঘটেনি। কারণ আমি সেখানে ছিলাম। চড় মারা ও (পিঠে) ধাক্কা দেওয়া সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার।’
৫১ বছর বয়সি পোথাসের ভাষ্য, ‘আমি তাঁকে (হাথুরুসিংহে) ভালোভাবেই চিনি। তিনি খুবই অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক ও পেশাদার কোচ। যদি তিনি এ রকম করতেন, তাহলে এই পর্যায়ে টিকে থাকতে পারতেন না। আমি মনে করি, যাঁরাই এমন অভিযোগ করেছেন, তাঁদের (হাথুরুর প্রতি) কিছুটা ক্ষোভ থাকতে পারে। আর যে (নাসুম) অভিযোগ করেছে, সে হয়তো ভাবেনি বিষয়টি এভাবে বিস্ফোরিত হবে।
আর এখন যা কিছু ঘটেছে, তাতে আমার মনে হয় না সে বুঝতে পেরেছে যে, সে কতটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে এবং বাংলাদেশ অধ্যায়ের পর হাথুরুর জীবন কতটা কঠিন করে তুলেছে।’ পোথাস আরও বলেন, ‘(খেলোয়াড়দের পিঠে চাপড় মারার ঘটনা) সবসময়ই ঘটে। ভাষাগত সমস্যার কারণে অনেক সময় হাতের ইশারায় যোগাযোগ করতে হয়।’
কোড স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাথুরুসিংহে নিজেও তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আবারও অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মাঠে ব্যাটসম্যানদের গ্লাভস পাঠানোর জন্য ডাগআউটে তাঁর পেছনে বসে থাকা নাসুমের পিঠে শুধু টোকা দিয়েছিলেন, ‘আমি কখনোই কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে ঝগড়া করিনি।
খেলোয়াড়দের প্রতি আবেগও দেখাইনি। হতাশা থেকে হয়তো আমি ডাস্টবিন ছুঁড়ে ফেলেছি। যেকোনো কোচের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়ে থাকে। কিন্তু যা হয়েছে, তার থেকে এটা একেবারেই আলাদা। এটা আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ওপর নিজের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার গুরুতর অভিযোগও করেছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, ‘ক্রিকেট আমার সবকিছু। কারণ এটাই আমার ক্যারিয়ার। তারা আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে উল্টো অভিযোগ এনে আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছে।’