বর্তমানে সংকটময় সময় পার করছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। মাঠে একের পর এক ব্যর্থতায়, এমনকি ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের মতো অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের বিপক্ষে জয় তুলে নিতে পারছে না টাইগাররা।
এর মধ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে উঠেছে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ। যা দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বড়সড় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
অনুমোদন ছাড়াই শতকোটি টাকার লেনদেন
জাতীয় একটি পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বোর্ড পরিচালনার অনুমোদন না নিয়েই বিসিবির স্থায়ী আমানত (এফডিআর) থেকে প্রায় ১২০ কোটি টাকা স্থানান্তর করেছেন ফারুক আহমেদ।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যেই তিনি এই বিপুল অর্থ দুইটি নির্দিষ্ট ব্যাংকে সরিয়ে নেন, যেগুলোর নামের প্রথম অক্ষর 'এম'।
সূত্রের বরাতে বলা হয়, দায়িত্ব গ্রহণের পরই বিসিবির প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার এফডিআর ছিল তার প্রধান লক্ষ্য। কোনো স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন না করে নিজের একক ক্ষমতায় ‘সমস্যাগ্রস্ত’ ব্যাংকগুলোতে অর্থ স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেন তিনি।
তিন মাসে একাধিক লেনদেন, প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত
দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বিসিবির প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার এফডিআর-এর দিকে নজর দেন ফারুক। বোর্ডের স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠনে দেরি করে নিজের নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে সমস্যাগ্রস্ত দুই ব্যাংকে বিপুল অঙ্কের অর্থ স্থানান্তর করেন তিনি।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সেপ্টেম্বরে একটি ব্যাংকে ৩৩ কোটি টাকা এবং অক্টোবরে একই ব্যাংকে আরও ১৯ কোটি টাকার এফডিআর ট্রান্সফার করা হয়। এর মধ্যে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের একটি এফডিআর ভেঙে সরিয়ে নেওয়া হয় ২৫ কোটি টাকা।
বিসিবিতে একচ্ছত্র ক্ষমতা ব্যবহারের অভিযোগ
দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম পাঁচ মাস কোনো স্থায়ী কমিটি গঠন না করেই সমস্ত কার্যক্রম নিজের অধীনে রেখেছিলেন ফারুক। এমনকি পরবর্তীতে কমিটি গঠন করলেও গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি নিজেই।
দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম পাঁচ মাসে কোনো স্থায়ী কমিটি গঠন করেননি ফারুক।
বিপিএলের নিয়ন্ত্রণেও অনিয়মের ছাপ
বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কিছু খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিক এখনও বকেয়া রয়েছে। তদুপরি, কোনো ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই রাজশাহী দলের মালিকানা দেন তার ঘনিষ্ঠ শফিকুর রহমানকে, যিনি খেলোয়াড়দের অর্থ না দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত।
বিদেশ সফর নিয়ে বিতর্ক
সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর একটি হলো ফারুক আহমেদের বিদেশ সফরের ব্যয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, দায়িত্ব নেয়ার পর মাত্র আট মাসে তিনি বিভিন্ন সরকারি ও ব্যক্তিগত সফরের খরচ বাবদ বিসিবি থেকে প্রায় ৮০ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন।
শুধু তাই নয়, সম্প্রতি জিম্বাবুয়েতে আইসিসির এক সভায় অংশগ্রহণ শেষে তিনি ব্যক্তিগত কাজে দুবাইয়ে কয়েকদিন কাটান, যার খরচও বহন করে বিসিবি।
প্রশাসনিক অস্থিরতায় ক্রীড়াঙ্গনে হতাশা
বাংলাদেশ ক্রিকেট এমনিতেই পারফরম্যান্স ও দলীয় গঠন নিয়ে সংকটে রয়েছে। এই অবস্থায় বোর্ড পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব পুরো ব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করে তুলছে। খেলোয়াড়দের মধ্যে তৈরি হয়েছে হতাশা, ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যেও প্রশ্ন উঠছে—বাংলাদেশ ক্রিকেট আদৌ কি সঠিক পথে এগোচ্ছে?
আপনার মতামত লিখুন :