দুই স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনার খেলা মানেই বাড়তি উত্তেজনা। আর ম্যাচটি যদি হয় কোপা দেল রে’র ফাইনাল, তাহলে তো ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে উত্তেজনার পারদ আরও বেড়ে যায়। সেই উত্তেজনার ম্যাচই অপেক্ষা করছে আজ।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে সেভিয়ার এস্তাদিও দে লা কার্তুহায় কোপা দেল রে’র ফাইনালে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে এই দুই স্প্যানিশ জায়ান্ট। এর আগে ২০১৩-২০১৪ মৌসুমের কোপা দেল রে’র ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। তখন কাতালানদের ২-১ গোলে হারিয়েছিল ব্লাঙ্কোসরা।
তবে এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। চলতি মৌসুমে হ্যান্সি ফ্লিকের অধীনে দারুণ ছন্দে আছে বার্সেলোনা। গত জানুয়ারিতে এই রিয়াল মাদ্রিদকে ৫-২ গোলে বিধ্বস্ত করে দলটি জিতেছিল স্প্যানিশ সুপার কোপার শিরোপা।
তা ছাড়া লা-লিগাতেও টেবিল টপার বার্সা। এদিকে, দলটি পৌঁছে গেছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে। ফলে কাতালানদের কাছে এবার দারুণ সুযোগ থাকছে ‘ট্রেবল’ জয়ের। রিয়ালের বিপক্ষে আজ দলটি জিততে পারলেই ট্রেবল জয়ের স্বপ্নটা আরও এগিয়ে আসবে দলটির জন্য।
এরই মধ্যে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে গেছে রিয়াল। তবে তাদের সামনে সুযোগ আছে লা লিগা ও কোপা দেল রে জেতার। আর এই দুই শিরোপা জিততে হলে তাদের সামনে বাধা কেবলই বার্সেলোনা। এসব কারণেই ফুটবলাঙ্গনের আকাশে-বাতাসে আজ কেবলই উত্তেজনার আঁচ।
শক্তি ও দুর্বলতা
বার্সেলোনার প্রধান শক্তি তাদের শক্তিশালী মিডফিল্ড ও উইং আক্রমণ। রাফিনিয়া ও তরুণ লামিল ইয়ামালরা চলতি মৌসুমে আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। তা ছাড়া মাঝমাঠে দখলে নিতে পেদ্রি, ডি জংরা মরিয়া চেষ্টা চালাতে সক্ষম।
তবে বার্সার সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ, দলের অন্যতম ফরোয়ার্ড রাবর্ট লেভানডভস্কির অনুপস্থিতি। এ ছাড়া এই ম্যাচে ডিফেন্ডার বালদেকেও পাচ্ছেন না হ্যান্সি ফ্লিক।
অন্যদিকে, রিয়াল মাদ্রিদের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তাদের দ্রুতগতির আক্রমণভাগ। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও এমবাপের গতি দিয়ে তারা যেকোনো মুহূর্তে ম্যাচের চিত্র বদলে দিতে পারে।
তবে মিডফিল্ডে অভিজ্ঞতার ঘাটতি এবং রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের ইনজুরি বেশ ভোগাবে রিয়াল মাদ্রিদকে।
ফ্লিক-আনচেলত্তির কৌশলের লড়াই
রিয়ালের বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচে দারুণ জয় পেয়েছে বার্সেলোনা। যেখানে মূলত কাজ করেছে হ্যান্সি ফ্লিকের কৌশল। বিশেষ করে ফ্লিকের ‘অফসাইড ট্রাপ’ কৌশল ম্যাচগুলোতে খুব দারুণভাবে কাজ করেছে।
এ ছাড়াও ‘লাইন ব্রেকিং’ কৌশল অবলম্বন করতে পারেন ফ্লিক। যা এমবাপ্পে-ভিনিদের গতিকে রুখতে এই কৌশল কার্যকরী হয়েছে হতে পারে।
অন্যদিকে, কার্লো আনচেলত্তি তার অভিজ্ঞতা দিতে আবারও প্রমাণ করতে চাইবেন বড় ম্যাচে তার ‘ম্যাজিক’। এ ক্ষেত্রে তার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হতে পারেন কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। এই দু’জনের গতি কাজে লাগিয়ে স্পেস এক্সপ্লয়েট করা কার্লোর সবচেয়ে বড় অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত।
তা ছাড়া বড় ম্যাচে রক্ষণভাগ আগলে প্রতি আক্রমণ আনচেলত্তির আরও একটি বড় অস্ত্র। তবে দলের রক্ষণভাগের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের ইনজুরির কারণে এই কৌশল ব্যবহার করতে আনচেলত্তি কতটা সফল হবেন, তা ভাবার বিষয়।
চোটে জর্জরিত দুই শিবির
ইনজুরির কারণে রিয়ালের দুই ডিফেন্ডার ডানি কার্ভাহাল ও এডার মিলিতাও এই মৌসুমে আর মাঠে নামতে পারবেন না, তা সবারই জানা। এবার সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডেভিড আলাবা ও এদুয়ার্দো কামভিঙ্গার ইনজুরি। সম্প্রতি গেতাফের বিপক্ষে লা লিগার ম্যাচে চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন আলাবা।
পরবর্তীকালে তার বদলি হিসেবে নামা কামাভিঙ্গাও কুঁচকির চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন। এ তারকাকে বার্সার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এই ফাইনালে পাবেন না কার্লো আনচেলত্তি।
এদিকে, স্বস্তিতে নেই বার্সেলোনা শিবিরও। সম্প্রতি সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে ম্যাচে চোট পান দলের ফরোয়ার্ড লাইনের ভরসা রবার্ট লেভানডভস্কি। যা কাতালানদের ভোগাতে পারে।
তবে এ ক্ষেত্রে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন তরুণ ফেরান তোরেস। লেভার অনুপস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই মূল স্ট্রাইকারের দায়িত্ব পেতে পারেন তিনি।
সম্ভাব্য একাদশ
বার্সেলোনা: সেজনি, কুন্দ্রে, পাউ কুবার্সি, ইনিগো মার্তিনেজ, মার্টিন, পেড্রি, ডি জং, লামিন ইয়ামাল, অলমো, রাফিনিয়া, ফেরান তোরেস।
রিয়াল মাদ্রিদ: থিবো কর্তোয়া, গার্সিয়া, রুডিগার, এসেনসিও, বেলিংহাম, ভালভার্দে, ভ্যাসকেজ, লুকা মদ্রিচ, রদ্রিগো, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, এমবাপ্পে।
আপনার মতামত লিখুন :