গত ৫ আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দেশের প্রতিটি অঙ্গনে শুরু হয় সংস্কার কার্যক্রম। যে ধারাবাহিকতায় ক্রীড়াঙ্গনে হয় ব্যাপক রদবদল। বিশেষত দেশের ক্রিকেটাঙ্গনের প্রাণকেন্দ্র বিসিবিতে পরিবর্তন আসে সভাপতি থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারণী একাধিক পর্যায়ে। নাজমুল হাসান পাপনের পদত্যাগের পর সভাপতির দায়িত্ব নেন ফারুক আহমেদ। এছাড়া পরিচালকের দায়িত্বে আসেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের এমন রদবদলের পর ক্রীড়াভক্ত থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকলেই ভেবেছিলেন, পূর্বের বোর্ডে যে অর্ন্তঃকলহ ছিল তা হয়তো এবার আর থাকবে না। তবে দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক মাস পরেই সে ধারণা মুখ থুবড়ে পড়েছে। কিন্তু এবার বিসিবিতে যে বিষয় নিয়ে অন্তঃকলহের তৈরি হয়েছে তা হচ্ছে ‘দুর্ব্যবহার’।
জানা গেছে, বিপিএলের উদ্বোধনী দিনে গত ৩০ আগস্ট প্রেসিডেন্ট বক্সে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার প্রেস সচিব মাহফুজ আলম বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও পরে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মাহফুজ আলম। তবে এ নিয়ে চলে তুমুল আলোচনা।
কিন্তু আসলে কী ঘটেছিল সেদিন? এ বিষয়ে জানতে গতকাল (রোববার) ফারুক আহমেদের কাছে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেদিন ওপেনিং সিরিমনি (বিপিএলের) ছিল, উপদেষ্টা মহোদয় আসতে পারেননি, টিকিটের চাপ ছিল। সব মিলে দিনটা আমার জন্য ভালো ছিল না। আপনারা জানেন প্রেসিডেন্ট বক্সেও একটা ঘটনা ঘটেছিল। এ নিয়ে আমি মন্তব্য করিনি, এখনো করছি না। তবে ঘটেছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘তখন কার সঙ্গে কী বলেছি, হয়তো আমার মনেও নেই। তবে একটা প্রতিষ্ঠানে মতের অমিল হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। এখানে দোষের কিছু দেখি না। এগুলো যখন আগে প্রেসে চলে আসে, তখন দোষের। এগুলো আগে নিজেরা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।’
এই প্রেসিডেন্ট বক্সের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম তোলেন আরেক ‘দুর্ব্যবহার’ এর অভিযোগ। তবে এবার সেটি খোদ বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধেই।
সূত্রমতে জানা গেছে, কোনো একটি বিষয়ে ফাহিমকে বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘ইউ এক্টিং লাইক ফানি? বিসিবি প্রেসিডেন্ট হতে চান? আসেন বানায় দেই।’
এ নিয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান ফাহিম। রোববার এক বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফাহিম বলেন, ‘বিসিবি সভাপতির সেই মন্তব্য আমি পুনরায় বলতে চাই না। তবে সেটি আমাকে খুবই আশাহত করেছে। আমি জানি না কেন তিনি এতগুলো মানুষের সামনে এমন মন্তব্য করলেন। পরিচালকদের যে জায়গা দেওয়া দরকার, সেটি কতটা বিসিবি প্রেসিডেন্ট দিতে চান, তা স্পষ্ট নয়। আমার কথা কিছুটা ভিন্ন হতে পারতো। কারণ, আমরা দুজনই নতুন এসেছি। সেখানে আমাদের মধ্যে একসাথে কাজ করার যে ব্যাপারটা, সেখানে এ ধরনের মন্তব্য সমীচীন নয়।’
বিসিবির বিদায়ী সভাপতি পাপনের বোর্ডের মতোই ফারুকের বোর্ডেও পরিচালকদেরও তেমন একটা গুরুত্ব নেই-এমন আভাস দিয়ে ফাহিম বলেন, ‘আমার অনেক সময় মনে হয় বোর্ডের বাইরে থাকতে পারলেই মনে হয় ভালো হবে। কারণ, আমি বোর্ডের বাইরে থেকে যে ভূমিকা রাখতে পারি বা যে আলাপ-আলোচনা করতে পারি, সেটি এখানে থেকে করা সম্ভব নয়। যদি বোর্ডে থাকি তাহলে আমাকে কাজ করতে দিতে হবে। কাজ না করতে পারলে তার চেয়ে বাইরে থাকাই ভালো।’
এদিকে, বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিমের এই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন সাবেক পরিচালক ও ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। তিনি বলেন, ‘তাদের এমন কর্মকান্ড আমাদের জন্য লজ্জাজনক। তারা দুজনই সাবেক ক্রিকেটার। ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য এসে তাদের নিজেদের মাঝে কেন মনোমালিন্য হবে। তারা যখন দায়িত্ব নেয় তখন তো অনেক আশ্বাস দিয়েছে, যা অনেকাংশেই পূরণ হচ্ছে না। এত অল্প পরিচালক দিয়ে বোর্ড চালানো ফারুক ভাইয়ের জন্য আসলেই কঠিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঝামেলা হতেই পারে, তবে তা প্রকাশ্যে কেন আসবে। ফাহিম ভাইয়ের মত এতো বিচক্ষণ মানুষ কেন এটা প্রকাশ্যে আনবেন। কোনো বিষয়ে যদি তার কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে তিনি একান্তে ফারুক ভাইয়ের সাথে আলোচনা করতে পারতেন। এখন তো বিষয়টা পুরো বাংলাদেশ জানে, যেটা কাম্য নয়।’
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিসিবির প্রধান দুই কর্মকর্তার মধ্যে এই অন্তঃকলহ দেশের ক্রিকেটে একটা বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপনার মতামত লিখুন :