ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

‘বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে সাকিব ও হাথুরুসিংহের বড় অবদান রয়েছে’

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪, ০৪:২৩ পিএম

‘বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে সাকিব ও হাথুরুসিংহের বড় অবদান রয়েছে’

নাজমুল হোসেন শান্ত

পাকিস্তানের মাটিতে ইতিহাস গড়ে দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজ জিতে ট্রফি নিয়ে বাড়ি ফিরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ক্রিকেট ইতিহাসে পাওয়া এই বিশাল সাফল্যের পেছনে সাকিব আল হাসান ও হাথুরুসিংহের ভালো অবদান রয়েছে বলে জানিয়েছেন টাইগার দলপতি নাজমুল হোসেন শান্ত। যার জন্য দেশে ফেরার পর এই দুই ব্যক্তির ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেও ভুলেননি তিনি।

এছাড়া চাকুরি হারানোর শঙ্কায় থাকা কোচ হাথুরুসিংহের সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা খুবই ভালো বলেও জানিয়েছেন শান্ত। আর দেশে না ফেরা সাকিবের মামলা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা হলে শান্তরা এ বিষয়ে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন।

এছাড়া আরো যেসব প্রসঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক-

* প্রশ্ন: ৬ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ৩টিতেই জয় এবং এত বড় অর্জন। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয় দেশের ক্রিকেটে এবং  আপনার ক্যারিয়ারে সেরা অর্জন কিনা?

শান্ত: আলহামদুলিল্লাহ। আমার কাছে সেরা অর্জন মনে হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে। সব থেকে বড় অর্জন এটি। এটা শুধু আমার ব্যক্তিগত কথা না। টিমে যারা আছে সবাই এটা বিশ্বাস করে। তাই খুবই ভালো লাগছে।

* প্রশ্ন: ড্রেসিংরুম থেকে বাস, টিম হোটেল সব জায়গাতে উদযাপনটা কেমন হয়েছে?

শান্ত: এই রকম জয় তো সব সময় উদযাপনে একটু স্পেশাল থাকে। ড্রেসিংরুম সবাই অনেক সেলিব্রেট করেছে। সবাই হাসিখুশি ছিল। টিম হোটেল যাওয়ার পরও আমরা সেলিব্রেট করেছি। পুরো জার্নিটাই আসলে অনেক আনন্দের ছিল। পুরো সময়টা অনেক এনজয় করেছি।

* প্রশ্ন: ট্রফি নিয়ে রাতের বেলায় যে শুয়েছিলেন, এই উদযাপনে কার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন?

শান্ত: হাসি...। জয়টা আসলে অনেক স্পেশাল ছিল। আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশের সব থেকে বড় অর্জন। মুহুর্তটা ভালোভাবে উপভোগ করার জন্যই আসলে মনে হলো যে ট্রফিটা নিয়েই ঘুমাই! তো এটাই আর কি। আর কাউকে দেখে না জিনিসটা, হ্যাঁ লিওনেল মেসিকে দিয়ে শুরু হয়েছিল। এই আর কি।

* প্রশ্ন: ৬ উইকেট পতনের পর যে ফেরা, আপনারা কি আগে থেকে ভাবছিলেন ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন?

শান্ত: সত্যি কথা বলতে কি, ওই সময় ড্রেসিংরুমে সবাই নার্ভাস ছিল। খুব খারাপ একটা পজিশনে ছিলাম। ওই সময় যদি আমি বলি আমরা অনেক বিশ্বাস করছিলাম আমরা অনেক ভালো করব- এটা বললে ভুল হবে। ওই সময়টায় সবাই নার্ভাস ছিলাম। তবে মিরাজ এবং লিটন অতীতেও এই রকম জুটি গড়েছে। এতটুকু বিশ্বাস ওই সময়টায় ছিল। যখন ওরা এক-দেড় ঘণ্টা ব্যাটিং করে ফেলে আস্তে আস্তে তখন কিন্তু ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা পরিবর্তন হতে থাকে। ওই বিশ্বাসের জায়গাটা আস্তে আস্তে ওপরের দিকে গিয়েছে এবং পরবর্তীতে দেখা গেছে যে দুজন খুবই দলের জন্য দারুণ একটা জুটি গড়ল এবং আমরা ভালো একটা পজিশনে গেলাম।

* প্রশ্ন: টেস্ট ক্রিকেট ভিন্ন ফরম্যাটের খেলা। সেশন বাই সেশন ধরে খেলতে হয়। ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতে ভালো দিনে অনেকেই জিততে পারে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে অনেক পরিকল্পনা করতে হয়। পিছিয়ে থেকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। আপনাদেরকে নিজেদের এখন অনেক পরিণত মনে হচ্ছে কিনা?

শান্ত: এই সিরিজটা খুবই ভালো হয়েছে। আমরা যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি যাওয়ার আগে এবং ওখানে যাওয়ার পরেও। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের মানসিকতা, স্কিল নিয়ে চিন্তা-ভাবনা সব মিলিয়ে খুবই ভালো একটা প্রস্তুতি ছিল। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের আগ্রহ ছিল যে আমরা ওখানে খেলাটা যেন জিততে পারি। আমি যেটা বলব যে, আমরা পাকিস্তানে তিন দিন আগে গিয়েছিলাম। এটি আমাদের একটু সুবিধা দিয়েছে। টেস্ট ক্রিকেট খেলার জন্য প্রত্যেকটা সেশন ভালো খেলা প্রয়োজন। যদিও একটা-দুইটা সেশন এদিক-ওদিক হয়, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকে। কিন্তু এটা খুব একটা সহজ বিষয় না। খেলোয়াড়রা অনেক কষ্ট করেছে। কোচিং স্টাফ যারা ছিলেন অনেক কষ্ট করেছেন। সঠিক পরিকল্পনা আমাদেরকে দিয়েছেন। সবাই টিমের জন্য খেলার চেষ্টা করেছেন। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছেন।

* প্রশ্ন: সাকিব আল হাসানের মামলা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা হলে দলের পক্ষ থেকে কিছু বলা হবে কিনা?

শান্ত: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা হয়েছে (সিরিজ জয়ের পর)। উনি দেখা করতে চেয়েছেন। এটি আমি আগেও বলেছি। সাকিব ভাইয়ের বিষয়টা একটা ভিন্ন বিষয়। তবে প্রত্যেকটি খেলোয়াড় সাকিব ভাইয়ের পাশে আছেন এবং যে বিষয়টি আমরা সবাই জানি যে, সাকিব ভাই খেলার জন্য কতটা ত্যাগী, খেলার জন্য কতটা পাগল, টিমের জন্য সব সময় চিন্তা-ভাবনা করে থাকেন। যখন দেখা হবে (প্রধান উপদেষ্টা) এটা নিয়ে কথা উঠলে (কথা বলব), প্রত্যেকটি খেলোয়াড় সাকিব ভাইয়ের পাশে আছে।

* প্রশ্ন: পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐসিহাসিক সিরিজ জয় সামনে ভারতের বিপক্ষে কতটা অনুপ্রেরণা দেবে?

শান্ত: এই রকম সিরিজ জিতলে তো আত্মবিশ্বাস প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের মধ্যে থাকবে এবং টিমেরও আত্মবিশ্বাসের লেভেল উপরের দিকে থাকবে। তবে সিরিজ অবশ্যই কঠিন একটা সিরিজ। এটার জন্য নতুন করে আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে, প্রস্তুতি নিতে হবে। এখন যে টিমের অবস্থা আছে, আমরা নিজেদের সেরাটা খেলাটা যেন খেলতে পারি এবং ওখানেও ভালো করতে পারি।

* প্রশ্ন: টেস্ট ম্যাচে পাকিস্তানকে প্রথমবারের মতো হারাল বাংলাদেশ। এখন বাকি ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এই দুটি দল নিয়ে কি পরিকল্পনা থাকবে আপনার?

শান্ত: একটু আগে আমি যেটা বললাম যে, প্রত্যেকটা ম্যাচই যখন আমরা খেলি, খেলোয়াড়দের মধ্যে ওই বিশ্বাসটা আছে যে আমরা জেতার জন্য খেলছি। আমরা যেন জিততে পারি, আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে সব সময় একটা জিনিস থাকে যে আমাদের সবার দায়িত্ব পালনের প্রয়োজন হয়। এবার আমরা এই জিনিসটা করতে পেরেছি। আমরা যদি আমাদের সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারি, যেকোনো দলকে আমরা হারাতে পারব। খুব বেশি আউটকাম নিয়ে চিন্তা না করে যদি আমরা আমাদের প্রসেসটা নিয়ে চিন্তা করি, আমার বিশ্বাস যে আমরা সামনের দুইটা সিরিজেও ভালো করবে।

* প্রশ্ন: হাথুরুসিংহের সঙ্গে ড্রেসিংরুমের পরিবেশ এবং কোচের সঙ্গে আপনার বোঝাপড়া কেমন? এই কোচের অধীনে টিম কতটা উন্নতি করছে?

শান্ত: খুবই ভালো সম্পর্ক (কোচের সঙ্গে)। আমার মনে হয়, খেলোয়াড়রা খুবই আন্তরিক কোচের সঙ্গে এবং খুবই সার্পোটিভ ছিল। প্রত্যেকটা খেলোয়াড়কে সঠিক পরিকল্পনা দিয়েছেন এবং ড্রেসিংরুমের পরিবেশ খুবই দারুণ ছিল। যে খেলোয়াড় পারফর্ম করে নাই বা পারফর্ম করেছেন, একজন আরেকজনের পাশে ছিল। প্রত্যেক কোচই খেলোয়াড়ের পাশে ছিল ভালো সময় ও খারাপ সময়। যেটা বললাম যে, ড্রেসিংরুমে কোচের ভূমিকাটা দারুণ ছিল বলে আমার কাছে মনে হয়।

* প্রশ্ন: শরিফুলের পেছনে থেকে আপনি খুবই জোরে চিৎকার করে উদযাপন করেছিলেন। কত ডেসিমেল ছিল আওয়াজটা, মনে আছে?

শান্ত: হাসি...। না, আমি যেটা বললাম যে, এই ধরনের সিরিজ জয়, অবশ্যই উদযাপনটা ভেতর থেকেই আসে। এটা আসলে কাউকে উদ্দেশ্য করে ইচ্ছাকৃত ভাবে করা হয় না।

আরবি/এফআই

Link copied!