ঢাকা রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ছুটির দিনে সিলেটে

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৪:১৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

ইটের শহর, ব্যস্ত অলিগলি আর ক্লান্ত জনপথ, সময়ের তাগিতে ছুটে চলা এসব দিনমজুরির জীবনে থেকে কার না পালাতে ইচ্ছে করে? কিন্তু শিকলে বাঁধা এই যাপিত জীবন কখনো কী আমাদের ছেড়ে বাঁচে? কখনোই না! তবে গৎবাঁধা এই জীবন অতটাও নিষ্ঠুর না, আপনি চাইলেই জীবনকে উপভোগ করতে পারেন নিজের মতো। এ শহরের অবসাদ, ক্লান্ত আর ঘুম ঘুম ভাব কাটাতে ছুটির দিন কাটিয়ে আসতে পারেন  প্রকৃতি কন্যার শহর সিলেটে। যার প্রাকৃতিক শোভা ও মেঘলা আকাশ হৃদয়ে এক অমল অনুভূতি সৃষ্টি করে, যেন এক গভীর প্রবন্ধের মতো, আমাদের জীবনের ক্লান্তি ও অস্থিরতা থেকে মুক্তির পথ দেখায়। তাই সিলেটের প্রাকৃতিক স্নিগ্ধতা মনের গহীনে পৌঁছে দিতে কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানাচ্ছেন আরাফান  হোসাইন রাফি

রাতারগুল

রাতারগুল সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি মিঠাপানির জলাবন। পৃথিবীতে যতগুলো মিঠাপানির জলাবন আছে, ‘রাতারগুল জলাবন’ তার মধ্যে অন্যতম। চিরসবুজ এই বন অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে এক বিশেষ পছন্দের নাম। অনেকেই এই স্থানকে বাংলার অ্যামাজন বলেও অভিহিত করে থাকে। মুহূর্তে মুহূর্তে এখানকার প্রকৃতি তার নিজস্ব ছন্দ বদল করে। কখনো মেঘে ঢাকা অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য আবার কখনো মাথার ওপর সূর্য দেখা দিলে ঈষৎ ছায়াজলে এক অপূর্ব রূপ ধারণ করে রাতারগুল। কাচের মতো মসৃণ নিথর জলে গাছের ডালপালার প্রতিবিম্ব এক অদ্ভুত দৃশ্যের অবতরণা করে। তখন হঠাৎ কোনো বন্যপ্রাণী অজগর, কাঠবিড়ালি, বানর, বনবিড়াল, শিয়াল পাতার ছায়ার জলে উঁকি দেয়। তাই জালিবেত, কদম, হিজল, মূর্তাসহ নানা জাতের গাছে সমৃদ্ধ এই বনে প্রায় সারা বছরই দেখা যায় পর্যটকদের ভিড়।

যেভাবে যাবেন: রাতারগুল যাওয়ার জন্য ঢাকার গাবতলী, ফকিরাপুল এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটগামী যেকোনো বাসে করে সিলেট যেতে হবে। সেখান থেকে রাতারগুলের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। আপনি ১৫০০-২৫০০ টাকায় ভাড়া করা যেকোনো সিএনজি বা অটোরিকশায় রাতারগুল যেতে পারবেন।

রাংপানি


প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই পর্যটনকেন্দ্রটি সিলেট শহর থেকে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দূরে জৈন্তাপুর উপজেলার মোকামপুঞ্জি এলাকায় অবস্থিত। জৈন্তাপুর থেকে তামাবিল সড়ক হয়ে তিন কিলোমিটার সামনে আগালেই শ্রীপুরের অবস্থান। এখানে যাওয়ার পথে চোখে পড়বে একপাশে চা-বাগান আরেক পাশে শ্রীপুর লেক। লেকের উল্টোদিক ধরে ছোট রাস্তায় খানিক সামনে গেলেই  দেখা মিলবে জৈন্তা-খাসিয়া পাহাড়ের কোল বেয়ে বয়ে চলা ‘রাংপানি’ নদী। নদীর পাশেই রয়েছে খাসিয়াদের গ্রাম ‘মোকামপুঞ্জি’। প্রাচীনকাল থেকে এই নদী আর পাহাড় ঘিরে তাদের বসবাস। পুঞ্জিতে গেলেই জানা যাবে খাসিয়াদের ইতিহাস-ঐতিহ্য। এই দর্শনীয় স্থানটি অনেকের কাছে শ্রীপুর পাথর কোয়ারি নামেও পরিচিত। নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় একটি শুটিং স্পট রাংপানি। যেখানে শাবনাজ-নাঈম জুটির চাঁদনী মুভির জনপ্রিয় গান ‘ও আমার জান, তোর বাঁশি যেন জাদু জানে রে’সহ অনেক জনপ্রিয় সিনেমার চিত্র ধারণ করা হয়। এখানে গেলে আপনার মনে হতে পারে যেন সময়ের গতি ধীর, তবুও প্রতিটি মুহূর্তে জীবনের এক নতুন পাঠ লেখা হয়।

যেভাবে যাবেন: রাংপানি যেতে চাইলে দেশের যেকোনো স্থান থেকে সিলেট শহরে এসে সেখান থেকে
সিলেট-তামাবিল সড়কে বাস, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় জৈন্তাপুরের শ্রীপুরে রাংপানি নদীতে যাওয়া যাবে।
সারা দিনের জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া নেবে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা।

বিছনাকান্দি


সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত এই স্থানটি বাংলাদেশের জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে বেশ পরিচিত। এখানকার পাহাড়, ঝরনা ও পাথরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশবিদেশ থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক ছুটে আসেন। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের খাসিয়া পাহাড়ের অনেকগুলো ধাপ দু’পাশ থেকে এসে বিছনাকান্দিতে মিলিত হয়ছে। একই সঙ্গে মেঘালয় পাহাড়ে থাকা সুউচ্চ ঝরনা বিছনাকান্দির প্রকৃতিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। তবে বিছনাকান্দিতে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ জলধারা। জীবনের ক্লান্তি মেটাতে অত্যন্ত নির্মল এই জলধারায় গা ভেজাতে আপনিও যেতে পারেন প্রকৃতির এই অপরূপ লীলাভূমিতে।

যেভাবে যাবেন: বিছনাকান্দি যেতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে  বাস, ট্রেন বা প্লেনে করে সিলেট যেতে হবে। তারপর সিলেটের আম্বরখানার সিএনজি স্টেশন থেকে জনপ্রতি ১৪০-১৬০ টাকায় লোকাল সিএনজিতে চড়ে হাদারপার নামক জায়গায় যেতে হবে। সারা দিনের জন্য সিএনজি রিজার্ভ নিলে সাধারণত ১০০০-১৫০০ ভাড়া লাগতে পারে। সেখান থেকে নৌকা করে বিছনাকান্দির মেইন পয়েন্টে যেতে পারবেন।