মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৫, ০২:২২ পিএম

ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় ট্রাম্প

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৫, ০২:২২ পিএম

ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় ট্রাম্প

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মালিকানা গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন, যা দেশটির জ্বালানি অবকাঠামোকে রাশিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।  

ওভাল অফিসে শেষবারের মতো উত্তপ্ত আলোচনার পর, এবার ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে প্রথমবার ফোনালাপ হয়। এতে ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকান মালিকানাই হবে ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য সেরা সুরক্ষা।’

আমেরিকার ‘সহায়তা’ নাকি কৌশলী বিনিয়োগ?

ট্রাম্পের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎ ও ইউটিলিটি ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, এই সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য আশীর্বাদ নাকি সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি- এ নিয়ে বিতর্ক উঠতে পারে।  

হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘ফোনালাপটি অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল।’

এতে জেলেনস্কি আরও প্যাটরিওট (Patriot) ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চেয়েছেন, যা রুশ ক্ষেপণাস্ত্র থেকে ইউক্রেনের অবকাঠামো রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ট্রাম্প এ বিষয়ে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের প্রতিশ্রুতি দেন।  

বর্তমানে শুধুমাত্র জার্মানি একটি প্যাটরিওট (Patriot) ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।  

পুতিনের ক্ষোভ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ক্ষুব্ধ করতে পারে। পুতিনের সাম্প্রতিক দাবির মধ্যে ছিল কিয়েভের জন্য সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য প্রদান বন্ধ করা। কিন্তু ট্রাম্প বরং নতুন সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।  

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, ‘ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য শেয়ারিং অব্যাহত থাকবে।’

পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে একটি রাশিয়া বনাম আমেরিকা আইস হকি ম্যাচ আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তবে হোয়াইট হাউস এটিকে গুরুত্ব দেয়নি। লেভিট বলেন, ‘আমরা এখন হকি ম্যাচের চেয়ে শান্তি আলোচনায় বেশি আগ্রহী।’

বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি?

ইউক্রেনের চারটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে মোট ১৫টি রিয়্যাক্টর রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাপোরিঝঝিয়া প্ল্যান্ট, যা ২০২২ সাল থেকে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।  

রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০২২ সালের তুলনায় এখন মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুসারে, আমেরিকান কোম্পানিগুলো এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পুনর্গঠন ও পরিচালনা করতে পারে, যা একদিকে আমেরিকাকে আর্থিকভাবে লাভবান করবে, অন্যদিকে ইউক্রেনের পরমাণু অবকাঠামোর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। 

তবে এটি একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ হতে পারে, কারণ ইউক্রেন ৩০ বছর আগে তার পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করেছিল এবং নতুন করে পারমাণবিক ক্ষমতা অর্জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, ইউক্রেন মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই পরমাণু বোমা তৈরির ক্ষমতা অর্জন করতে পারে, যদি তারা বিদ্যমান প্লুটোনিয়াম ব্যবহার করে।

শান্তি আলোচনার ইঙ্গিত, কিন্তু যুদ্ধ অব্যাহত

১৯ মার্চ, জেলেনস্কি ট্রাম্পের সঙ্গে কথোপকথনকে খুবই গঠনমূলক ও ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন।  

তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন শান্তি চায়, তাই আমরা শর্তহীন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছি।’

তবে বাস্তবতা ভিন্ন। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা সত্ত্বেও রাশিয়া বুধবার ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর কুপিয়ানস্কে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে, যার ফলে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।

উল্টো, ইউক্রেনও রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে একটি তেল ডিপোতে হামলা চালিয়েছে বলে মস্কো দাবি করেছে।  

যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ও বন্দি বিনিময়

যদিও পুতিন বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধ করতে পারেন, তবে জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন যে রাশিয়া এই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।

এদিকে, রাশিয়া ও ইউক্রেন ১৭৫ জন বন্দির বিনিময় করেছে, যেখানে ২২ জন আহত ইউক্রেনীয় সৈন্যকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এটি এক ধরনের শুভেচ্ছা বিনিময় হিসেবেই দেখা হচ্ছে।  

শান্তি আলোচনার পরবর্তী ধাপ

আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কূটনীতিকদের মধ্যে বৈঠক হবে, যেখানে শান্তি আলোচনার পরবর্তী ধাপ নিয়ে আলোচনা হবে।  

এছাড়া, রাশিয়ার একটি আলোচক দলও আগামী রবিবার জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারে।

২০ মার্চ লন্ডনে ৩০টিরও বেশি দেশের সামরিক প্রধানরা বৈঠকে বসবেন, যেখানে যুদ্ধবিরতি হলে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে আলোচনা হবে।

তবে বাস্তবতা হলো, শান্তি আলোচনার উদ্যোগের মধ্যেই যুদ্ধ চলছে এবং রাশিয়া নতুন করে ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

বিশ্লেষণ

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ কেবলমাত্র ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্য নয়, বরং এটি একটি কৌশলী পদক্ষেপ যা আমেরিকান কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ পাওয়া মানে ইউক্রেনের জ্বালানি নিরাপত্তা আমেরিকার হাতে চলে যাওয়া, যা রাশিয়ার জন্যও এক বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।  

এই সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে নাকি নতুন সংকট তৈরি করবে, সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে এটি নিশ্চিত যে যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই যুদ্ধ তীব্রতর হচ্ছে।

সূত্র: টেলিগ্রাফ

আরবি/এসএস

Link copied!