২০২৫ সালে বৈশ্বিক উত্তেজনা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের মতামতও আরও বেশি তীব্র হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক মানচিত্রে উঠে এসেছে এমনই এক চাঞ্চল্যকর চিত্র-বিশ্বের সবচেয়ে ‘অপছন্দের’ দেশগুলোর তালিকা।
নিউজউইকে প্রকাশিত মানচিত্রটি ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ-এর গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যেখানে আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন এবং জনমত জরিপের মিশ্রণে তৈরি হয়েছে এই তালিকা।
এই র্যাঙ্কিং শুধু রাষ্ট্রের নীতির প্রতিফলন নয়- একটি দেশের কার্যকলাপ, মূল্যবোধ এবং সংঘাত মোকাবিলার ধরন কীভাবে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে, সেটিও এতে স্পষ্ট।
শীর্ষ ১০ অপছন্দের দেশের তালিকা
চীন
তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন। একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, শ্রমশোষণ (সুয়েটশপ), ব্যাপক সেন্সরশিপ, পরিবেশ দূষণে ভূমিকা এবং উইঘুর মুসলিমদের প্রতি দমননীতি- সব মিলিয়ে বৈশ্বিকভাবে চীনের ওপর অবিশ্বাস বেড়েই চলেছে। হংকং, তাইওয়ান ও ম্যাকাও-কে স্বাধীনতা না দেওয়ার অবস্থান আরও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র
দ্বিতীয় স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। অনেক আমেরিকানের জন্য এটি বিস্ময়কর হলেও, বিশ্বজুড়ে আমেরিকার আগ্রাসী কূটনীতি, বিদেশি ইস্যুতে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ, অস্ত্র সংস্কৃতি, ফাস্ট ফুডকেন্দ্রিক জীবনধারা এবং "আত্মগর্বিত" আচরণ—এসব মিলিয়ে দেশটির বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে।
রাশিয়া
ইউক্রেন যুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের কারণে রাশিয়া তৃতীয় স্থানে। আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি ও নাগরিকদের প্রতি কঠোর নিয়ন্ত্রণ দেশটিকে বৈশ্বিক সমালোচনার মুখে ফেলেছে।
উত্তর কোরিয়া
একনায়কতান্ত্রিক শাসন, চরম শাস্তি এবং সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, সামরিকীকৃত রাষ্ট্র হওয়ায় উত্তর কোরিয়া বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ও অস্বস্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে।
ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব, সামরিক অভিযান ও বিতর্কিত নীতির কারণে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমালোচিত। বিভিন্ন দেশের প্রতিবাদ ও মানবাধিকার সংগঠনের চাপ এতে যোগ হয়েছে।
পাকিস্তান
দেশটির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা, ধর্মীয় চরমপন্থা এবং ভারত ও আফগানিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক একে তালিকার ষষ্ঠ স্থানে এনেছে।
ইরান
পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক, নাগরিক অধিকার হরণ এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রক্সি যুদ্ধের কারণে ইরানের প্রতি বৈশ্বিক মনোভাব নেতিবাচক রয়ে গেছে।
ইরাক
দীর্ঘদিন ধরে চলা সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে, ইরাক এখনো বিশ্বের চোখে একটি অস্থির ও সমস্যাসঙ্কুল দেশ হিসেবেই পরিচিত।
সিরিয়া
নৃশংস গৃহযুদ্ধ, সরকারের দমন-পীড়ন এবং মানবিক সংকটের ফলে সিরিয়ার বৈশ্বিক ভাবমূর্তি একেবারে নিচে নেমে এসেছে।
ভারত
তালিকার শেষ স্থানে থাকা ভারতকেও পেছনে ফেলতে পারেনি বৈশ্বিক নেতিবাচকতা।
দেশটিতে বাড়তে থাকা ধর্মীয় উত্তেজনা, সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ, ইন্টারনেট সেন্সরশিপ এবং সীমান্ত দ্বন্দ্ব- এসব কারণে ভারতের ভাবমূর্তি অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলাও এ অবস্থানে ভূমিকা রেখেছে।
কেন এই তালিকাটি গুরুত্বপূর্ণ?
এই তালিকাটি শুধুই সরকার বা রাষ্ট্রের নীতির মূল্যায়ন নয়। এটি দেখায়, একেকটি দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি কীভাবে তাদের আচরণ, মূল্যবোধ এবং সংঘাত মোকাবিলার পদ্ধতিতে গঠিত হয়।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ’র মতে, একটি দেশের প্রতি ঘৃণা সাধারণত একক কারণে নয়। সামরিক পদক্ষেপ থেকে শুরু করে পপ কালচার বা বিদেশ ভ্রমণে সেই দেশের পর্যটকদের আচরণ পর্যন্ত- সবই এর পেছনে ভূমিকা রাখে।
বিশ্ব যত বেশি সংযুক্ত হচ্ছে, তত বেশি বাড়ছে পারস্পরিক মূল্যায়নও। ফলে, আজকের এই ‘অপছন্দের তালিকা’ শুধুই সংখ্যা নয়- এটি একটি আয়না, যা প্রতিফলিত করে বৈশ্বিক চিন্তা ও অনুভূতির বাস্তব চিত্র।