মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত নতুন শুল্ক নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেবে না- এই আশ্বাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
আইএমএফ বলেছে, বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তা এখন এতটাই বেড়েছে যে তা ‘চার্টের বাইরেই চলে গেছে’, অর্থাৎ পরিস্থিতি অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি অনিশ্চিত।
তবুও সংস্থাটি বিশ্ব অর্থনীতির সাম্প্রতিক পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ‘আমাদের নতুন প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে কিছুটা হ্রাস দেখা যাবে, তবে সেটি মন্দার পর্যায়ে পৌঁছাবে না।’
বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব: স্টক মার্কেট ও বিনিয়োগে ধাক্কা
এই মন্তব্য এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসনের ‘লিবারেশন ডে’ ঘোষণার আওতায় নতুন করে আমদানি পণ্যে শুল্ক আরোপ করা হয়। এর পরপরই বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে বড় ধস নামে।
বিশ্বের অনেক শেয়ারবাজার এখনো সেই ধাক্কা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের প্রধান শেয়ারবাজার সূচক এখনো এক মাস আগের তুলনায় ৪.৬% কমে আছে।
এই অনিশ্চয়তার কারণে কোম্পানিগুলো খরচ ও বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে, যার ফলে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা আরও জোরালো হয়েছে। কিছু দেশ এর প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, ফলে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও ঘনীভূত হয়েছে।
অন্যান্য সংস্থার সতর্কতা
জাতিসংঘের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছে, ট্রাম্পের শুল্কের কারণে চলতি বছরে বৈশ্বিক বাণিজ্য হ্রাস পাবে।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বলেছে, এই শুল্ক নীতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আর্থিক স্থিতিশীলতার ঝুঁকি “গুরুতরভাবে” বেড়েছে।
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) জানিয়েছে, বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে তারা তাদের মূল সুদের হার কমিয়ে দিয়েছে।
তবে এর বিপরীতে, আইএমএফ কিছুটা আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে। সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, ‘এটি একটি বিজ্ঞ প্রতিক্রিয়ার ডাক। একটি আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও সহনশীল বৈশ্বিক অর্থনীতি এখনো সম্ভব- আমাদের কেবল সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সব দেশকে নিজেদের ঘর গোছানোর জন্য দ্বিগুণ চেষ্টা করতে হবে।’
বিশেষভাবে তিনি ইউরোপকে ‘সেবাক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে বিধিনিষেধ কমাতে’ এবং তাদের একক বাজার আরও গভীর করতে আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, চীনকে তার সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো জোরদার করতে হবে, যাতে নাগরিকদের সঞ্চয়ের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমে, এবং যুক্তরাষ্ট্রকে তার সরকারি ঋণ হ্রাসের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :