অনলাইন বিজ্ঞাপন খাতে অবৈধভাবে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অভিযোগে গুগলের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের দায়ের করা মামলায় বিচারক রায় দিয়েছেন, গুগল সত্যিই একাধিপত্য বিস্তার করেছে।
ভার্জিনিয়ার একটি ফেডারেল আদালতের এই ঐতিহাসিক রায় প্রযুক্তি জগতের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রায়ে গুগলের ৩১ বিলিয়ন দলার বিজ্ঞাপন ব্যবসার অংশটি একচেটিয়া বলে ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে বিজ্ঞাপনদাতাদের সঙ্গে ওয়েবসাইট প্রকাশকদের সংযুক্ত করা হয়। বিচারক লিওনি ব্রিনকেমা বলেন, গুগল তাদের বিজ্ঞাপন সার্ভার ও বিজ্ঞাপন এক্সচেঞ্জ একত্র করে একটি প্রভাবশালী অবস্থান তৈরি করেছে, যা অন্যদের প্রতিযোগিতায় বাধা দেয়।
গুগলের বিরুদ্ধে এটি দ্বিতীয় বড় রায়
এর আগে অনলাইন সার্চ এবং অ্যাপ স্টোরে একচেটিয়া আচরণের অভিযোগে গুগলের বিরুদ্ধে দুটি রায় এসেছিল। তিনটি রায় একত্রে গুগলের ব্যবসায়িক কৌশল নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
বিচারকের পর্যবেক্ষণ
বিচারক বলেন, ‘গুগলের কার্যকলাপ প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতিযোগিতার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে এবং প্রকাশক গ্রাহকদের জন্যও ক্ষতিকর হয়েছে। এর ফলে মুক্ত ওয়েবে তথ্য ভোগকারী সাধারণ ব্যবহারকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত।’
গুগলের প্রতিক্রিয়া: আংশিক আপিলের ঘোষণা
গুগলের নিয়ন্ত্রক বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট লি-অ্যান মুলহল্যান্ড এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা মামলার একটি অংশে জয়ী হয়েছি এবং অন্য অংশে আপিল করব। বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য আমাদের টুল এবং আমাদের অর্জনকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় কোনো বাধা সৃষ্টি করে না বলে আদালত স্বীকার করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বক্তব্য এখনো আসেনি
রায়ের পরে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার মন্ত্রণালয় এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে মামলার সময় তারা দাবি করেছিল, গুগল দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞাপন প্রযুক্তির বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে প্রতিযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পরিণতি
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতের এই রায় গুগলের বিজ্ঞাপন ব্যবসার একটি অংশকে আলাদা করতে বাধ্য করতে পারে। যদিও মামলার সব অভিযোগে সরকার জয়ী না হওয়ায় গুগলকে সম্পূর্ণ ব্যবসা ভেঙে দিতে বলা হতে পারে না।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক উইলিয়াম কোভাসিচ বলেন, ‘রায় যত বেশি বিস্তৃত এবং ইচ্ছাকৃততার প্রমাণ যত বেশি, সাজাও তত বড় হতে পারে।’
সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া
টেক ওভারসাইট প্রজেক্টের নির্বাহী পরিচালক সাচা হাওয়ার্থ বলেন, ‘গুগল বছরের পর বছর বিজ্ঞাপন বাজারে একচেটিয়া ক্ষমতা চালিয়ে মিডিয়া শিল্পকে ধ্বংস করেছে এবং অনলাইন কেনাকাটার প্রতিটি ধাপে মধ্যস্বত্বভোগী কর বসিয়েছে।’
সেনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেন, ‘এই রায় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি বড় জয়।’
আইন বিশেষজ্ঞ কোভাসিচ বলেন, ‘এই রায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্যান্য নিয়ন্ত্রকদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে, যারা গুগলসহ অন্যান্য প্রযুক্তি জায়ান্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইছে।’