ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় অন্তত ৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে খান ইউনিস এলাকায় একটি ঘরে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ১১ জনও রয়েছেন। একইসঙ্গে, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও বিমান হামলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল), ভোরে ঘটে যাওয়া এ হামলায় গাজা শহরের পশ্চিম অংশে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া একটি পরিবারের সাত সদস্য একযোগে নিহত হন। এ ছাড়াও, নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে একদল সাধারণ মানুষের ওপর চালানো বিমান হামলায় দুই শিশু কন্যাসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে গাজা শহরের আল-তুফাহ পাড়ায় অবস্থিত আল-দুরা শিশু হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে গোলাবর্ষণ করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে হাসপাতালের সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সাহায্য সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর কমিশনার-জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি বলেন, ‘গাজা এখন মরিয়া মানুষের ভূমিতে পরিণত হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষ- যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
গাজার প্রবেশদ্বারে ইউএনআরডব্লিউএ-র প্রায় তিন হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে রয়েছে, যার ফলে ভেতরে খাদ্য ও ওষুধ দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফিলিপ লাজারিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ক্ষুধা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। মানবিক সহায়তাকে এখন রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদনকারী ফ্রানচেস্কা আলবানিজি বলেন, ‘মানবিক সহায়তা বন্ধ রাখা একটি যুদ্ধাপরাধ।’
তিনি জানান, এটি ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত জীবন-যাপনের শর্তকে আরও খারাপ করে তুলছে।
হামাস বলেছে, ২ মার্চ থেকে শুরু হওয়া অবরোধ ও প্রতিদিনের হামলার ফলে গাজা একটি নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটের কথা তুলে ধরে সংগঠনটি এটিকে ‘ইসরায়েলি নেতৃত্বের পূর্বপরিকল্পিত অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করে।
হামাস আরও জানায়, বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকার ওপর হামলা, পাশাপাশি অবরোধ জারি রেখে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক, নৈতিক ও মানবিক ব্যর্থতার নিদর্শন। তারা জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে- ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যেন অবরোধ তুলে নেওয়া হয় ও মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :