সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ০২:০৮ পিএম

কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের কারণ কি?

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ০২:০৮ পিএম

কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের কারণ কি?

হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ছবি: সংগৃহীত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কয়েক দশক ধরে চলমান উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে কাশ্মীর। এই অঞ্চলের ওপর দুই দেশের দাবির পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণ। কাশ্মীর শুধু একটি ভৌগোলিক এলাকা নয়, এটি দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতিসত্তার প্রশ্নেও রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভাজনের সময়, রাজ্যগুলোকে ভারত অথবা পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। জম্মু ও কাশ্মীর ছিল একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য, যার শাসক ছিলেন হিন্দু মহারাজা হরি সিং।

তিনি শুরুতে স্বাধীন থাকতে চাইলেও, পরে পাকিস্তান-সমর্থিত উপজাতীয় আক্রমণের মুখে পড়ে ভারতের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারতভুক্ত হন। এর জেরে ১৯৪৭-৪৮ সালে প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়, এবং জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতি হয়।

এই যুদ্ধবিরতির পর কাশ্মীরের একাংশ পাকিস্তানের দখলে যায়, যাকে তারা ‘আজাদ কাশ্মীর’ এবং ‘গিলগিট-বালতিস্তান’ নামে পরিচালনা করে। বাকি অংশ ভারত পরিচালিত ‘জম্মু ও কাশ্মীর’ রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল।

গলার শিরা না বিভ্রমের ছায়া? কাশ্মীর নিয়ে ফের মন্তব্য পাকিস্তানের সেনার -  EVM NEWS

মূল দ্বন্দ্ব

দুই দেশই পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে। ভারত কাশ্মীরকে তার সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন হিসেবে দেখে, আর পাকিস্তান এটিকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার হিসেবে বিবেচনা করে।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি

২০১৯ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেয়। এর মাধ্যমে রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়: জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ। পাকিস্তান এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করে এবং আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক প্রচার চালায়।

চলমান বাস্তবতা

কাশ্মীরের পরিস্থিতি এখনো উত্তেজনাপূর্ণ। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর প্রায়ই গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে, এবং অঞ্চলটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, সুরক্ষা বাহিনীর উপস্থিতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানালেও, উভয় দেশ তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে।

ভারতশাসিত কাশ্মীরের নয়নাভিরাম পাহাড়ি শহর পাহেলগামে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঘটে গেল গত ২৫ বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার ঘটনা। সন্দেহভাজন সশস্ত্র বিদ্রোহীরা পর্যটকে পূর্ণ এলাকায় গুলি চালিয়ে কমপক্ষে ২৬ জনকে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালের নাগরিক বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার এই পর্যটনকেন্দ্রটিতে তখন হাজার হাজার পর্যটক অবস্থান করছিলেন, যারা গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাতে সেখানে গিয়েছিলেন। এমন সময়ে এই রক্তক্ষয়ী হামলা কেবল কাশ্মীর নয়, গোটা উপমহাদেশেই আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে।

হামলার পরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী। শুরু হয় তল্লাশি অভিযান। এখনো হামলাকারীরা শনাক্ত বা আটক হয়নি। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

সন্ত্রাসী হামলায় নিহত আদিল হুসাইন শাহের জানাজার নামাজ পড়ানো হচ্ছে। ২৩ এপ্রিল দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার হাপতনার গ্রামে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
সন্ত্রাসী হামলায় নিহত আদিল হুসাইন শাহের জানাজা নামাজ পড়ানো হয় ২৩ এপ্রিল

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে ভারতে ফিরে আসেন এবং বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে উচ্চপর্যায়ের জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠকে কীভাবে এই হামলার জবাব দেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে এমন হামলা ঠেকানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়।

এ হামলা যখন ঘটেছে তখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারতে সরকারি সফরে অবস্থান করছেন। কূটনৈতিকভাবে ঘটনাটির প্রতিক্রিয়া খুবই স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে।

এ ঘটনায় ভারতের কূটনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ এনেছে ভারত এবং একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে- যেমন পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত, সীমান্ত বন্ধ, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল এবং কূটনীতিকদের বহিষ্কার।

অপরদিকে, পাকিস্তান সরকার এই হামলাকে ভারতের ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’ বলে অভিহিত করেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, ‘ভারত নিজেরাই এই হামলার নাটক সাজিয়ে দোষ পাকিস্তানের ঘাড়ে চাপাতে চায়।’  

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মহলের নজরে। তবে বেশির ভাগ দেশ দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন এবং জাতিসংঘ বিভিন্ন সময়ে উভয় পক্ষকে সংলাপ ও সহনশীলতার আহ্বান জানিয়েছে।

বিশেষ করে ২০১৯ সালে ভারতের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর চীন ও পাকিস্তান একত্রে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি উত্থাপন করে। যদিও নিরাপত্তা পরিষদ এটিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করেছে, তবুও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

কাশ্মীরি জনগণের মতামত

কাশ্মীরি জনগণের মতামত একরকম নয়- এটি একটি বহুমাত্রিক চিত্র।

অনেক কাশ্মীরি ভারতের সঙ্গে থেকে উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা চায়, কেউ কেউ স্বাধীনতা বা স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে, আবার কিছু গোষ্ঠী পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত হতে চায়।

কাশ্মীরি বুদ্ধিজীবী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের মাঝে ভারত সরকারের ওপর আস্থা ও অসন্তোষ—দুই ধরনের অনুভূতিই বিদ্যমান। তবে রাজনৈতিক অধিকার, আত্মপরিচয় ও নিরাপত্তার প্রশ্নে অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগ অনেকের মাঝেই দেখা যায়।

কাশ্মীরের জনগণের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করল ভারত সরকার | Socialist Party of  Bangladesh (Marxist)

মানবাধিকার পরিস্থিতি

কাশ্মীর ইস্যুতে মানবাধিকার পরিস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল দিক। ভারত-শাসিত কাশ্মীরে দীর্ঘদিন ধরে সেনা মোতায়েন, অনির্দিষ্টকালের কারফিউ, ইন্টারনেট বন্ধ, এবং গ্রেপ্তার অভিযান নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বিশেষ করে ২০১৯ সালের পর ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা, রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দি করা, এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাগুলো বিশ্বমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে।

পাকশাসিত কাশ্মীরেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সীমাবদ্ধতা, বাকস্বাধীনতার অভাব ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে, যদিও আন্তর্জাতিক মনোযোগ অপেক্ষাকৃত কম।

কাশ্মীরের সংকট শুধু দুটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়- এটি একটি মানবিক ও রাজনৈতিক সংকট, যেখানে লাখ লাখ মানুষের জীবনের প্রশ্ন জড়িত। শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং কাশ্মীরি জনগণের মতামতকে গুরুত্ব না দিলে, এই সংঘাত ভবিষ্যতেও অশান্তির উৎস হয়ে থাকতে পারে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!