ইসরায়েলের জন্য নিজেরা হুমকি হবে না বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সিরিয়া। যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া এক চিঠিতে এ প্রতিজ্ঞার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) মার্কিন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ও চিঠি সম্পর্কে অবগত একজনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তারা বলেছেন, গত ১৪ এপ্রিল চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার চিঠির উত্তর পাঠিয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
চিঠির অনুলিপি অনুসারে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের শর্তাবলির একটি তালিকার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জমা দিয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, তারা বেশির ভাগ দাবি পূরণ করেছে। তবে অন্য দাবির জন্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে ‘পারস্পরিক সমঝোতা’ প্রয়োজন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেছেন, সিরিয়া পাঁচটি দাবি সম্পূর্ণরূপে পূরণ করেছে। তবে বাকিগুলো ‘অস্পষ্টই’ রয়ে গেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো চিঠিতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যে, সিরিয়া ‘ইসরায়েলের’ জন্য হুমকি হয়ে উঠবে না।
সিরিয়াকে আটটি শর্ত দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যার মধ্যে রয়েছে অবশিষ্ট রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ ধ্বংস করা এবং বিদেশিদের সরকারি উচ্চপদে না বসানো।
যদিও জানুয়ারিতে মানবিক সহায়তার জন্য নিষেধাজ্ঞা ছয় মাস শিথিল করেছিল ওয়াশিংটন, তবে এর প্রভাব সীমিত ছিল। সমস্ত শর্ত পূরণের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র দুই বছরের জন্য স্থগিতাদেশ বাড়ানো অথবা আরও বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
গত ১৮ মার্চ ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শিবানীর কাছে শর্তগুলো পৌঁছে দেন মার্কিন কর্মকর্তা নাতাশা ফ্রান্সেশি।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া প্রথম ভাষণে শিবানী জোর দিয়ে বলেছিলেন, সিরিয়া বেশ কয়েকটি অনুরোধের ওপর কাজ করছে, বিশেষ করে সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ ও নিখোঁজ আমেরিকানদের অনুসন্ধানের বিষয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রকে লেখা চার পৃষ্ঠার সিরিয়ান চিঠিতে নিখোঁজ আমেরিকান সাংবাদিক অস্টিন টাইসকে খুঁজে বের করতে ও রাসায়নিক নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী অস্ত্র পর্যবেক্ষণকারীদের সঙ্গে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও এসব কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি অফিস স্থাপনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে সিরিয়া।
এর আগে, সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটরের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে গোপনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন সাবেক ব্রিটিশ কূটনীতিক ক্রেইগ মারে।
তার দাবি, আগে আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি নামে পরিচিত আল-শারা যুক্তরাজ্যকে এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
২০২৬ সালের শেষ নাগাদ সিরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে দখলদার রাষ্ট্রটিকে স্বীকৃতি দেবে এবং রাষ্ট্রদূত বিনিময় করবে।
মারে আরও বলেন, ‘হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) গোষ্ঠীর নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির এ পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে বড় অঙ্কের আর্থিক সহায়তা আনা এবং সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা।’
‘আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর সিরিয়া থেকে প্রত্যাহার এ চুক্তির অংশ কি না। আশ্চর্যের বিষয় হলো, কোনো পক্ষই বিষয়টি উত্থাপন করেনি।’
আপনার মতামত লিখুন :