জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ঘোষণা করেছে যে, গাজা অঞ্চলে তাদের খাদ্য মজুত সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে গেছে।
ডব্লিউএফপি গাজা উপত্যকায় অবস্থিত হট মিল রান্নাঘরগুলোতে তাদের সর্বশেষ খাদ্য বিতরণ করেছে। এই রান্নাঘরগুলো কয়েক দিনের মধ্যেই পুরোপুরি খাদ্যশূন্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে শুক্রবার (২৫ এপ্রিল)। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই হট মিল রান্নাঘরগুলোই ছিল গাজার মানুষের জন্য একমাত্র ধারাবাহিক খাদ্য সহায়তার উৎস।
যদিও এই সহায়তা প্রতিদিনের মোট খাদ্য চাহিদার মাত্র ২৫ শতাংশ এবং জনসংখ্যার অর্ধেকের কাছে পৌঁছাতে পারছিল, তবুও তা ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ জীবনরক্ষাকারী সেবা।
ডব্লিউএফপি গাজায় স্বল্পমূল্যে রুটি বিতরণে বেকারিগুলোকে সহায়তা করে আসছিল। তবে ৩১ মার্চ তারিখে গমের আটা ও রান্নার জ্বালানির ঘাটতির কারণে ডব্লিউএফপি-সমর্থিত ২৫টি বেকারি বন্ধ হয়ে যায়। একই সপ্তাহে খাদ্য প্যাকেট বিতরণ কর্মসূচিও বন্ধ হয়ে যায়, যা পরিবারগুলোকে দুই সপ্তাহের খাদ্য রেশন দিত।
ডব্লিউএফপি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিরাপদ পানির ঘাটতি ও রান্নার জ্বালানির অভাব নিয়ে। ফলে মানুষ বাধ্য হচ্ছে রান্নার জন্য পুড়িয়ে ফেলার মতো জিনিসপত্র খুঁজে আনতে।
সাত সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কোনো মানবিক বা বাণিজ্যিক সরবরাহ গাজায় প্রবেশ করতে পারেনি, কারণ সব প্রধান সীমান্ত পয়েন্ট বন্ধ রয়েছে। এটি গাজা উপত্যকার ইতিহাসে দীর্ঘতম সীমান্ত বন্ধ থাকার রেকর্ড, যা ইতোমধ্যে দুর্বল বাজার ও খাদ্য ব্যবস্থাকে আরও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। যুদ্ধবিরতির সময়ের তুলনায় খাদ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ১৪০০ শতাংশ পর্যন্ত।
নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের অভাব গুরুতর পুষ্টিহীনতার শঙ্কা তৈরি করেছে, বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মা এবং প্রবীণদের জন্য।
ডব্লিউএফপি ও খাদ্য নিরাপত্তা অংশীদারদের মাধ্যমে গাজায় প্রবেশের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১১৬,০০০ টন খাদ্য সহায়তা, যা এক মিলিয়ন মানুষকে চার মাস পর্যন্ত খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট।
গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি আবারও চরম সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। মানুষ বাঁচার উপায় হারিয়ে ফেলছে, এবং যুদ্ধবিরতির সময়কালের সামান্য অগ্রগতি ভেঙে পড়েছে। যদি দ্রুত সীমান্ত খুলে সহায়তা ও বাণিজ্যের প্রবেশাধিকার না দেওয়া হয়, তবে ডব্লিউএফপির জরুরি সহায়তাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ডব্লিউএফপি সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা বেসামরিক জনগণের প্রয়োজনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়, অবিলম্বে গাজায় সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুসারে তাদের দায়িত্ব পালন করে।