সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৫, ০৭:১১ পিএম

‘ও কাশ্মীরি, সবকিছু ওদের কারণেই হয়েছে’

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৫, ০৭:১১ পিএম

‘ও কাশ্মীরি, সবকিছু ওদের কারণেই হয়েছে’

শ্রীনগরে বিক্ষোভ চলাকালীন পর্যটকদের হত্যার নিন্দা জানাতে কাশ্মীরি পুরুষরা মোমবাতি ও প্ল্যাকার্ড ধরে আছেন। ছবি : সংগৃহীত

ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের জলন্ধরের সরু ও লোকজনে ঠাসা গলিপথ ধরে হাঁটছিলেন আসিফ দার (নামের প্রথম অংশ পরিবর্তিত)। হঠাৎই তার মনে হলো সব চোখ যেন তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সে তাকানোটা বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না।

আসিফ বলেন, ‘আমার মনে হলো ভিড়ের মধ্যে থাকা প্রত্যেকের চোখে যেন প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে’। আসিফ ও তার এক বন্ধু একটি এটিএম বুথের সামনে দাঁড়ানোর পর দুই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি তাদের কাছে এসে পরিচয় জানতে চান। তারা ভয় পেয়ে সেখান থেকে দৌড়ে পালান।

ঘটনাটি ২২ এপ্রিলের। ওই দিনই (গত মঙ্গলবার) বিকেলে কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হন। আহত হন বেশ কয়েকজন।

পরদিন ২৩ এপ্রিল সকালে দুধ কেনার জন্য আবারও বাড়ি থেকে বের হন আসিফ। তিনি বলেন, ‘তিনজন আমাকে দেখে ইসলামবিদ্বেষী কথাবার্তা ও গালিগালাজ করতে শুরু করলেন। তাদের একজন চিৎকার করে বললেন, “ও কাশ্মীরি, সবকিছু ওদের কারণেই হয়েছে।”’

আসিফ বলেন, ‘কে না কে হামলা চালিয়েছে, আর সে জন্য আমাদের মূল্য চুকাতে হচ্ছে।’

কাশ্মীরের ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ে হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। আর এর মধ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত কাশ্মীরিরা বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা কট্টর ডানপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলোর হয়রানি ও হুমকি-ধমকির শিকার হচ্ছেন। এমনকি সহপাঠীদের হয়রানিরও শিকার হচ্ছেন তারা।

উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব থেকে শুরু করে উত্তর প্রদেশ—দেশজুড়ে বিভিন্ন বাড়ির মালিকেরা কাশ্মীরি ভাড়াটিয়াদের বাড়ি ছেড়ে দিতে বাধ্য করছেন। দোকানিরা কাশ্মীরের মানুষদের সঙ্গে লেনদেন করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। বাড়িতে ফেরার জন্য চেষ্টারত বেশ কয়েকজন কাশ্মীরি শিক্ষার্থীকে বিমানবন্দরেই ঘুমাতে হচ্ছে।

পেহেলগামে হামলার পর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কাশ্মীরিরা অন্যদের ক্ষুব্ধ আচরণের শিকার হচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কাশ্মীরি আল–জাজিরাকে বলেছেন, ভারতের অন্তত সাতটি শহরে তারা নিজেরাই নিজেদের ঘরবন্দি করে রেখেছেন। এমনকি অনলাইনে অর্ডার বা ক্যাব বুকিং দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন; যেন কারও সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ না হয়।

জলন্ধরের একটি মেডিকেল ইনস্টিটিউটের অ্যানেসথেসিয়া ও অপারেশন থিয়েটার টেকনোলজির দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র আসিফ। উচ্চশিক্ষার জন্য এই প্রথম বাবা-মাকে ছেড়ে কাশ্মীর থেকে বের হয়েছেন তিনি। টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আল–জাজিরাকে আসিফ বলেন, ‘কাশ্মীরে কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। আমি আমার ভবিষ্যত গড়ার জন্য অনেক পড়াশোনা করতে চাই। আমি ভালো করতে পারলে নিজের পরিবারকে সহায়তা করতে পারব।’

তবে বাস্তবতা আসিফের জন্য ভীষণ কঠিন হয়ে উঠেছে। পরীক্ষার সময় এগিয়ে আসছে। অথচ তিনি আছেন উদ্বেগ ও হতাশার মধ্যে। বলেন, ‘এই কয়েক মাসে যা শিখেছি, সব ভুলে গেছি। সারাক্ষণ একটা অনিশ্চয়তা কাজ করছে। ক্লাসে অনুপস্থিত থাকব, নাকি বাড়ি ফিরব, বুঝতে পারছি না। আমার মাথা কাজ করছে না। যেদিকেই তাকাই, শুধু অবিশ্বাসের ছায়া দেখতে পাই। আমরা যেন অভিশপ্তও। কারণ, আমাদের মুখাবয়বই বলে দেয় আমাদের জাতিগত পরিচয়।’

কাশ্মীরভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও শিক্ষাবিদ শেখ শওকত বলেন, ‘বর্তমান ভারতে জেনোফোবিয়ার (বিদেশি ও অপরিচিতদের নিয়ে ভীতি) প্রচারণা খুবই তীব্র, যা কয়েক বছর ধরে বাড়ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুসলিমরাই এর শিকার। কাশ্মীরিরা দ্বিগুণ বোঝা বয়ে বেড়ান। তা হলো তাঁরা কাশ্মীরি, আবার মুসলিম। তাই তাঁরা সব সময় সহজ নিশানার শিকার।’

হামলার পরপরই একাধিক বেঁচে যাওয়া পর্যটকের বক্তব্য প্রকাশ হতে থাকে। এর মধ্য দিয়ে জানা যায়, হত্যাকারীরা ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে পর্যটকদের আলাদা করেছিলেন।

পেহেলগামে হামলার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। তবে এর কিছু সময় পর  ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী দায় স্বীকার করেছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়। তবে গত শুক্রবার গোষ্ঠীটি ওই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। এজন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থােকে দায়ী করেছে।

Link copied!